হিন্দুত্বকে পাশে সরিয়ে উন্নয়নকে অনেক আগেই প্রচারের পুঁজি করেছেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। আজ বিজেপি আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণাও করল, এ বারের ভোটে রামমন্দির তাদের প্রচারের বিষয় নয়। পাশাপাশি মোদীর সেনাপতি অরুণ জেটলি আজ স্পষ্ট করে দিলেন গুজরাত দাঙ্গার জন্য মোদীর ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই উঠছে না।
শেষ বাজারে বিজেপি নেতৃত্ব দ্বিমুখী কৌশল নিতে শুরু করেছেন। এক দিকে, কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা যখন মেরুকরণ উস্কে দিচ্ছে, সেই সময় বিজেপি চেষ্টা করছে তাদের উন্নয়ন নিয়ে বিতর্কে ফিরিয়ে আনতে। দুই, মোদী সম্পর্কে বিরোধীরা যে সব অভিযোগ তুলছে, সেগুলি জনসমক্ষে শুধরে দিতে চায় বিজেপি। সে কাজে তাদের সাহায্য করছে সঙ্ঘ নেতৃত্বও।
সম্প্রতি কোনও ভুল হলে সংখ্যালঘুদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার কথা বলেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ। তার পরেই সঙ্ঘের কোপে পড়েন তিনি। সঙ্ঘের আশঙ্কা ছিল, এর পরেই বিরোধীরা গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে সরব হবেন। হয়েছেও তাই। রাহুল গাঁধী সাফ জানিয়েছেন, গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে আদালত মোদীকে আদৌ ক্লিনচিট দেয়নি।
ফলে, এখন ভোটের আগে শেষ প্রহরে বিজেপি রামমন্দির-গুজরাত দাঙ্গার সঙ্গে মোদীর দূরত্ব বাড়াতে ফের উদ্যোগী হয়েছে। বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় অরুণ জেটলি জানিয়েছেন, মোদীর বিরুদ্ধে গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে মিথ্যা প্রচার করেই তাঁর ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানানো হচ্ছে। যাতে ক্ষমা চাইলেই সেটি মোদীর ভুল স্বীকার বলে প্রচার করা যায়। কিন্তু মোদী এই বিষয়ে যদি কোনও ভুল করে থাকেন, তা হলে ক্ষমা চাইবেন কেন, বরং আদালত তাঁকে শাস্তি দেবে। শুধুমাত্র মিথ্যা প্রচারকে স্বীকৃতি দিতে মোদীর ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন নেই। গুজরাতে সংখ্যালঘুরাও মোদীর উন্নয়নের সুফল পেয়েছেন। তাঁরাও এ বারে বিজেপিকে ভোট দেবেন।
সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁকে নিয়ে লেখা বইতেও মোদী জানিয়েছিলেন, গুজরাত দাঙ্গার ঘটনায় তিনি ‘দুঃখিত’। কিন্তু তাঁর কোনও অপরাধবোধ নেই। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তিনি সর্বশক্তি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ভোটের আগে মেরুকরণের রাজনীতি ভেস্তে দিতে এ বার মোদীর পাশে দাঁড়িয়েছে দলও। সম্প্রতি দিল্লিতে ভোটের আগে বিজেপির শেষ কর্মসমিতির বৈঠকে রামমন্দির নিয়ে টুঁ শব্দটি করা হয়নি। মোদী নিজেও হিন্দুত্বের ধারেকাছে না ঘেঁষে শুধুই উন্নয়নের কথা বলছেন। আজ একটি বেসরকারি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে কংগ্রেস সরকারের ব্যর্থতার কথা ও নিজের উন্নয়নের মডেলের কথাই বলেছেন তিনি।
আবার এ দিনই রাজ্যসভায় বিরোধী দলের উপনেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ দলের সদর দফতরের মঞ্চ থেকে জানিয়ে দিয়েছেন, “এ বারের ভোটে উন্নয়ন ও কংগ্রেসের অপশাসনই আমাদের হাতিয়ার। রামমন্দির নির্বাচনের কোনও ইস্যুই নয়।”
গোবলয়ের তৃণমূল স্তরে বিজেপির কিছু নেতা এখনও রামমন্দির নিয়ে সরব। মোদী ঘনিষ্ঠ নেতা অমিত শাহ উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব পেয়ে অযোধ্যায় বিতর্কিত কাঠামো দেখতে যান। আজও উমা ভারতী বলেন, ‘আমার জীবদ্দশায় অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ দেখতে চাই।’ বিশ্ব হিন্দু পরিষদও অযোধ্যায় প্রচার করছে। সেই প্রচারকেও মোদীর ফেরি করা স্বপ্নের সঙ্গে মেলানোর কৌশল নিয়েছেন সঙ্ঘ নেতারা। তাঁরা বলছেন, মোদী মুখে হিন্দুত্ব বা রামমন্দির নির্মাণের কথা না বললেও তিনি যে শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের কথা বলছেন, সেটিও সঙ্ঘের মূল ভাবনা। এক সময়ে লালকৃষ্ণ আডবাণী রামমন্দির নির্মাণকে ভারতমাতার মন্দির নির্মাণের সমতুল বলেছিলেন। মোদী এখন সেই কথা বলছেন। এর মধ্যে কোনও ফারাক নেই।
বিজেপির এই দ্বিমুখী কৌশল কতটা কাজে লাগে, তা-ই এখন দেখার।