পায়ের নীচের মাটি ক্রমে হারাচ্ছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। জেএমএম-কংগ্রেস জোট সরকারের ‘দুর্গ’ ভাঙতে তৎপর বিরোধী শিবিরও।
লোকসভা ভোটের পর রাজ্য সরকার টিকে থাকবে কি না, তা নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে।
তা আরও উস্কে দিয়ে আজ বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন জেএমএম থেকে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া হেমলাল মুর্মূ। বিধানসভার স্পিকার শশাঙ্কশেখর ভোক্তা এ কথা জানিয়েছেন। হেমলালের সঙ্গেই শিবু সোরেনের শিবির ছেড়ে বেরিয়ে আসা বিদ্যুৎবরণ মাহতোও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার চিঠি তাঁকে পাঠাচ্ছেন বলেও জানান ভোক্তা। গত কাল সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিশ্রামপুরের বিধায়ক চন্দ্রশেখর (দদাই) দুবে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন।
বিদ্যুৎবরণের ইস্তফা স্পিকারের কাছে পৌঁছলে রাজ্য বিধানসভায় থাকবেন ৭৯ জন জন-প্রতিনিধি। তাঁদের মধ্যে হেমন্ত সরকারের পক্ষে রয়েছেন ৪০ জন বিধায়ক। বিরোধী পক্ষে ৩৯ জন। মুখ্যমন্ত্রীর শিবিরের আরও এক জন বিধায়ক যদি এ দিক ও দিক করেন, তা হলে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে রাজ্য সরকার। লোকসভা ভোটের মুখে এমনই টালমাটাল পরিস্থিতিতে ঝাড়খণ্ড।
জেএমএম শীর্ষ নেতা শিবু সোরেনের ছেলের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ঠেলে ফেলতে সক্রিয় বিরোধী নেতারাও। বুধবার রাজ্যপাল সৈয়দ আহমেদের কাছে গিয়ে সরকারকে বরখাস্ত করার আর্জি জানিয়েছেন ‘ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চা’র নেতা বাবুলাল মারাণ্ডি। রাজনীতির হিসেব কষে তিনি রাজ্যপালকে দেখিয়েছেন, হেমন্তের কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়কের আস্থা নেই।
ওই দিনই জেএমএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন এক সময়ে শিবুর ঘনিষ্ঠ বিধায়ক হিসেবে পরিচিত বিদ্যুৎবরণ মাহতো। তাঁকে জামশেদপুরের প্রার্থী করছে বিজেপি। কয়েক দিন আগে হেমন্তের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে দল ছাড়েন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী হেমলাল মুর্মূও। বিজেপি প্রার্থী হিসেবে রাজমহল কেন্দ্রে ভোটের ময়দানে নামছেন হেমলাল। বিজেপি অবশ্য এখনই সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেনি। তবে, হেমন্তের সরকারকে তাঁরা যে উৎখাত করতে তৎপর, গত কাল সেই ইঙ্গিতও মিলেছে। বিজেপি নেতা অমরপ্রীত কালে বলেছেন, “আমরাও পরিবর্তনের পক্ষে।”
এই টানাপড়েনের মধ্যে তৃণমূল শেষ পর্যন্ত কী ভূমিকা নেয়, সে দিকে তাকিয়ে ঝাড়খণ্ডের রাজনেতারা। বিধানসভার স্পিকার জানিয়েছিলেন, তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিধায়ক, বন্ধু তিরকি এবং চামড়া লিণ্ডা দলত্যাগ আইনের আওতায় পড়বেন না। তবে, হেমলাল মুর্মূ এবং বিদ্যুৎ বরণ মাহতোর বিরুদ্ধে তা লাগু হতে পারে। তাঁরা অন্য কোনও দলের প্রার্থী হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার আগেই ইস্তফা দিলেন হেমলাল। বিদ্যুৎ বরণও সেই পথেই এগোচ্ছেন।
রাজ্য-রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখছেন হেমন্ত সোরেন। বুধবার দুমকায় তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সির লোভ আমার নেই। সরকারের অস্তিত্বের চিন্তা থাকলেও, আমি নিজে যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।”