মাসারত আলম।
মধুচন্দ্রিমাতেই বিবাদ শুরু।
কয়েক দিন আগেই পিডিপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে জম্মু-কাশ্মীরে সরকার গড়েছে বিজেপি। কিন্তু তার পর থেকেই পিডিপির একের পর এক পদক্ষেপ অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলছে নরেন্দ্র মোদীর। শপথ নেওয়ার দিন মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সঈদকে গলা জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী যে সদর্থক যাত্রা শুরু করতে চেয়েছিলেন, অচিরেই তার সুর কাটতে শুরু করেছে। সেই দিনই মুফতি মন্তব্য করেন, কাশ্মীরে শান্তিতে ভোট হওয়ার জন্য জঙ্গি, পাকিস্তান ও হুরিয়তকে কৃতিত্ব দেওয়া উচিত। এই মন্তব্য ঘিরে প্রবল বিতর্ক হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে বিবৃতি পর্যন্ত দিতে হয়েছে। কিন্তু মুফতি নিজের অবস্থান থেকে সরেননি। উল্টে মোদীর অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে সরকারের শরিক বিজেপিকে অন্ধকারে রেখেই কট্টর হুরিয়ত নেতা মাসারত আলমকে জেল থেকে ছেড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সেই মাসারত, ২০১০ সালে ভারত-বিরোধী বিক্ষোভের জন্য যাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল। একশোর বেশি মানুষ সেই বিক্ষোভে নিহত হন। তাঁকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় বিরোধীরা তো বটেই, এখন সঙ্ঘ ও এনডিএ-র শরিকরাও প্রধানমন্ত্রীকে দুষতে শুরু করেছে। যা নিয়ে আগামিকাল ফের উত্তাল হতে পারে সংসদ। আরও এক বার বিবৃতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপর চাপ দিতে পারেন বিরোধীরা। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা আজই তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী জবাব দিন, জম্মু-কাশ্মীরে বিজেপি-পিডিপি সরকারের একের পর এক পদক্ষেপে কেন সেখানে শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে? ভারত-বিরোধী প্রতিবাদের জন্য যাঁকে জেলে পাঠানো হয়েছিল, তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কি প্রধানমন্ত্রীও সমর্থন করেন?”
বিজেপির শরিক শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউতও বলেন, “আমরা আগেই পিডিপির সঙ্গে সরকার গড়ার সময় বিজেপিকে সতর্ক করেছিলাম। যে ভাবে মাসারত আলমকে ছাড়া হয়েছে, তাতে স্পষ্ট মুফতি মহম্মদ সঈদ প্রকৃত ভারতীয় নন।” সঙ্ঘের মুখপত্রে লেখা হয়েছে, ‘পিডিপি নেতা একজন ভারতীয় কি না, তা স্পষ্ট করুন। বিজেপিরও উচিত পিডিপির কাছ থেকে এই বিষয়টি স্পষ্ট করে নেওয়া। পিডিপি এ ভাবে দ্বিচারিতা করতে পারে না।’
সঙ্ঘের এক নেতার কথায়, বিজেপি সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ নিয়ে আপস করে পিডিপির সঙ্গে সরকার গড়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে বোঝানো হয়েছে, দল এই প্রথম জম্মু-কাশ্মীরে সরকার গড়ার অবস্থায় এসেছে। যখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে বিজেপি, তখনই সঙ্ঘ ও দলের মূল কর্মসূচিগুলি রূপায়ণের চেষ্টা হবে। সেই অনুযায়ী এখন মুখ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু যদি পিডিপি এ ভাবে ভারত-বিরোধী অভিযানে লাগাতার মদত দিয়ে চলে, তা হলে সঙ্ঘের পক্ষেও মুখ বন্ধ করে বসে থাকা সম্ভব নয়।
চাপের মুখে পুরো বিষয়টি নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর সরকারের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আজ ছুটির দিন হলেও মন্ত্রকের কাশ্মীর শাখার অফিসারেরা রাজ্যের কাছ থেকে বিষয়টি নিয়ে যত দূর সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করেছেন। মাসারতের মুক্তি নিয়ে কেন্দ্রের পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহই মুখ খুলবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও ইউএপিএ আইনের অভিযোগ রয়েছে মাসারতের বিরুদ্ধে। ২০১০ সালে জম্মু-কাশ্মীরের হারওয়ান এলাকা থেকে তাঁর গ্রেফতারির পরে ছ’জন পুলিশের পদোন্নতি হয়। মাসারতের গ্রেফতারির জন্য ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। কোন পরিস্থিতিতে তাঁকে বারামুলা জেল থেকে ছাড়া হল তা জানতে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিজি কে রাজেন্দ্রর সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রসচিব এল সি গয়ালও। পরে মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সঈদের বৈঠক করেন কে রাজেন্দ্র।
ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়ে এখন জম্মু-কাশ্মীরে বিজেপিও প্রতিবাদ শুরু করেছে। রাজ্যে বিজেপি বিধায়ক রবীন্দ্র রাইনা বলেন, “মাসারত আলম রাজনৈতিক বন্দি নয়, এক জন সন্ত্রাসবাদী। বিজেপি এমন ভারত-বিরোধী, পাকিস্তানপন্থী নেতাকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা বরদাস্ত করবে না।” রাইনা সাফ জানিয়েছেন, এ ভাবে চললে জোট সরকার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। সরকার একটি অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে চালানো হচ্ছে। সেখানে আদৌ এ ধরনের কথা লেখা নেই।
কিন্তু পিডিপির দাবি, অভিন্ন কর্মসূচি মোতাবেকই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। পিডিপির মুখপাত্র নঈম আখতারের মতে, কাশ্মীরে অভিন্ন কর্মসূচিতেই সব অংশীদারকে সামিল করার কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে এই হুরিয়ত নেতারাও পড়েন। তাঁরা জেলে থাকলে তাদের অংশীদার করা যাবে না।
জেল থেকে ছাড়া পেয়েই রাজ্য ও কেন্দ্রকে এক হাত নিয়েছেন মাসারত। তাঁর কথায়, “সরকার বদলালেও বাস্তবের পরিস্থিতি বদলায় না। তা একমাত্র বদলাতে পারেন কাশ্মীরের মানুষ।” কোনও গোপন সমঝোতার ফলে নিজের ছাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা। তাঁর কথায়, “এর আগে তিন বার জামিন পেয়েছি আমি। এ বারেও ছাড়া পেয়েছি আইন মেনেই।”