এ বছর ১২ মে বা ক্ল্যাট পরীক্ষার দিন ধার্য হয়েছে। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশের একুশটি আইন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে যোগ দিতে পারবে ছাত্রছাত্রীরা। পাঁচ বছরের বি এ/ বি এসসি/ বিবিএ এলএলবি (অনার্স) এবং স্নাতকোত্তর এক বছরের এলএলএম, দুটোই পড়া যাবে ক্ল্যাট-এর মাধ্যমে।
গত বছরের তুলনায় এ বছর ক্ল্যাট-এ কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হল পরীক্ষাটি এখন আর অনলাইন নয়, অফলাইন (কাগজ-পেন্সিল ব্যবহার করে) দিতে হবে। স্নাতক স্তরের এলএলবি-র জন্য ক্ল্যাট সর্বমোট ২০০ নম্বরের হয়। সময় থাকে দু’ঘণ্টা। মাল্টিপল চয়েস প্রশ্ন আসে। নেগেটিভ মার্কিং (একটা ভুল করলে ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে) আছে। পরীক্ষাটি হয় মূলত পাঁচটি বিষয়ের উপর—
• ইংলিশ ইনক্লুডিং কমপ্রিহেনশন (৪০ নম্বর)
• জেনারেল নলেজ অ্যান্ড কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স (৫০ নম্বর)
• লজিক্যাল রিজ়নিং (৪০ নম্বর)
• লিগাল অ্যাপটিটিউড (৫০ নম্বর) এবং
• এলিমেন্টারি ম্যাথমেটিক্স (নিউমেরিক্যাল এবিলিটি) (মাধ্যমিক বা তার কম স্তরের, ২০ নম্বর)
প্রচুর বই পড়া বা প্রতিদিন দৈনিক সংবাদপত্র খুঁটিয়ে পড়া, গুছিয়ে নিজের বক্তব্য প্রকাশ করতে পারা, ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা, খুব
তাড়াতাড়ি মনোযোগ দিয়ে কোনও কিছু পড়ে ফেলার ক্ষমতা— এই সব গুণগুলি পরীক্ষায় তফাত গড়ে দিতে পারে। যে হেতু অফলাইন ওএমআর শিটে উত্তরগুলি দিতে হবে, তাই আসল পরীক্ষার মতো করে প্রস্তুতি এখন থেকে নিলে ভাল হয়। একটা জিনিস কোরো। আসল পরীক্ষা তো বটেই, মক টেস্ট দেওয়ার সময়েও সঙ্গে একাধিক এইচবি পেন্সিল এবং ইরেজ়ার রাখতে হবে।
স্নাতকোত্তর স্তরে এই পরীক্ষা নেওয়া হয় ১৫০ নম্বরের উপর এবং এরও সময়সীমা দু’ঘণ্টা। ১০০ নম্বর হবে মাল্টিপল চয়েস প্রশ্নের। এখানেও নেগেটিভ মার্কিং আছে। ৪০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে কনস্টিটিউশনাল ল’ থেকে আর বাকি ৬০ নম্বরের প্রশ্ন আসবে কনট্র্যাক্ট ল’, ল’ অব টর্টস, ক্রিমিনাল ল’, ইন্টারন্যাশনাল ল’, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ল’, জুরিস্প্রুডেন্স ইত্যাদি থেকে। এ ছাড়াও এই পরীক্ষায় ২৫ নম্বরের দুটি সাবজেক্টিভ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে পরীক্ষার্থীদের।
দু’টি পরীক্ষার কোনওটাতেই কিন্তু বয়সভিত্তিক কোনও শর্ত দেওয়া হয়নি এ বারে। ক্ল্যাট এলএলবি পরীক্ষায় বসতে হলে ১০+২ (উচ্চ মাধ্যমিক ইত্যাদি) পরীক্ষায় ন্যূনতম গড়ে ৪৫ শতাংশ (তফসিলি জাতি/জনজাতিদের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ) থাকতে হবে। আর ক্ল্যাট এলএলএম-এর জন্য এলএলবি স্তরের পরীক্ষায় ন্যূনতম গড়ে ৫৫ শতাংশ নম্বর (তফসিলি জাতি/ জনজাতিদের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ) থাকতে হবে। যে সব ছাত্রছাত্রী এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক বা সমতুল অথবা এলএলবি ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষায় বসছে, তারাও ক্ল্যাট-এ বসতে পারবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় তাদের অবশ্যই ফাইনাল পরীক্ষার মার্কশিট দেখাতে হবে।
ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটিগুলির এলএলএম-এর প্রবেশিকা ছাড়াও এই পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটি নামকরা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা (যেমন, ইন্ডিয়ান অয়েল ইত্যাদি) তাদের চাকরির ইন্টারভিউয়ে ডাকে। তাই এটাও ক্ল্যাট এলএলএম পরীক্ষার একটা বড় আকর্ষণ।
গত কয়েক বছর ধরেই এই পরীক্ষায় প্রতিযোগীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সুতরাং ক্ল্যাট বিষয়গুলির উপর পুঁথিগত দখল থাকার সঙ্গে সঙ্গে এই কয়েক মাস যে পরীক্ষার্থীরা টাইম ম্যানেজমেন্ট, পরীক্ষার চাপ সামলানো, অল্প সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার মতো বিষয়গুলির প্রতি নজর দিতে পারবে, তারা অন্যদের থেকে নিজেদের এগিয়ে রাখতে পারবে।
আজ এই পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে তোমাদের কয়েকটা পরামর্শ দিয়ে রাখি। পরীক্ষায় যতগুলি বিভাগ রয়েছে, তাদের জন্য আলাদা করে সময় ধার্য করো। দু’ঘণ্টার বদলে মনে করো তোমার হাতে এক ঘণ্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট রয়েছে। শেষ কিছু মিনিট (দশ বা পনেরো) রাখো আকস্মিক বা তাৎক্ষণিক কোনও সমস্যার জন্য। যে বিষয়টা তুমি সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছন্দ, সেটা দিয়ে শুরু করো। সেটা ইংরেজিও হতে পারে বা জেনারেল নলেজ। কারণ প্রথম দশ বা পনেরোটা প্রশ্ন ঠিকমতো করতে পারলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আবার যাদের প্রথম দিকে মনঃসংযোগ করতে অসুবিধে হয়, তাদের রিজ়নিং বিষয়ক প্রশ্ন দিয়ে শুরু না করাই ভাল। একটা ভাল বিকল্প হতে পারে এ রকম:
• ইংরেজি (বা যদি অন্য কিছু প্রথম পছন্দ হয় এবং ইংরেজিতে দুর্বলতা থাকে) — ২০ মিনিট
• লজিক্যাল রিজনিং — ২৫ মিনিট
• জিকে — ১৫ মিনিট
• লিগাল অ্যাপ্টিটিউড — ৪৫ মিনিট
• অঙ্ক (বা দুর্বলতম বিষয়) — ১৫ মিনিট।
তবে এই বিভাজনটা স্রেফ একটা উদাহরণ মাত্র। তোমরা তোমাদের মতো পরীক্ষায় সময় ভাগ করে নিতেই পারো। তবে মনে রেখো, পরীক্ষায় সময় যে হেতু কম তাই একটা বিষয় শেষ করার পরে তাতে আবার ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তাই যা করছ, একেবারে করে এগিয়ে যাও। কোনও প্রশ্নের উপর ৩০ সেকেন্ডের বেশি সময় না দেওয়াই ভাল। কিছু প্রশ্ন থাকবে যেগুলো দেখেই মনে হবে কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ। সেগুলো চেষ্টা না করে বরং অপেক্ষাকৃত সহজ প্রশ্ন নির্ভুল ভাবে সমাধান করার চেষ্টা করো।
স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষায় অবশ্যই কনস্টিটিউশনাল ল’-এর উপর সময় (অন্তত ২৫ মিনিট) বেশি দিতে হবে। তবে অন্য বিষয়গুলিকেও অবহেলা করলে চলবে না। বাজারে ভারতীয় লেখকদের যে সব ভাল বই পাওয়া যায়, সেগুলি ঠিকমতো বুঝে পড়লেই তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি অনেকখানি হয়ে যাবে।
আগামী কয়েক মাসে যতগুলো পারো মক টেস্ট দিতে থাকো। এবং বিভিন্ন বিভাগে কী ধরনের নম্বর উঠছে, নোট করো। কারণ তার থেকেই তোমার ধারণা হয়ে যাবে কোন ধরনের প্রশ্নে বা বিষয়ে তোমার দুর্বলতা রয়েছে। যদি কারও জেনারেল নলেজ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স দুর্বলতা হয়, তা হলে সে আগামী দু’-তিন সপ্তাহে নতুন তথ্য পড়তে পারে। যখন সংবাদপত্র পড়ছ, তখন প্রতিটা সংবাদই মূল্যবান। কারণ প্রশ্ন তো যে কোনও বিষয় থেকেই হতে পারে। কারও যদি অঙ্কে দুর্বলতা থাকে, তা হলে তার পক্ষে এই চার মাসে অঙ্কে ভাল হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু ভাল করে প্র্যাকটিস করলে, কিছু অঙ্ক অবশ্যই পারা উচিত। যে হেতু এখানে মাধ্যমিক বা তার নিচু স্তরের প্রশ্ন আসে, ফলে এ ক্ষেত্রে প্র্যাকটিসই মূল কথা।
এই পরীক্ষায় তাড়াতাড়ি উত্তর করার ক্ষমতা কিন্তু ভীষণ কাজে লাগে। ৩০-৪০ সেকেন্ডের মধ্যে কোনও প্রশ্নের উত্তর করতে না পারলে সেটা নিয়ে আর ভাবা উচিত নয়। মনে রেখো, প্রতিটা প্রশ্নেই এক নম্বর রয়েছে। কিন্তু একটা প্রশ্নে আটকে যদি তুমি পরের সোজা প্রশ্নটা না করতে পারো, সেটা কাম্য নয়।
রিজনিং-এর ক্ষেত্রে কোনও বিষয় বা প্রশ্নকে ব্যক্তিগত পূর্বধারণা ও পক্ষপাত সরিয়ে রেখে বিচার করার ক্ষমতা তৈরি করা দরকার। এক বার যদি কেউ নিজের যুক্তির দুর্বলতাগুলো ধরতে পারে, তা হলে সে শুধু ক্ল্যাট-এ ভাল ফল নয়, ভবিষ্যতে এক জন দক্ষ আইনজ্ঞ হওয়ার পথেও অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
একটা মক পরীক্ষায় বোসো। প্রতিটা বিভাগে প্রাপ্ত নম্বর খুঁটিয়ে দেখো। মানে ঠিক, ভুল এবং যেগুলো ছেড়ে দিলে, সব ক’টিই দেখবে। ভুল উত্তরগুলোর ক্ষেত্রে ঠিক ব্যাখ্যাটা কী দেখার পরে লক্ষ করো তুমি কোথায় ভুল করলে। যে প্রশ্নগুলো ছেড়ে এসেছ (ধরো ২৫টা) তার উত্তরগুলো দেখে নাও। এই ভাবে ধীরে ধীরে মক টেস্ট দিতে দিতে এবং সেল্ফ-অ্যানালিসিস করতে করতে দেখবে, তুমি নিজেই ধীরে ধীরে বুঝতে পারছ কোন প্রশ্নটা সহজে উত্তর করা যাবে আর কোনটা ছাড়তে হবে। আর এটা করতে করতেই দেখবে পরীক্ষার অধিকাংশ বিভাগে ভাল দখল চলে এসেছে তোমার।
জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে এলএলবি (স্নাতক) এলএলএম (স্নাতকোত্তর) ছাড়া এম ফিল, পিএইচ ডি, এলএলডি ইত্যাদি গবেষণামূলক পাঠ্যক্রমের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু ডিপ্লোমা প্রোগ্রামেরও ব্যবস্থা আছে, যাতে আইন ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ের ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করতে পারে। এই সব প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে ক্যাম্পাস প্লেসমেন্ট-এর মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন ল’ ফার্ম এবং সংস্থায় যোগ দিয়ে থাকে। কেউ আদালতে যোগ দেয় আইনজীবী হিসেবে। কয়েক জন ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষার জন্য অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, হার্ভার্ড, ইয়েল ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়। বেশ কয়েক জন ছাত্রছাত্রী যোগ দেয় এমবিএ-তেও। আবার যাদের লক্ষ্য সরকারি চাকরি, তারা বসে সিভিল সার্ভিসেস-এর মতো সর্বভারতীয় পরীক্ষায়।
ক্ল্যাট পরীক্ষার ফর্ম একমাত্র অনলাইন ভরতে হবে। পাওয়া যাবে clatconsortiumofnlu.ac.i• ওয়েবসাইট থেকে।
যে সব প্রতিষ্ঠানে কমন ল’ অ্যাডমিশন টেস্ট (ক্ল্যাট) দিয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়—
• ন্যাশনাল ল’ স্কুল অব ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি, বেঙ্গালুরু
www.nls.ac.in
• নালসার (ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব লিগাল স্টাডিজ় অ্যান্ড রিসার্চ) ইউনিভার্সিটি অব ল’, হায়দরাবাদ
www.nalsar.ac.in
• দ্য ন্যাশনাল ল’ ইনস্টিটিউট ইউনিভার্সিটি, ভোপাল
www.nliu.ac.in
• দ্য ডব্লুবি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস, কলকাতা
www.nujs.edu
• ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটি, জোধপুর
www.nlujodhpur.ac.in/index-main.php
• হিদায়াতুল্লা ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটি, ছত্তীসগঢ়
www.hnlu.ac.in
• গুজরাত ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটি, গাঁধীনগর
www.gnlu.ac.in/GNLU/Home
• ডক্টর রাম মনোহর লোহিয়া ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটি, লখনউ
www.rmlnlu.ac.in
• রাজীব গাঁধী ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ল’, পঞ্জাব
www.rgnul.ac.in
• চাণক্য ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটি, পটনা
www.cnlu.ac.in
• দ্য ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডভান্সড লিগাল স্টাডিজ়, কোচি
http://nuals.ac.in
• ন্যাশনাল ল’ ইউিভার্সিটি ওড়িশা, কটক
www.nluo.ac.in
• ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্টাডি অ্যান্ড রিসার্চ ইন ল’, রাঁচি
www.nusrlranchi.in
• ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি, অসম
www.nluassam.ac.in
• দামোদর সঞ্জীবায় ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটি, বিশাখাপত্তনম
https://dsnlu.ac.in
• তামিলনাড়ু ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটি, তিরুচেরাপল্লি
www.tnnls.in
• মহারাষ্ট্র ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটি, মুম্বই
http://mnlumumbai.edu.in
• ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটি, নাগপুর
www.nlunagpur.ac.in
• মহারাষ্ট্র ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটি, আওরঙ্গাবাদ
www.mnlua.ac.in
• এইচ পি ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটি, শিমলা
http://hpnlu.ac.in
• ধর্মশাস্ত্র ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটি, জব্বলপুর
https://mpdnlu.ac.in