ছবি : সংগৃহীত।
সমরেশ বসুর ‘গঙ্গা’ নয়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ও নয়। এই গল্প মেঘনার। আর তা পাতার বদলে পাতে লেখা হচ্ছে ভরা বর্ষার কলকাতায়।
‘গঙ্গা’য় ইলিশকে ঘিরে গাঙ্গেয় মৎস্যজীবীদের জীবন-ছবি এঁকেছিলেন সমরেশ। মানিকও তুলে ধরেছিলেন পদ্মা নদীর মাঝিদের বর্ষাকালীন যাপনের খণ্ডচিত্র। এ ‘গল্পে’ও ইলিশের সঙ্গে মিশেছে বাংলাদেশের মেঘনা নদীর মাঝিদের অজানা কাহিনি। আর তাতেই ভিজে শহরে তৈরি হয়েছে এক অনাস্বাদিত রসনা-রোমাঞ্চ। যার পুরো কৃতিত্বই এক ইলিশ উৎসবের মেনু কার্ডের।
পদ্মার ইলিশের খ্যাতি বিশ্বজোড়া, মেঘনার ইলিশ তার থেকেও বেশি সুস্বাদু বলে একটি বিতর্ক আছে।
বর্ষায় এ বঙ্গের বাজারে যে রুপোলি ফসলের আনাগোনা চোখে পড়ে, তা মূলত গঙ্গারই দান। পদ্মার ইলিশের খ্যাতি থাকলেও তা আসে বর্ষার শেষার্ধে। আর মেঘনার ইলিশ? কলকাতার বাজারে সে ইলিশ পাওয়া তো দূর, তার খোঁজও করা হয় কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে ও পার বাংলায় মেঘনার ইলিশ জনপ্রিয়। শুধু তা-ই নয়, যে পদ্মার ইলিশের খ্যাতি বিশ্বজোড়া, মেঘনার ইলিশ তার থেকেও বেশি সুস্বাদু বলে একটি বিতর্ক আছে। এমনকি, সে ব্যাপারে গবেষণাও করেছে বাংলাদেশের দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়)। যার ফল বলছে, স্বাদে তো বটেই পুষ্টিগুণেও ইলিশ কূলে সেরা মেঘনার ইলিশ!
এ হেন মেঘনা নদী আর সেখানকার মাঝিদের ইলিশের গল্প এ বার বর্ষার কলকাতায়। তবে সে গল্প পড়ার নয়, শোনারও নয়, চেখে দেখার। শহরের রেস্তরাঁ ‘ওহ! ক্যালকাটা’য় চলছে ইলিশের উৎসব। সেখানেই মিলছে একটি ইলিশের ব্যাঞ্জন। নাম ‘মেঘনামাঝিদের ইলিশ।’
মেঘনামাঝিদের ইলিশ।
মাছ ধরতে মাঝদরিয়ায় দীর্ঘ সময় কাটে মাঝিদের। নৌকাই তখন তাঁদের আশ্রয়। সেখানেই ঘুম, সেখানেই নাওয়া-খাওয়া। ছইয়ের ভিতরে হাঁড়ি চড়ে। ফোটানো ভাতের সঙ্গে রান্না করা হয় জল থেকে পাওয়া তাজা রুপোলি শস্যের। ‘ওহ! ক্যালকাটা’-র মেনুকার্ড বলছে, মেঘনা নদীর মাঝিদের রান্না থেকেই অনুপ্রাণিত ওই রান্না। যেখানে ইলিশের স্বাদ বৃদ্ধি করবে নারকেলের শাঁসের দুধ আর কিছু বিশেষ মশলাপাতি।
অবশ্য ইলিশ উৎসবে একা ‘মেঘনামাঝিদের মাছ’ই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু নয়। সেখানে থাকছে ইলিশের নানা চেনা-অচেনা আরও স্বাদের সমাহার। যার মধ্যে একটি মোচার ইলিশ। মোচার ইলিশ খানিকটা কাটলেটের ধাঁচের রান্না। কলকাতা মোচার কাটলেট বা মোচার চপ খেয়েছে। কিন্তু এ বার যেটি খেতে চলেছে তাতে মোচার সঙ্গে থাকছে ইলিশও। উপরে নীচে মশলায় বাটা মোচার পরত। মাঝে কাঁটাহীন ইলিশের ফিলে। কামড় দিলে দাঁতে অনুভব করা যায় মোচার মশলায় থাকা পেঁয়াজ-রসুন-কাঁচালঙ্কার কুচি। তার সঙ্গে ইলিশের স্বাদ আর মুচমুচে ভাব মিলেজুলে এক অদ্ভুত অনুভুতি তৈরি হয়। সেই অনুভূতি কেমন, তা জানতে হলে যোগ দিতে হবে ইলিশ উৎসবে।
ইলিশ থালি।
প্রতি বছরই বর্ষায় ইলিশ ভোজের আয়োজন করে ওহ! ক্যালকাটা। তবে এ বার সেই ভোজের আরও একটি আকর্ষণ ইলিশ থালি। প্রায় ১৬০০ টাকার সেই থালিতে থাকবে মোচার ইলিশ, সর্ষেভাপা ইলিশ, ইলিশ ভাজা, ইলিশের তেল এবং আরও অনেক কিছু। এ ছাড়া কুমড়ো পাতায় আমআচারি ইলিশ, বিদেশি কেতার স্মোকড হিলসা, ইলিশ ফিশ ফিঙ্গারও থাকছে মেনুতে।