Loke Ki Bolbe

লক্ষ্মীমেয়ের সংজ্ঞা ঠিক কী? বিজয়ার আড্ডায় প্রশ্ন রাখলেন অনুত্তমা, রত্নাবলী এবং ঊর্মিমালা

আনন্দবাজার অনলাইনের বিশেষ উদ্যোগ ‘লক্ষ্মীদের শারদীয়া আড্ডা’-এ অনুত্তমার সঙ্গী হয়েছেন মনোসমাজকর্মী রত্নাবলী রায় এবং বাচিকশিল্পী ঊর্মিমালা বসু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২২ ২০:৩৯
Share:

লক্ষ্মী মেয়ের সংজ্ঞা এক এক জনের কাছে এক এক রকম। নিজস্ব চিত্র।

সদ্য শেষ হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো। পেরিয়ে গিয়েছে লক্ষ্মীপুজোও। চলছে বিজয়ার পর্ব। সামনেই আসছে দীপাবলি। এই উৎসবের আবহে ‘লোকে কী বলবে’-র বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রতি সোমবারের মতো এ দিনও ছিলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে জীবনের গূঢ় কোনও সমস্যার জট খুলতে নয়। বরং শারদীয়া আড্ডা দিতে। সব উৎসবের সূত্রই হল আড্ডা আর গল্পগুজব। তবে আড্ডা তো আর একা একা হয় না। সম্ভবও নয়। আনন্দবাজার অনলাইনের বিশেষ উদ্যোগ ‘লক্ষ্মী’দের শারদীয়া আড্ডায় অনুত্তমার সঙ্গী হয়েছেন মনোসমাজকর্মী রত্নাবলী রায় এবং বাচিকশিল্পী ঊর্মিমালা বসু।

Advertisement

রবিবার ছিল লক্ষ্মীপুজো। লক্ষ্মীদেবীর আরাধনায় মেতে উঠেছিলেন তারকা থেকে সাধারণ মানুষ। আড্ডার শুরুতে ঊর্মিমালা বসু মনে করালেন, কোজাগরী পূর্ণিমায় যে লক্ষ্মীপুজোর চল আসলে ওপার বাংলা থেকে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ্মীপুজো আসলে দীপান্বিতা কালীপুজোয় যে পুজোটা হয়, সেটাই। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর একটি বিশেষ রীতি হল অ-লক্ষ্মীর বিদায়। ঊর্মিমালা জানালেন, আসলে লক্ষ্মীপুজোর উদ্দেশ্য হল সংসার সুস্থির করা। যাতে বাড়িতে শান্তি বজায় থাকে। ঊর্মিমালার কথা শেষ হতেই রত্নাবলী প্রশ্ন করলেন, ‘‘কেন লক্ষ্মী কি অস্থির বাড়িতে আসেন না?’’ তিনি যেন খানিক ভয় পেয়ে বললেন, ‘‘আসলে আমার সঙ্গে সুস্থির শব্দটা একেবারেই যায় না। লক্ষ্মীপুজোয় অলক্ষ্মীর বিদায়ের জন্য থোড়ের নৌকা বানানো হয়, সেটাই আমার সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে হত। এখনও হয়। কী সুন্দর পালতোলা নৌকার মতো। মঙ্গলকাব্যের যুগে তো ওই ধরনের নৌকা করেই বাণিজ্যে যেতেন রাজারা। সেখানে মহিলাদেরও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু সেই নৌকা যে এই সুস্থির আর অস্থির বৃত্তের মধ্যে এসে পড়েছে, তাতে অবাক হতে হয়। আচ্ছা লক্ষ্মী মানে তাঁকে সুস্থির হতেই হবে?’’

মুখ খুললেন অনুত্তমা। বলেন, ‘‘কথায় বলে লক্ষ্মী চঞ্চলা। আবার আর এক দিকে আমরা বলে থাকি লক্ষ্মীমন্ত হও। শান্ত হও। চলার সময়ে পায়ের শব্দটি যেন না হয়। গলার স্বর যেন খুব তীব্র না হয়। এখানে কিন্তু একটা স্ববিরোধীতাও থেকে যায়।’’

Advertisement

লক্ষ্মী মেয়ের সংজ্ঞা এক এক জনের কাছে এক এক রকম। লক্ষ্মী বললেই কারও চোখের সামনে ভেসে ওঠে সুশ্রী, শান্ত, স্নিগ্ধ, সংসারি, গোছানো কোনও নারী। আবার কারও কাছে পাশের বাড়ির দস্যি মেয়ের মতো লক্ষ্মী মেয়েটি আর নেই। প্রকৃত লক্ষ্মী হতে গেলে সংসারে অনেক ত্যাগ করতে হয়, বা ত্যাগ করাটাই লক্ষ্মীর প্রতীক হয়ে ওঠার সব থেকে বড় নজির— এমন ধারণাও কিন্তু ঠিক নয়। বরং আত্মত্যাগের পাশাপাশি আত্মপ্রতিষ্ঠাও লক্ষ্মীর মধ্যে থাকা দরকার। আসলে লক্ষ্মীমেয়ের তো নির্দিষ্ট কোনও বৈশিষ্ট্য নেই। যে যেমন তাঁকে তাঁর মতো করে মেনে নেওয়াটা জরুরি। কোনও মানুষই জীবনের একটা বিন্দুতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। সকলেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে নিজের মতো করে সফল। সমৃদ্ধি তো শুধু টাকা-পয়সা দিয়ে হয়। অবিরত নিজের কাজের গুণগত মানের উন্নতির চেষ্টাও জারি রাখা প্রয়োজন। সুচিন্তা, সুচেতনায় সমৃদ্ধ হোক জীবন ও মনন। রত্নাবলী, অনুত্তমা এব‌ং ঊর্মিমালার শারদীয়া আড্ডায় যেন এমন বার্তাই উঠে এল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন