Durga Puja 2023

টলিউড সাজবে তাঁদের পোশাকে, নিজেদের পুজোর সাজ নিয়ে কী ভাবছেন শহরের পোশাকশিল্পীরা?

বছর ঘুরে পুজো এসেছে। চারদিকে ‘সাজ সাজ’ রব। তারকারা সাজবেন পোশাকশিল্পীদের পোশাকে। কিন্তু পোশাকশিল্পীদের সাজাবে কে? তাঁদের পুজোর সাজ কেমন হবে? খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:১০
Share:

পোশাকশিল্পীদের সাজানোর দায়িত্ব কার? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সারা বছর তাঁরা অন‍্যদের সাজান। পর্দার তারকারা তাঁদের সৃষ্টির ছোঁয়ায় সেজে ওঠেন নিত‍্যনতুন সাজে। ছবির প্রিমিয়ার হোক কিংবা পুজো— যে কোনও পার্বণেই তাঁরা হয়ে ওঠেন তারকাদের সবচেয়ে কাছের মানুষ। আর সেই জন‍্যেই বোধহয় ইন্ডাস্ট্রিতে মাথাপিছু তারকার এক জন করে পোশাকশিল্পী বন্ধু আছে। বছর ঘুরে পুজো এসেছে। চারদিকে ‘সাজ সাজ’ রব। তারকারা সাজবেন পোশাকশিল্পীদের পোশাকে। কিন্তু পোশাকশিল্পীদের সাজাবেন কারা? তাঁদের পুজোর সাজ কেমন হবে? খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement

নিজের পুজোর সাজ নিয়ে একেবারেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পছন্দ করেন না পোশাকশিল্পী অভিষেক রায়। ষষ্ঠী থেকে দশমী ধুতি-পাঞ্জাবিতেই তিনি স্বচ্ছন্দ। বন্ধুর বাড়ির দুর্গাপুজোয় সাবেকি পোশাক পরেই উদ্‌যাপন করবেন তিনি। বন্ধুরা ধুতি উপহার দেন, কখনও আবার নিজেও বানিয়ে নেন। তবে পাঞ্জাবির ক্ষেত্রে নিজের নকশার উপরেই ভরসা রাখেন অভিষেক। একরঙা পাঞ্জাবি পরতে ভালবাসেন। সাদা, ধূসর, লাল রঙের পাঞ্জাবিতে আঁকিবুঁকি থাকলেও ক্ষতি নেই। তবে মাথা খাটিয়ে, সময় নিয়ে পোশাকের নকশা তৈরি করেন তিনি। পুজোর আগে বেজায় ব‍্যস্ত তিনি। এখনও নিজের জন‍্য কিছু তৈরি করে উঠতে পারেননি। অভিষেকের কথায়, ‘‘পুজোর এই সময়টায় সবচেয়ে বেশি চাপ যায়। এই চাপটা নিতে খুব ভালওবাসি। তবে নিজের জামাকাপড় তৈরির জন‍্য সত‍্যিই এই মুহূর্তে কোনও সময় নেই। একেবারে পুজোর মুখে আমার কারিগরদের হাতে যদি সময় থাকে, তবেই আমার নতুন জামা হবে।’’

পোশাকশিল্পী অভিষেক রায়। ছবি: সংগৃহীত।

আট মাস হল মা হয়েছেন পোশাকশিল্পী পরমা গঙ্গোপাধ্যায়। তাই পুজোর আগের ব‍্যস্ততা আর ছেলের যত্নআত্তিতেই সারা দিনটা কী ভাবে চলে যাচ্ছে, বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। পুজোয় নিজের সাজগোজের বিষয়টি আপাতত পরিকল্পনার স্তরে রয়েছে। পরমা বলেন, ‘‘এত দিন আমি শুনেই এসেছি যে, মা হলে সমস্ত মনোযোগ সন্তানের দিকেই থাকে। এখন সেটা বুঝতে পারছি। কারণ যা কিছুই দেখি মনে হয় ওর জন‍্য বানাই।’’ তবে পরমা ম‍্যাজিক জানেন। শাড়ি থেকে কেটে রাখা ব্লাউজ় পিস দিয়েই ছেলেকে নানা ধরনের বাহারি জামা বানিয়ে দেন। সেখান থেকেই তাঁর মনে হয়েছে, পুরনো শাড়িগুলিকেও এ ভাবে নতুন রূপ দেওয়া যেতে পারে। তাই মা, শাশুড়ি এবং তাঁর বেশ কিছু পুরনো শাড়ি দিয়ে পুজোয় নিজের জন‍্য কিছু বানিয়ে নেবেন বলে ঠিক করেছেন। পরমা শাড়ি পরতে ভালবাসেন। তবে এ বার তিনি মা হয়েছেন। ছেলেকে সামলানোর একটা বিষয় থাকবে। তাই নতুন পোশাকের তালিকায় শাড়ির পাশাপাশি ওয়ান পিস, সালোয়ার কামিজও রাখছেন। অন্য বছরগুলিতে অবশ্য পুজোতে নিজের জন্য পোশাক বানানোর সময় থাকে না। তখন ডিজ়াইনার বন্ধুদের স্টোর থেকেই পছন্দসই পোশাক কিনে নিতেন। অন্য ডিজ়াইনারের পোশাক পরেন নাকি? ব্র্যান্ডের প্রচার হয় না? পরমা বলেন, ‘‘একদম না। কলকাতায় বাকি যাঁরা পোশাক বানাচ্ছেন, তাঁদের থেকেও কিনি। তা ছাড়া আমি এত বেশি অন্যদের জামা পরি এবং সেগুলি পরে ফেসবুকে এত ছবি দিই যে, অনেকেই আমাকে সতর্ক করেছিল। কিন্তু আমি মনে করি না যে, অন্যের জামা পরা ছবি পোস্ট করলে আমার ব্যবসা কমে যাবে।’’

Advertisement

পোশাকশিল্পী পরমা গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

একই কথা বললেন পোশাকশিল্পী অনুপম চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি আবার পরমার কাছ থেকেই পুজোয় ধুতি নেবেন বলে ঠিকও করে ফেলেছেন। এ বছর পুজোয় এখনও নিজের জন্য কিছু বানিয়ে উঠতে পারেননি। তবে নতুন পোশাক উপহার পেয়েছেন টলিপাড়ার অন্য পোশাকশিল্পীদের থেকে। শেষ পর্যন্ত কাজের চাপে নিজে যদি কিছু বানিয়ে উঠতে না পারেন, তা হলে সেগুলিই পরে নেবেন অনুপম। পোশাকশিল্পীর কথায়, ‘‘অভিষেক, তনয়, দেবারুণ, সায়ন্তন, রাজর্ষি সকলেরই তো কাজের স্বকীয়তা আছে। কেউ কারও মতো কাজ করেন না। ফলে একে অপরের থেকে পোশাক কিনে পরার মধ্যে কোনও জটিলতা থাকতেই পারে না।’’ প্রতি বছর পুজোয় নতুন জামা পরতেই হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই অনুপমের। তবে অষ্টমীর দিন বাবা-মায়ের দেওয়া নতুন ধুতি-পাঞ্জাবি পরাটা নিয়মের মতো হয়ে গিয়েছে। কবে পুজোর ব্যস্ততা শেষ করে নিজের পোশাক বানানোর কাজে হাত দিতে পারবেন, সেটা আপাতত বিশ বাঁও জলে। ঠাকুরমার থেকে প্রতি বছর একটা করে নতুন পাঞ্জাবি পেতেন তিনি। ঠাকুরমা বেঁচে নেই, তবে ভাইয়ের বৌয়ের কাছে থেকে যে জামাটা পুজোয় পান অনুপম, তাতে ঠাকুরমার অভাব খানিকটা লাঘব হয়।

পোশাকশিল্পী অনুপম চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

পুজোয় সাবেকি পোশাক পরতেই পছন্দ করেন সন্দীপ জয়সওয়াল। তবে এ বছর পুজোয় কেরল পাড়ি দিচ্ছেন পোশাকশিল্পী। তাই সেখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই পোশাকই নিজের জন্য কয়েকটি বানিয়েছেন। তবে পুজো বলে আলাদা করে নিজের জন্য কখনওই জামা বানানো হয় না। সন্দীপ জানান, ‘‘সারা বছর ধরেই হ্যান্ডলুম, লিনেন দিয়ে শার্ট, পা়ঞ্জাবি বানাতেই থাকি। ফলে পুজো এসছে বলে তাড়াহুড়ো করে নিজের জন্য কিছু বানিয়ে ফেলতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। কেরল যাচ্ছি এ বার। কেরল কটনের সঙ্গে অন্য এমব্রয়ডারি মিশিয়ে নতুন কিছু তৈরি করেছি। সে সব এখানে পরলে হয়তো লোকে তাকাবে। কিন্তু ওখানে আমি স্বচ্ছন্দে পরতে পারব। আর তা ছাড়া আমার অন্য পোশাকশিল্পী বন্ধুদের থেকেও জামা কিনেই থাকি। আমি আসলে একটা স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতায় বিশ্বাস করি। একে-অপরের থেকে পোশাক নিয়ে পরার মধ্যে একটা আলাদা আনন্দ আছে।’’

পোশাকশিল্পী সন্দীপ জয়সওয়াল। ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন