দেবীপক্ষের সূচনালগ্নে গঙ্গাবক্ষে শোরগোল। নৌকাবিহারে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং ইশা সাহা। তায় আবার রংমিলন্তি পোশাক। নায়িকা সেজেছেন গাঢ় নীল শাড়িতে। পাড়ে সাদা সুতোর কাজ। নায়কের পরনে নীল জ্যাকেট আর সাদা ধুতি। এক পাশে রবীন্দ্র সেতু তথা হাওড়া ব্রিজ, অন্য পাশে বিদ্যাসাগর সেতু। মাঝে জল, হাওয়া এবং দু’টি মানুষ।
হঠাৎই গান জুড়লেন দু’জনায়— ‘‘লাল বাজারে গলির মোড়ে পান দোকানের খরিদ্দার/ বাকের আলির আদুরে মেয়ে, নাম ছিল তার গুলবাহার, নাম ছিল তার গুলবাহার/ দেখতে ভারী চমৎকার, তুলনা যে হয় না তার/ হোসনে আরা গুলবাহার/ লা লা লা লা, লা লা লা, লা লা লা।’’
ক্যামেরা তাক করা আছে ঠিকই। কিন্তু গানের আসর বসেছে স্বেচ্ছায়, স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে। ক্যামেরা বন্ধ হওয়ার পরেও টলিউডের দুই তারকার গলায় একই গানের সুর শোনা যেতে লাগল একটানা। এক জন গানের কথা ভুললে, অন্য জন মনে করিয়ে দিলেন।
মহালয়া উপলক্ষে আনন্দবাজার ডট কম-এর জন্য সেজেছেন টলিপাড়ার অভিনেতা ও অভিনেত্রী, পরমব্রত এবং ইশা। পরনে ডিজ়াইনার অভিষেক রায়ের পোশাক। হলুদ, নীল ও লালে ঝলমল করে উঠল গঙ্গার পার। জমে গেল ভিড়। নায়ক-নায়িকার এমন সাজ থেকে চোখ সরাতে পারলেন না কেউই।
মাত্র দিন দশেক আগে পায়ের প্লাস্টার কাটা হয়েছে ইশার। যন্ত্রণা নিয়েই ফোটোশুট করতে এলেন অভিনেত্রী। এখনও পায়ের পাতায় অত জোর নেই। তার উপরে নৌকায় ওঠানামা করতে গিয়ে খানিক বেগ পেতে হচ্ছে তাঁকে। তবু অভিনেত্রীর উৎসাহে ও পরিশ্রমে কোনও খামতি নেই।
আমেরিকা থেকে ফিরেই ফোটোশুটে এসেছেন পরমব্রত। ভাল করে ঘুমও হয়নি। তার উপর বাড়িতে যে নতুন সদস্য এসেছে, তার কারণে নিদ্রা নামক অতি প্রয়োজনীয় অভ্যাসটিকে অনেক দিন আগেই পিছপা হতে হয়েছে। কিন্তু একরত্তি সন্তানের গল্প সারা ক্ষণ তাঁর মুখে। ছেলের প্রসঙ্গ উঠলেই গাল ভর্তি হাসি ফুটে উঠছে পরমব্রতের।
পুজোর আগে ‘রয় ক্যালকাটা’র পোশাকে সেজে আপ্লুত দুই তারকা। যদিও ইশা অল্প সাজেই বিশ্বাসী। হাতের সামনে গয়নাগাটির পসরা সাজানো থাকলেও তিনি সেই বিষয়ে ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নেন। হাতে, নাকে, কানে, গলায়, সব অঙ্গ গয়নায় ভরিয়ে তুলতে পছন্দ করেন না নায়িকা।
যেমন নীল শাড়ির সঙ্গে গলার হার বাদ দিয়ে কেবল ছোট কানের দুল, আংটি আর একটি মাত্র ব্রেসলেট পরতেই স্বচ্ছন্দ নায়িকা। ইশার আলগা শ্রীর নেপথ্য কারণ প্রকাশ পেল সাজগোজের সময়ে। তাঁর কথায়, ‘‘যতটুকু না হলেই নয়, ততটুকুই সাজি আমি। তাই আমার বাড়িতে গয়নাগাটির বহর সেই তুলনায় কমই।’’
পায়ে আঘাত পাওয়ার পর থেকে হাই হিল পরা বন্ধ। কিন্তু তার বদলে সাদা স্নিকার্স দিয়েই হলুদ শাড়ির সাজ সম্পূর্ণ করলেন ইশা। হলুদ জামদানি, সাদা লেসের বর্ডার দেওয়া শাড়িতে। সঙ্গে সাদা হাতকাটা ব্লাউজ়। পুজো শুরু হোক এমনই এক সাজে।
ইশার ইচ্ছে, সপ্তমীতে এমনই হালকা ক্যাজ়ুয়াল সাজে সাজবেন। তার সঙ্গে পায়ে স্নিকার্স থাকলে, পুজোয় ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ মাটি হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। কেতাদুরস্ত এবং আরামদায়ক পোশাক। সঙ্গী হোক হাতে দু’গাছা সোনার বালা, কানে দুল আর গলায় হার, হারে থাকুক সবুজের মতো যে কোনও রঙের ছোঁয়া।
পরমব্রতের পরনে হলুদ পিনটেক্স এমব্রয়ডারি করা পাঞ্জাবি। নীচে সাদা রঙের চুড়িদার পাজামা। সপ্তমীর হালকা সাজের জন্য উপযুক্ত যুগলবন্দি। নীচে বয়ে চলেছে গঙ্গা। ঝুলন্ত সেতুতে দাঁড়িয়ে চলল নায়ক-নায়িকার খুনসুটি। কখনও কখনও ইশার চুল বাঁধনহারা হয়ে সাজ নষ্ট করার ফন্দি আঁটছে, কখনও বা পরমব্রতের মশকরায় হেসে ফেলছেন নায়িকা।
অষ্টমী মানেই উৎসব তখন মধ্যগগনে। সকালে অঞ্জলি আর ভোগ খাওয়া, বিকেলে প্যান্ডেলের ভিড়ে গা ভাসিয়ে দেওয়া। তাই সাজে লাল-সাদা ছোঁয়া চাই-ই চাই। লাল ও সাদার জুটি ছাড়া সাজ অসম্পূর্ণ।
আর তাই ইশা সাজলেন সাদা এমব্রয়ডারি করা সিল্কের শাড়িতে। সঙ্গে লাল ফুলহাতা ব্লাউজ়। খোঁপায় জড়ানো জুঁই ফুল। ইশার সাবেকি সাজের সঙ্গে তাল মেলালেন পরমব্রত। লাল সাইড নেক পাঞ্জাবির সঙ্গে পরলেন ব্রোকেড ধুতি।
সাবেক সাজ, বাবুয়ানির ছোঁয়া, রাজকীয় ভাব। কিন্তু দুই বন্ধু একজোট হলে কত ক্ষণই বা গম্ভীর থাকা যায়! ইশার ছবি তোলা নষ্ট করার জন্য ঠিক সময়মতো হাজির হলেন পরমব্রত। ফ্রেমবন্দি হল ইন্ডাস্ট্রির দুই বন্ধুর খুনসুটির মুহূর্ত। হাসি-গল্প-আড্ডা, এ না হলে পুজো নাকি!
পুজোর সেরা সাজটি তোলা থাক নবমীর জন্যই। কারণ, সে দিন পুজোর পরিকল্পনাও অন্য দিনের তুলনায় একটু বেশি রোমাঞ্চকর। তাই নৌকাবিহারের জন্য নীল-সাদার ছোঁয়া উপযুক্ত। ইশার পরনে নীল অর্গ্যানজ়া শাড়ি, সাদা এমব্রয়ডারি করা পাড়ে। পরমব্রতের পরনে নীল-সাদা এমব্রয়ডারি করা জ্যাকেট, সঙ্গে সাদা ধুতি।