পোশাকশিল্পী ডিম্পল ত্যাগীর নকশা করা প্রি ড্রেপ পকেট শাড়িতে অভিনেত্রী বিদ্যা বালন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
পুজো, শাড়ি এবং বঙ্গনারীর সম্পর্ক আসলে চিরন্তন। শারদীয়ার দিনগুলিতে আর যে পোশাকই পরা হোক বা না হোক, নারীর পছন্দের তালিকায় শাড়ি কিন্তু থাকবেই। বাড়ির পুজো হোক কিংবা প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে দেবীদর্শন— পুজোর ক’দিন নারীর চাই রকমারি শাড়ি। কাঞ্জিভরম, পৈঠানি, ইক্কত, বেনারসির কদর থাকলেও ইদানীং কিন্তু তরুণীদের পছন্দের তালিকায় প্রথম দিকে থাকে মল কটন, শিফন, জর্জেট, ডোলা সিল্কের মতো ‘বডি হাগিং’ শাড়ি। কারণ একটাই, স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে কোনও রকম আপস করতে নারাজ তাঁরা।
পরতে ভালবাসলেও অনেকেই আবার মনে করেন শাড়ি পরার ঝক্কি অনেক। সেই মুশকিল আসান করতে বাজারে এল ‘প্রি-ড্রেপ’ শাড়ি, অর্থাৎ আাঁচল, কুঁচি করার ঝামেলা নেই, স্কার্টের মতো গলিয়ে নিলেই হল। কথায় বলে না ‘যত পাই, তত চাই’। স্বাচ্ছন্দ্যও খানিকটা সে রকম। ট্রাউজ়ার, জিন্স পরার একটা সুবিধা হল, তাতে পকেট থাকে। শাড়িতেও যদি সেই সুবিধা পাওয়া যায়, তা হলে কেমন হয়? মশকরা নয়, এ বারের পুজোয় শাড়ির বাজারে নতুন সংযোজন ‘পকেট শাড়ি’।
পকেট শাড়ি এ বছরই যে বাজারে এসেছে, এমন নয়। ২০১৯ সালে বলিউড নায়িকা বিদ্যা বালনের পরনে দেখা গিয়েছে পোশাকশিল্পী ডিম্পল ত্যাগীর নকশা করা প্রি ড্রেপ পকেট শাড়ি। ২০১৮ সালে শাড়িতে পকেট তৈরি করা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন ডিম্পল ত্যাগী। পোশাকশিল্পী বলেন, ‘‘পকেটের ব্যবহার শাড়িতে নতুন স্টাইল স্টেটমেন্ট যোগ করেছে।’’
পোশাকশিল্পী মাসাবা গুপ্তর নকশা করা পকেট শাড়ি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
পোশাকশিল্পী মাসাবা গুপ্তও বেশ কিছু বছর ধরে পকেট শাড়ি নিয়ে নানা রকম কাজ করেছেন। তাঁর নকশা করা পকেট শাড়ি পরে র্যাম্পে হেঁটেছেন মডেলরা। তবে নায়িকা, মডেলদের গণ্ডি পেরিয়ে ধীরে ধীরে সাধারণ ঘরের মহিলাদের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে এই পকেট শাড়ি। ২০২৫ সালের দুর্গাপুজোয় এই শাড়ির চাহিদা বেশ বেড়েছে।
২০১৯ সালে রে়ডি টু ওয়্যার পকেট শাড়ি বাজারে আনে ‘অসীম শক্তি’ নামক এক সংস্থা। মল কটন আর অরগ্যানজ়ার রেডি টু ওয়্যার পকেট শাড়ির যাত্রা শুরু হলেও এখন চাহিদার কারণে সিল্ক শাড়িতেও পকেটের সংযোজন শুরু করেছে সংস্থা।
নয়া প্রজন্মের নয়া পছন্দ পকেট শাড়ি। ছবি: উৎসব বুটিক।
মা দুর্গার মতো দশটি হাত নেই। দু’টি হাতেই অফিস-বাড়ি-সংসারের হাজার রকমের কাজ সামলাতে হয় নারীদের। সেই কাজ সহজ করতে সাহায্য করবে পকেট শাড়ি। উৎসব বুটিক জানাচ্ছে, পকেট তাঁদের কাছে নারীর ক্ষমতায়নের মতো। পকেট নিজে অস্ত্র না-ই হতে পারে, কিন্তু অস্ত্র রাখতে সাহায্য তো করতে পারে (কে না জানে, এই জমানায় তা কতখানি জরুরি)। দশহাতে করার কাজকে দু’হাতে সম্পন্ন করতেও সাহায্য করে পকেট। নারীশক্তিকে উদ্যাপনের উৎসবে তাই উৎসব শাড়িতে জুড়েছে সুতোর কাজ করা নকশি পকেট। তবে প্রি ড্রেপ শাড়িতে নয়, উৎসব-এর পকেট শাড়িতে শাড়ি তার নিজের মতো থেকেই পেয়েছে তার পকেটকে।
প্রয়োজনও মিটবে আর স্টাইলও হবে, পরনে যদি থাকে পকেট শাড়ি। ছবি: সুতা।
এ বছর সুতা বুটিকের পুজোর শাড়ির সম্ভারেও নজর কেড়েছে এই পকেট শাড়ি। প্রথম ঝলকে দেখে গাউন মনে হলেও সেগুলি আদ্যোপান্ত সুতির শাড়ি। সুতা-র কর্ণধার তানিয়া বিশ্বাস বলেন, ‘‘শাড়ি পরতে ইচ্ছে করলেও সময়ের অভাবে অনেকেই মন বদলে ফেলেন। শাড়ি পরতে যাঁরা অভ্যস্ত নন, তাঁদের কাছে ১২ হাতের কাপড় সামলানো খানিকটা চ্যালেঞ্জের মতোই। সেই সব ঝঞ্ঝাট এড়িয়ে শাড়ি পরার ব্যবস্থাই করেছে সুতা। তৈরি করেছে শাড়ি গাউন। কুঁচি-আঁচল করার কোনও রকম ঝক্কি নেই, কেবল গলিয়ে নিলেই হল। এই শাড়ির বাড়তি পাওনা হল পকেট। স্বাচ্ছন্দ্যের পাশাপাশি প্রয়োজনের দিকটাও মাথায় রাখা হয়েছে।’’
পুজোয় সাবেকিয়ানা আর স্বাচ্ছন্দ্যের মিশেলে এই ধরনের পকেট শাড়িতেই আপনিও হয়ে উঠতে পারেন অনন্যা। ডিজ়াইনার বুটিক ছাড়াও অ্যামাজ়ন, মিন্ত্রার মতো অনলাইন শপিং ওয়েবসাইটেও এখন পকেট শাড়ির রকমারি সম্ভার চোখে পড়বে। সেগুলির দামও খুব বেশি নয়। যদিও কলকাতার গড়িয়াহাট, হাতিবাগান, কলেজ স্ট্রিটের নামীদামি শাড়ির দোকানগুলিতে এমন শাড়ি খুঁজতে গেলে আপনাকে হতাশ হতে হবে।