বার্ড ফ্লু ভাইরাসের বিরল রূপে মৃত্যু, কতটা ভয়ের? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বার্ড ফ্লু ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমেরিকার ওয়াশিংটনের এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে বার্ড ফ্লু-তে। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর তথ্য অনুসারে বার্ড ফ্লু ভাইরাসেরই এক বিরল উপরূপের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, সেই উপরূপটির কারণেই মৃত্যু ঘটেছে। মানুষের শরীরে বার্ড ফ্লু তেমন ভাবে প্রভাব ফেলতে পারবে না বলেই এত দিন মনে করতেন চিকিৎসকেরা। তবে এই ঘটনায় কি আতঙ্ক বাড়ল?
ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের গবেষকেরা বার্ড ফ্লু বা অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের নতুন উপরূপটিকে চিহ্নিত করেছেন, এর নাম এইচ৫এন৫। এর আগে আমেরিকায় শুধু নয়, ভারতেও বার্ড ফ্লু-তে আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল, যাঁদের শরীরে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার এইচ৫এন১ রূপটিকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এ বছরই এপ্রিলে অন্ধ্রপ্রদেশে এক শিশুকন্যার মৃত্যুও হয় বার্ড ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। মেয়েটির শরীরেও এইচ৫এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের স্ট্রেনই পাওয়া যায়। তবে এইচ৫এন৫ উপরূপটি নতুন বলেই জানাচ্ছেন গবেষকেরা। মানুষের শরীরে এই উপরূপের খোঁজ আগে পাওয়া যায়নি।
‘বার্ড ফ্লু’ ভাইরাস প্রচণ্ড ছোঁয়াচে, তাতে কোনও সন্দেহই নেই। খামারে একটি হাঁস বা মুরগির শরীরে ভাইরাস ঢুকলে, কিছু দিনেই খামারের পর খামারে মড়ক লেগে যায়। আবার পরিযায়ী পাখিরাও দূর দেশ থেকে ভাইরাস বয়ে নিয়ে আসে। তাদের সংস্পর্শে এসেও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই এই বিষয়ে বলেন, বার্ড ফ্লু আসলে হল ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। আর মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্ত হয়ই। কাজেই বার্ড ফ্লু-তে আক্রান্ত পাখির সংস্পর্শে এলে মানুষের শরীরেও ভাইরাস ঢুকতে পারে যে কোনও সময়ে। এক জন মানুষের শরীরে ভাইরাস ঢুকলে, তার থেকে আরও পাঁচজনের সংক্রমণ ছড়াতে পারে। আক্রান্তের হাঁচি, কাশি, থুতু-লালা, মলমূত্রের মাধ্যমে সুস্থ মানুষের শরীরেও চট করে ঢুকে যেতে পারে ভাইরাস।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
হাঁস-মুরগির খামারে যাঁরা কাজ করেন, পশুরোগ চিকিৎসক, বাড়িতে পোষা পাখি আছে যাঁদের, তাঁদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। আক্রান্ত পাখির দেহাবশেষ, মলমূত্র থেকে ভাইরাস দ্রুত ছড়াতে পারে। কোথাও পোলট্রির মুরগি অস্বাভাবিক কারণে মারা গেলে বা কোনও বন্য পাখির অস্বাভাবিক কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে দেরি না করে প্রাণীসম্পদ ও জনস্বাস্থ্য দফতরে জানানো জরুরি। মৃত পাখির সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের উপরেও নজর রাখতে হবে। মানুষের শরীরে ভাইরাস ঢুকলে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই উপসর্গ দেখা দেবে। নাক-মুখ দিয়ে জল পড়া, হাঁচি-কাশি, গায়ে-হাত পায়ে ব্যথা হবে। জ্বর আসবে। শ্বাসের সমস্যা হতে পারে। গলায় ব্যথাও হতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে নিউমোনিয়ার লক্ষণও দেখা দিতে পারে। এই সব লক্ষণ যদি দেখা দেয়, তা হলে ভাইরাল প্যানেল টেস্ট করিয়ে নিতে হবে। চিকিৎসক যদি বোঝেন, শরীরে ভাইরাসের স্ট্রেন রয়েছে, তা হলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা শুরু হবে।