Cancer

সঠিক সময়ে ধরা পড়লে আটকানো যায় ব্লাডার ক্যানসার, জেনে নিন উপসর্গ

কিছু বদ অভ্যাস ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা ক্যানসার ডেকে আনতে সাহায্য করে। তামাক সেবন সহ লাইফস্টাইলের আমূল পরিবর্তনের ফলে বাড়ছে ব্লাডার বা মূত্রথলির ক্যানসার।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:০২
Share:

ব্লাডার ক্যানসার। ছবি—শাটারস্টক।

ভারতে প্রতি ৯ জন মানুষের ১ জন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। যদিও এই অসুখের সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এখনও বিশ বাঁও জলে, কিন্তু দেখা গেছে কিছু বদ অভ্যাস ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা ক্যানসার ডেকে আনতে সাহায্য করে। তামাক, তা সে যে কোনও ভাবেই শরীরে যাক না কেন, তাকে ক্যানসার উদ্দীপক বলে মনে করা হয়। তামাক সেবন সহ লাইফস্টাইলের আমূল পরিবর্তনের ফলে বাড়ছে ব্লাডার বা মূত্রথলির ক্যানসার। যদিও ক্যানসার বয়সের তোয়াক্কা করে না, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ৫৫ উত্তীর্ণদের মধ্যে ব্লাডার ক্যানসার বেশি দেখা যায়, বললেন চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা ক্যানসার সার্জন জয়ন্ত চক্রবর্তী।

Advertisement

বয়স বাড়ার সঙ্গে মূত্রথলির ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। তবে রিস্ক ফ্যাক্টর থাকলে বয়স বাড়লে ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মূত্রথলির কর্কট রোগের অন্যতম রিস্ক ফ্যাক্টর ধূমপান। তামাকের নেশা মুত্রথলির ক্যানসারের ঝুঁকি অ-ধূমপায়ীদের থেকে ৪–৭ গুণ বেশি। এ ছাড়া যাঁদের ক্রনিক প্রস্রাবের সংক্রমণ হয়, তাঁদের এই ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক বেশি বলে জানালেন জয়ন্ত চক্রবর্তী।

আর্সেনিক যুক্ত জলপান করলেও মুত্রথলির ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে এই ক্যানসারের প্রবণতা প্রায় ৪ গুণ বেশি। অন্যান্য অসুখের মতো শুরুতে চিকিৎসা করালে ব্লাডার ক্যানসারের বাড়বৃদ্ধি আটকে দিয়ে রোগীকে প্রায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়। তবে তার জন্যে শুরুতেই সতর্ক হতে হয়। প্রাথমিক উপসর্গ দেখা গেলে দ্রুত সঠিক চিকিৎসার সাহায্য নিয়ে অসুখ নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।

Advertisement

আরও পড়ুন : কিছু খোলা, কিছু চাপা পোশাকে শীতে উষ্ণ হয়ে উঠবেন কী ভাবে?

ক্যানসারের প্রাথমিক উপসর্গ সম্পর্কে সচেতন থাকলে রোগের শুরতেই ডাক্তার দেখিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো উচিত বলে জয়ন্তর পরামর্শ। অসুখের শুরুতে বার বার বাথরুমে দৌড়তে হয়। বিশেষ করে রাতে বহু বার প্রস্রাব পায়, কিন্তু প্রস্রাব হয় না, আটকে যায়। অনেকটা প্রস্টেটের অসুখের মতোই উপসর্গ। প্রৌঢ়রা অনেক সময় ব্লাডার ক্যানসারকে প্রস্টেটের সমস্যা ভেবে খুব একটা আমল দেন না। এর ফলে রোগ ক্রমশ বেড়ে যায়। প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত দেখা যেতে পারে বা কালচে প্রস্রাব হতে পারে ও জ্বালা করে। এক দিকের কোমরে ব্যথা হতে পারে। এই ধরনের উপসর্গ দেখা গেলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে বলে জানালেন ইউরোলজিস্ট অমিত ঘোষ। মেডিক্যাল হিস্ট্রি ও ডিজিটাল রেক্টাল এগজামিনেশন করে সন্দেহ হলে ইউরিন অ্যানালিসিস, ইউরিন সাইটোলজি, ইউরিন কালচার টিউমার মার্কার টেস্ট, সিস্টোস্কোপি এবং প্রয়োজন হলে ইন্টারভেনাস পাইলোগ্রাম, সিটি ইউরোগ্রাম, সিটি গাইডেড নিডল বায়োপ্সি, বোন স্ক্যান ও এমআরআই করা দরকার, বললেন জয়ন্ত চক্রবর্তী।

মূত্রথলির ক্যানসার প্রথমে অ্যাটাক করে ব্লাডারের ভিতরের দিকের লাইনিংয়ের কোষকে। তখন থেকেই প্রস্রাব সংক্রান্ত অসুবিধে শুরু হয়। এই সময় থেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা শুরু করালে রোগটাকে আটকে দেওয়া কঠিন নয়। অন্য দিকে, সেলফ মেডিকেশন করতে গিয়ে অসুখ বেড়ে গেলে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়লে সেই অর্থে কিছু করার থাকে না। আসলে ইউরিন ইনফেকশন ভেবে ওষুধ খেয়েও যখন উপসর্গ বাড়তে থাকে, তখন বুঝতে হবে ক্যানসার অনেকটাই ছড়িয়ে গেছে।

অসুখ শুরুতে ধরা পড়লে সার্জারি, রেডিয়োথেরাপি ও কেমোথেরাপি করে ব্লাডার ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সুপারফিসিয়াল টিউমার হলে এন্ডোস্কোপিক সার্জারির সাহায্যে টিউমার বের করে দেওয়া হয়। অন্য দিকে ব্লাডারের মধ্য বড় টিউমার থাকলে সম্পূর্ণ ব্লাডার বাদ দিয়ে কৃত্রিম ব্লাডার তৈরি করে প্রতিস্থাপন করা হয়। অবশ্য এই পদ্ধতি ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শরীরের বাইরে ইউরিনের ব্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময় পর পর ব্যাগ বদলে ফেলতে হয় ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হয়। নইলে সংক্রমণের ভয় থাকে।

আরও পড়ুন : ইচ্ছে মতো রোগা হতে ওয়র্ম ডায়েট কতটা সুরক্ষিত

ইদানীং মিনিম্যালি ইনভেসিভ সার্জারি ও রোবোটিক সার্জারির সাহায্যে অত্যন্ত স্বল্প রক্তপাতে রোগীকে দ্রুত সুস্থ করে তোলা হচ্ছে। তাই সার্জারির ভয়ে অযথা অসুখ পুষে না রেখে বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেওয়া উচিত বলে পরামর্শ দিলেন অমিত ঘোষ। সার্জারি ও ইন্ট্রাভেসিক্যাল থেরাপির পাশাপাশি ব্লাডার ক্যানসারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি, ইমিউনো থেরাপি ও টার্গেটেড থেরাপি করে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় বলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ।

জয়ন্ত চক্রবর্তী জানালেন যে, ইউরোলজিস্ট, রেডিয়েশন অঙ্কোলজিস্ট এবং মেডিক্যাল অঙ্কোলজিস্টদের তত্ত্বাবধানে ব্লাডার ক্যানসারের চিকিৎসা করা হয়। অন্যান্য কিছু অসুখের মতো ব্লাডার ক্যানসার আবারও ফিরে আসতে পারে। তাই নিয়মিত এক্সারসাইজ করে ওজন ঠিক রাখার পাশাপাশি পর্যাপ্ত টাটকা শাক সব্জি ও ফল খাওয়া উচিত। ধূমপান না ছাড়লে ক্যানসার ফিরে আসার ঝুঁকি অনেক বেশি। প্রসেস করা মাংস, বিশেষ করে রেড মিট (সসেজ, সালামি ইত্যাদি) বেশি খেলে ক্যানসার ফিরে আসতে পারে। কেন না প্রসেসড মাংসে থাকা নাইট্রেট ও নাইট্রাইট, পলিসাইক্লিক অ্যামিনস, হেটেরোসাইক্লিক অ্যামিনস ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ক্যানসার মুক্ত হওয়ার পরেও নির্দিষ্ট সময় অন্তর ফলো আপ করানো উচিত। সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন, পর্যাপ্ত জলপান ক্যানসার সহ অনেক অসুখকে আটকে দিতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন