নিয়োগের আগে কি চাই মানসিকতা যাচাই?

কিছু দিন আগেই গুরুগ্রামের এক স্কুলছাত্রের খুনের ঘটনার পরে প্রত্যেক শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীর সাইকোমেট্রিক পরীক্ষার নির্দেশ জারির কথা তুলেছিল সিবিএসই। সে সময়ে বহু স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফেই এর বিরোধিতা করা হয়েছিল।

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:২২
Share:

নিয়োগের সময়েই কি জেনে নিতে হবে সহকর্মীর মনটা? কোন বিষয়ে কেমন ভাবনা তাঁর, জেনে নিলে কি ভাল হয় কোনও পরীক্ষার মাধ্যমে? সম্প্রতি জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশনে ঘটে যাওয়া এক অতি অপ্রীতিকর ঘটনার প্রেক্ষিতে এমনই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই।

Advertisement

প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগেই গুরুগ্রামের এক স্কুলছাত্রের খুনের ঘটনার পরে প্রত্যেক শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীর সাইকোমেট্রিক পরীক্ষার নির্দেশ জারির কথা তুলেছিল সিবিএসই। সে সময়ে বহু স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফেই এর বিরোধিতা করা হয়েছিল। এ বার শহরেরই এক স্কুলে দুই শিক্ষকের হাতে চার বছরের পড়ুয়ার যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় আবারও ফিরে এসেছে শিক্ষক নিয়োগের সময়ে কোনও চাকরিপ্রার্থীর মন বুঝে নেওয়ার প্রসঙ্গ। ইতিমধ্যেই দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সংস্থায় কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে শুরু করা হয়েছে সাইকোমেট্রিক পরীক্ষায়। এ দেশেও কিছু কিছু বেসরকারি এবং সরকারি সংস্থায় নিয়োগের সময়ে নেওয়া হচ্ছে মনোবিদদের সাহায্য। কখনও কখনও চাকরিপ্রার্থীদের বসতে হচ্ছে সাইকোমেট্রিক পরীক্ষাতেও। যা দিয়ে বিচার করা হচ্ছে তাঁর আচরণ এবং মানসিকতা। তবে এখনও এ দেশে সর্বত্র চালু হয়নি এ ব্যবস্থা। বিশেষ করে স্কুল-কলেজে নিয়োগের ক্ষেত্রে খুব কমই চোখে পড়ে এই পদ্ধতি।

আরও পড়ুন: শৈশবে হেনস্থার মাসুল কি দিতে হয় আজীবন

Advertisement

অথচ পড়ানোর ক্ষেত্রে শিক্ষকের মন কিছুটা বুঝে নেওয়া আরও বেশি প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন মনোবিদেরা। শিশু মনোবিদ বহ্নিশিখা ভট্টাচার্যের যেমন মত, এক জন মানুষ কবে-কী ভুল করতে পারেন, তা না বোঝা গেলেও তাঁর চারিত্রিক গঠনের কিছুটা তো বুঝে নেওয়া যায় সাইকোমেট্রিক পরীক্ষায়। তিনি বলেন, ‘‘কেউ খুব ভাল পড়াতেই পারেন, কিন্তু তিনি হয়তো খুব অল্পেই হিংস্র হয়ে ওঠেন। তেমন মানুষ তো কখনওই কোনও স্কুলে শিক্ষক হিসেবে ভাল হবেন না। সেটুকু তো পরীক্ষা করে দেখে নেওয়াই যায় নিয়োগের আগে।’’

কিন্তু আদৌ কি এ ভাবে ধরা পড়বে কোনও মানুষের বিকৃতি? প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞ মহলেরই কেউ কেউ। শহরের অভিজ্ঞ মনোবিদদের একাংশ স্পষ্ট জানাচ্ছেন, কেউ ভবিষ্যতে কোনও অপরাধ করবেন কি না, তা সাইকোমেট্রিক পরীক্ষার মাধ্যমে কোনও ভাবেই জেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু যতটুকু জানা যায়, তা-ও কম নয়। এক জন চাকরি প্রার্থীর মানসিক কাঠামো কেমন, সাধারণ দৈনন্দিন বিষয়ে তাঁর ভাবনা কী, এর কিছুটা ধরা পড়ে সেই পরীক্ষায়।

মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ তুষার বসু যেমন জানান, ইতিমধ্যেই কিছু কিছু কর্পোরেট সংস্থায় চাকরি প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব পরীক্ষা করা হয় এমন পদ্ধতিতে। কিছু ক্ষেত্রে ইমোশনাল কোশেন্টও দেখা হয় এ ভাবে। তবে দীর্ঘ দিন এই নিয়োগ পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাঁর অভিজ্ঞতা বলছে, কোনও পরীক্ষাই একশো শতাংশ নির্ভুল নয়।

তা হলে এই পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা কী? এক বহুজাতিক সংস্থার মানবসম্পদ বিভাগের কর্তা জর্জ টমাসের বক্তব্য, কোনও কর্মীর মধ্যে কোন ধরনের কাজের ক্ষমতা বেশি, সেটুকু বুঝে নিতে পারাও কম কথা নয়। তাই জন্যই এই পরীক্ষা নেওয়ার চল রয়েছে তাঁদের সংস্থায়। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের শিক্ষক লীনা চট্টোপাধ্যায় আবার জানান, কোনও মানুষের মানসিক পরিস্থিতি বুঝতে আরও নানা কৌশল রয়েছে। সাইকোমেট্রিক পরীক্ষার পাশাপাশি স্কুলগুলিতে তেমন ধরনের পরীক্ষাও চালু করা যায়। তাতে এক জন মানুষকে আরও কিছুটা বুঝে নেওয়া হয়তো যাবে। যেমন কপোর্রেট সংস্থায় ইন-বাস্কেট পরীক্ষা হয়, তেমন কোনও পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় স্কুল-কলেজে নিয়োগের ক্ষেত্রেও।

তবে আগে যখন এই প্রসঙ্গ উঠেছিল, তখন রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ। নিজেদের শহরে এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটার পরে কী মনে করছেন তাঁরা?

সিআইএসসিই অনুমোদিত শহরের একটি নামী স্কুলের তরফে সুপ্রিয় ধর যেমন গুরুত্ব দিতে রাজি নিরাপত্তার দিকটিতে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুরনো শিক্ষকদের নতুন করে পরীক্ষা করার পক্ষে আমি নই, তবে নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও একটু সতর্ক হতে ক্ষতি কী?’’ কিন্তু এই ভেদাভেদেই আপত্তি দক্ষিণ কলকাতায় সিবিএসই অনুমোদিত এক স্কুলের অধ্যক্ষা অঞ্জনা সাহার। তিনি বলেন, ‘‘কাউকে পরীক্ষা করা হবে আর বাকিরা ছাড় পাবেন, এটা ঠিক নয়। বরং কর্তৃপক্ষ আরও সতর্ক হয়ে নিয়োগ এবং স্কুল চালনায় মন দিলেই এই সংক্রান্ত সমস্যা অনেকটা এড়ানো যাবে।’’ এমনই নানা বিতর্কে এখনও আটকে সর্ব স্তরে সাইকোমেট্রিক পরীক্ষার সাহায্য নেওয়ার ভাবনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন