Bhai dooj

Bhai Dooj 2021: করোনার দুয়ারে পড়ল কাঁটা

ভাইফোঁটা দেওয়ার সময়ে রীতিনীতির সঙ্গে করোনাবিধির সমতা রাখার কৌশলগুলি জেনে নিন

Advertisement

চিরশ্রী মজুমদার 

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২১ ০৯:০৩
Share:

এখনও বহু মণ্ডপই আলো করে দাঁড়িয়ে আছেন কালীপ্রতিমা, সকালের হালকা ঠান্ডায় মিশে আছে ধুনোর গন্ধ। কাল সুস্বাদু ভোগপ্রসাদ খেয়েই যথেষ্ট ওয়ার্মআপ হয়ে গিয়েছে, পেটমহাশয় আজ চর্ব্যচোষ্যলেহ্যপেয় ভোজনের জন্য প্রস্তুত। আহা! আজ ভাইফোঁটা বলে কথা! নিশ্চয়ই আপনার ভাই বা বোনের বাড়ি জম্পেশ নেমন্তন্ন? কিংবা আপনিই পারিবারিক পঙ্‌ক্তিভোজনের উদ্যোগটি নিজের কাঁধে নিয়েছেন? যা-ই হোক, নিজেদের ভাইফোঁটার আয়োজনে আবার করোনাভাইরাসকে নেমন্তন্ন করে বসবেন না যেন। আজ একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, ফোঁটা দেওয়া, উপহার আদানপ্রদান হবে। এই ভাইরাস তো এমন সুযোগেরই সন্ধানে থাকে। তায় পুজোয় নানা বিধিনিষেধ ভাঙার জেরে তার দাপট আবার বেড়েছে। তাই তাকে এড়িয়ে চলার ব্যবস্থাটা পাকা করেই ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানের প্ল্যান করতে হবে। আপনাদের সহায়তার জন্য কয়েকটা জরুরি পরামর্শ সাজিয়ে দিলাম।

Advertisement

ফোঁটা দিতে গেলে

আজ ভাই-বোনের মধ্যে ফোঁটা দেওয়া, গিফট নেওয়া হবে। নিকটজনের স্নেহ, আশীর্বাদের পরশ লাগবে। অর্থাৎ মানুষের কাছাকাছি আসার, একসঙ্গে বেঁধে বেঁধে থাকার উৎসব। এই রীতিনীতির সঙ্গে করোনাবিধির সাম্য বজায়ের পরামর্শ দিলেন মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। বললেন, ‘‘ফোঁটা দেওয়া, কাছাকাছি থাকা, শাঁখ বাজানোর সময়ে নিজেদের মধ্যে ‘কনট্যাক্ট পিরিয়ড’ কম রাখুন। পাঁচ-দশ মিনিটের মধ্যে এই রীতিনীতি সম্পূর্ণ করে নিন। পনেরো মিনিটের বেশি কাছাকাছি থাকবেন না।’’

Advertisement

যত বার অন্যের কনট্যাক্টে আসছেন, তার আগে ও পরে সাবান দিয়ে রগড়ে হাত-মুখ ধোবেন। অনুষ্ঠানের আগে এবং অতিথিরা চলে যাওয়ার পরে ঘর-বাড়ি স্যানিটাইজ় করবেন। অনেকেই হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ারের পাশাপাশি সারফেস ক্লিনারও রাখেন। বাইরে কোথাও গেলে, কিছুতে হাত দেওয়ার আগে বা কোথাও বসার আগে জায়গাটা স্যানিটাইজ় করে নেন। এটাও ভাল অভ্যেস। তবে প্রদীপের কাছাকাছি স্যানিটাইজ়ার রাখবেন না।

ঘি-চন্দনের বাটি, প্রদীপ, দূর্বার থালাও কিন্তু প্রত্যেকের জন্য আলাদা হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

ছাদে বা বাগানে খাওয়াদাওয়া

অনেক বাড়িতেই ছাদে বা উঠোনে ম্যারাপ বেঁধে নিজের আত্মীয়স্বজন, পাড়াতুতো ভাইবোনদের ডেকে ভাইফোঁটায় হইচই করে খাওয়াদাওয়ার চল আছে। এ বছরও এমন জমায়েত বর্জনীয়। খুব ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের নিয়ে খাওয়াদাওয়া করুন। তবে বদ্ধ জায়গায় একসঙ্গে বসার বা খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করবেন না। এসি চালাবেন না। খোলামেলা জায়গায় বসুন, জানালা-দরজা খুলে রাখুন, হাওয়া বাতাস খেলুক। ডা. তালুকদার বললেন, কলকাতায় অনেক বাড়িতেই বড় জায়গা, ছাদ, বাগান ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে। সেখানে একটু দূরত্ব রেখে চেয়ার সাজাতে পারেন। খাওয়ার ব্যবস্থাটা বুফের মতো হোক। এক এক বারে দু’জন তিন জন করে খাওয়ার ব্যবস্থা করা যায়। এতে একসঙ্গে সকলকে মাস্ক খুলতে হবে না।’’

অনুষ্ঠান বাড়িতেই হোক। রেস্তরাঁয় গিয়ে খাওয়াদাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করুন। এতে মাস্কহীন অবস্থায় বদ্ধ পরিবেশে অনেক অচেনা মানুষের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা থাকে। ঝুঁকি বাড়ে। বরং রেস্তরাঁ থেকে হোম ডেলিভারি আনিয়ে নেওয়া নিরাপদ। তবে বাইরের খাবার আনলে প্যাকেট ফেলে দিয়ে, ভাল করে গরম করে পরিষ্কার পাত্রে রেখে খান।

দু’ডোজ় টিকা নিয়ে রাখলেও করোনাবিধিতে ঢিলে দেবেন না। নিজের আত্মীয়স্বজনের মধ্যে আছি, এটাও একটা বাবল মনে করে মাস্ক খুলে পকেট বা ব্যাগে রাখবেন না। শুধু খাওয়ার সময় মুখাবরণী খুলুন। কেউ অন্য সময়ে মাস্ক খুললে, তাঁকে সেটা পরে নিতে অনুরোধ করুন। সার্জিক্যাল মাস্কগুলি বেশিক্ষণ পরে থাকতে এমন কিছু কষ্ট হয় না।

দেওয়ানেওয়া, হুল্লোড়ের সময়

কাগজে ভাইরাস থাকতে পারে না বলেই বিজ্ঞানীদের মত। ফলে কাগজে মোড়া উপহার দেওয়া নিরাপদ। উপহার নিয়ে একটু দূরে বা পাশের ঘরে চলে যান। এই সময়টা কিন্তু বই উপহার দেওয়ার জন্য আদর্শ। এই উপহার আলাদা করে স্যানিটাইজ় করার দরকার পড়ে না।

টিকার দুটো ডোজ় হলেও বয়স্করা সাবধানে থাকবেন। কোনও অবস্থাতেই মাস্ক খুলবেন না। বয়স্করা একা বা দূরে দূরে খেতে বসলে ভাল হয়।

বাচ্চাদেরও সাবধানে রাখুন। ওরা একসঙ্গে থাকলে খেলাধুলো করতে চাইবে। এমন খেলায় উৎসাহ দিন যেখানে কাছাকাছি আসার দরকার নেই। যেমন অন্তাক্ষরী, ডাম্ব শারাডস। এতে হুল্লোড় হবে, কিন্তু নিরাপত্তাও থাকবে। তবে মাস্ক খোলা চলবে না।

জ্বর জ্বর ভাব, গা হাত পা ব্যথা হলেও ঠান্ডা লেগেছে ভেবে অবহেলা করবেন না। দুটো টিকা নিলে বা অনেক ক্ষেত্রেই করোনার উপসর্গ খুব সামান্য হয় অথবা একেবারেই থাকে না। সতর্ক থাকুন, দরকারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শরীরে সামান্য অস্বস্তি থাকলেও আত্মীয়বাড়ি গিয়ে সামনাসামনি ভাইফোঁটা পালনের দরকার নেই। আপাতত ভার্চুয়ালি ফোঁটা সারুন। সুস্থ হলে পরে সুদে আসলে আনন্দ উসুল করা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন