সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত এক শিশুর মৃত্যু হল শিলিগুড়িতে। শনিবার সকালে প্রধাননগরের একটি নার্সিংহোমে ৬ বছরের ওই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন শিশুটি ফুসফুসে পুঁজ জমে গিয়েছিল। এবং বিশেষ ধরণের একটি নিমোনিয়াতেও ভুগছিল সে। শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসেবেও একাধিক জটিল রোগের কথা লেখা রয়েছে। শিশুটির মৃত্যু সংক্রান্ত রিপোর্ট দার্জিলিং জেলা স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে নার্সিংহোমের তরফে জানানো হয়েছে। ভক্তিনগরের বাসিন্দা ৬ বছরের শিশুকন্যাকে জ্বর এবং বুকে ব্যাথার কারণে গত ৩ মার্চ নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়।
সোয়াইন ফ্লুর উপসর্গ থাকায় সোয়াব পরীক্ষাও করা হয়। সেই রিপোর্টে শিশুটি সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত বলে জানানো হয়। নার্সিংহোমের তরফে দাবি করা হয়েছে, সোয়াইন ফ্লুর যে ওষুধের ‘কোর্স’ রয়েছে, তাও শিশুটিকে প্রয়োগ করা হয়েছিল। গত ৭ মার্চ পরীক্ষার রিপোর্ট নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের হাতে এসেছিল। শিশুর দেখভাল দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক সিপি শর্মার কথায়, “শিশুটি একাধিক জটিলতায় ভুগছিল। ওর বুকে পুঁজ জমে ছিল, ফুসফুসে সমস্যা ছিল। সেই সঙ্গে বিশেষ ধরণের নিমোনিয়াও ছিল। সোয়াইন ফ্লুর রিপোর্ট আসার পরে সেই মতো চিকিৎসা করা হয়েছিল। একটি শিশুর শরীরে এত জটিলতা তৈরি হওয়ায় সমস্যা হয়েছিল।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, শিশুর শরীরে সোয়াইন ফ্লুর সংক্রমণ পাওয়ার পরেই নার্সিংহোমের তরফে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল। কী ভাবে শিশুটির সংক্রমণ হল তা জানার চেষ্টা চলছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। এ দিকে সোয়াইন ফ্লুতে মৃত্যুর খবরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শিলিগুড়িতে। শিশু মৃত্যুর খবর পেয়ে, শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যও খোঁজখবর করেছেন। বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান চিকিৎসক রুদ্রবাবু বলেন, “পুরো রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।”
এদিকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের সুপার এবং অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বদলির ঘটনাকে ঘিরে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। ক্ষুব্ধ চিকিৎসক-কর্মীদের অনেকেই মনে করছেন, সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে যখন জোরকদমে কাজ চলছে, সেই সময়ে প্রশাসনের কর্তাকে বদলি করায় নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইতিমধ্যে সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে তিনজন সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা চলছে। তাঁদের মধ্যে দুজন হাসপাতালের চিকিৎসক। রোগীর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, সুপার যে ‘টিমওয়ার্ক’ করে সোয়াইন ফ্লু পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঝাঁপিয়েছিলেন সেটা কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে। সোয়াইন ফ্লু আক্রান্ত চিকিৎসকদের ভুমিকার জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে সুপার সহ দুই চিকিৎসককে শোকজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সুপারের বদলি হয়।
ওই বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি সদ্য বদলির নির্দেশ প্রাপ্ত সদর হাসপাতাল সুপার পার্থ দে। তাঁর সংক্ষিপ্ত উত্তর, “কিছু বলব না।”শনিবার তিনি তাঁর দফতরে বসেও কাজ করেছেন। পার্থ বাবুর জায়গায় আসছেন দার্জিলিং জেলা হাসপাতালের সুপার সৈকত প্রধান। স্বাস্থ্য কর্মীদের একাংশ এদিন প্রশ্ন তুলেছেন, মাত্র সাত মাস আগে পার্থবাবু সুপারের দায়িত্ব নিয়ে সদর হাসপাতালে আসেন। এত অল্প সময়ের মধ্যে বদলির নির্দেশ তাঁদের অস্বাভাবিক ঠেকছে। যদিও প্রোগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি তথা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুশান্ত রায় বলেন, “মোট ৬৫ জনের বদলির নির্দেশ বার হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের সুপার এবং অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাঁদের অন্যতম কোনও একজন স্বাস্থ্য কর্তা বদলি হলে কাজের সমস্যা হয় না। কারণ সবটাই চলে স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশে।”
এদিকে সুপারের বদলি রুটিন মনে করলেও অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিসেস ডক্টরসের জেলা সম্পাদক স্বস্তিশোভন চৌধুরী বলেন, “কাকতালীয় ভাবে এই সময় সোয়াইন ফ্লু প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এই সমস্ত মুহূর্তে স্বাস্থ্য প্রশাসনের কোন কর্তার বদলি কিছুটা হলেও অসুবিধার সৃষ্টি করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সুপারকে কিছু দিন এখানে রেখে কাজ করালে উপকার হবে।”