হাসপাতাল চত্বর ঘুরে দেখছেন আধিকারিকেরা। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
একই জমিতে জেলা হাসপাতাল, একই জমিতে স্বাস্থ্য জেলা আধিকারিকের ভবন। আবার একই চত্বরে থাকা জমি নিয়ে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এবং সেই জমি ঘিরেই মেডিক্যাল কলেজ। এটাই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত প্রকল্প নিয়ে রামপুরহাট হাসপাতালের জমি জট চিত্র। এই জমি সংক্রান্ত জটিলতা কাটাতে দিনভর রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তাদের ব্যস্ত থাকতে হল। দিনের শেষে বহুল প্রচারিত মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত রামপুরহাটের মেডিক্যাল কলেজের জায়গা সংক্রান্ত জমি জটিলতা আগের জায়গায় থেকেই গেল বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য দফতরের অনেক কর্মীই। কারণ, এ দিন জমি জটিলতার ব্যাপারে সরজমিন পরিদর্শনে আসেন ন্যাশনাল হেলথ মিশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তথা রাজ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের কমিশনার সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ, স্বাস্থ্য দফতরের সচিব ওঙ্কার সিং মিনা থেকে ন্যাশন্যাল হেলথ মিশনের প্রোগ্রাম অফিসার জলি চৌধুরী প্রমুখ। তাঁরা এ ব্যাপারে কিছুই বলতে চাননি। তবে রামপুরহাট জেলা মুখ্য আধিকারিক ব্রজেশ্বর মজুমদার বলেন, ‘‘এ দিন আধিকারিকেরা মূলত জায়গা পরিদর্শনে এসেছিলেন।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ গাইড লাইন অনুযায়ী মেডিক্যাল কলেজের জন্য ২০ একর জায়গা দরকার। অথচ রামপুরহাটে মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের জন্য রামপুরহাট হাসপাতালে যে জায়গা দেখানো হয়েছে, তা সর্বসাকুল্যে ১৮ একর ২৬ শতক। এর বাইরে রামপুরহাট ভাঁড়শালা মোড় পেরিয়ে বামনিগ্রাম মৌজায় রামপুরহাট হাসপাতালের পুরনো ভবনের ১ একর ২৩ শতক জায়গা দেখানো হয়েছে। আবার এই জায়গাকেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত রামপুরহাট মহকুমাকে পৃথক স্বাস্থ্য জেলার জন্য দেখানো হয়েছিল তিন বছর আগে। আর বছর খানেক আগে সেই জায়গাতেই মেডিক্যাল কলেজের জন্য বোর্ড টাঙানো হয়েছে। আবার মেডিক্যাল কলেজের জন্য রামপুরহাটের বাইরে পাঁচ কিলোমিটার দূরে চকমণ্ডলা এলাকায় ৭ একর জায়গা দেখানো হয়। কিন্তু মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার গাইড লাইন অনুযায়ী, মেডিক্যাল কলেজের কম্পাউন্ডের জন্য যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল থাকতে হবে। চকমণ্ডলা এলাকা যাওয়ার জন্য যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ থাকার জন্য ওই জায়গা বাদ পড়ে যায়। এর উপরে আবার এখন যেখানে রামপুরহাট হাসপাতাল, সেই ১৮ একর ২৬ শতক জায়গার মধ্যে বর্তমানের রামপুরহাট হাসপাতালের মূল ভবন-সহ পূর্ত দফতরের অফিস, মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত নির্মীয়মাণ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল নিয়ে ৫ একর জায়গা চলে গিয়েছে। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের জন্য ১৩ একর ২৬ শতক জায়গা পড়ে থাকল। অথচ ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত আর একটি প্রকল্প পৃথক রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দের ভবন নির্মাণ বাবদ বরাদ্ধ ৩ কোটি ৩৫ লক্ষাধিক টাকা অনুমোদন হয়েছে । তাহলে সেই ভবন নির্মাণের জন্যও তো জায়গা দরকার। এই সব জটিলতার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের বাস্তবায়নে জমি জট কাটাতে রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তাদের বৃহস্পতিবার আগমন ঘটে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের জায়গা সংক্রান্ত জটিলতা কাটাতে বৈঠকে প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়, শর্ত অনুযায়ী ৬০০ শয্যার হাসপাতাল দরকার। রামপুরহাট হাসপাতালে বর্তমান শয্যা সংখ্যা ৩১৪। সেক্ষেত্রে ৩০০ শয্যার নির্মীয়মাণ সুপার স্পেশালিটি হাসাপাতালকে মেডিক্যাল কলেজের আওতায় আনতে হবে। এর পাশাপাশি পৃথক স্বাস্থ্য জেলার জন্য মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিকদের যে ভবন নির্মাণ হবে সেই ভবনকে মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে নেওয়া হবে। এ ছাড়া রামপুরহাটের বামনিগ্রাম মৌজায় যে পুরনো হাসপাতাল ভবন আছে, সেখানে দখলদারদের সরিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে সেখানে ট্রেনিং স্কুল অথবা হস্টেল করতে হবে। বর্তমান রামপুরহাট হাসপাতালের ভবনগুলি কীভাবে কাজে লাগানো যায়, নবনির্মিত এসএনসিইউ ভবন থেকে স্টাফ কোয়ার্টার, পরিত্যক্ত ভবনগুলিকেও মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে কীভাবে আনা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়। ব্রজেশ্বরবাবু বলেন, ‘‘মেডিক্যাল কলেজের জন্য ২০ একর জায়গা দরকার। রয়েছে ১৮ একর। হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় যাতে বাকি ২ একর জায়গা পাওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য আধিকারিকের ভবন নিয়ে আলোচনা হয়নি।’’