Help

Covid Hero: তথ্যভাণ্ডার নিয়ে কোভিড আক্রান্তদের জন্য রাত জাগছে তিন বন্ধুর ‘মা’

শৌনক, দেবদত্তা এবং সুভিনব মিলে বানিয়েছেন এক বিরাট তথ্যভাণ্ডার।

Advertisement

সুমন রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২১ ০৯:২০
Share:

তিন বন্ধু— শৌনক ঘোষ, দেবদত্তা নন্দী এবং সুভিনব বসাক। ফাইল চিত্র।

রাত ৩টে হবে। মোবাইল বেজে ওঠায় তন্দ্রা ভাব কেটে গেল শৌনকের। এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফোন। কোভিডে আক্রান্ত তিনি। ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করতে হবে তাঁর জন্য। কিন্তু কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না রাতের ওই সময়ে।

Advertisement

সেই আত্মীয়ের জন্য ভেন্টিলেটর খুঁজতে বেশি বেগ পেতে হয়নি শৌনককে। নিজেদের বানানো ডেটাবেস বা তথ্যভাণ্ডার হাতড়ে খুব সহজেই শৌনক খুঁজে পেয়েছিলেন, ওই মুহূর্তে কোন হাসপাতালে ক’টা ভেন্টিলেটর পরিষেবা ফাঁকা আছে। এই প্রথম বার নিজেদের জমানো তথ্যভাণ্ডারের উপযোগিতা টের পেয়েছিলেন তিনি। নিজেদের মানে, তিন বন্ধুর— সুভিনব বসাক, দেবদত্তা নন্দী এবং শৌনক ঘোষ।

কোভিডের সময়ে অনেকে অনেক ভাবে অন্যকে সাহায্য করছেন। খাবার দিয়ে, ওষুধ দিয়ে, হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে। শৌনকের কথায়, ‘‘রাস্তায় নেমে আমরা কাজ করতে পারিনি। কিন্তু বাড়িতে থেকেও যে মানুষের সাহায্য করা যায়, এটা মাথায় আসতেই এ রকম একটি কাজের কথা ভাবি।’’ কেমন কাজ? শৌনক, দেবদত্তা এবং সুভিনব মিলে বানিয়েছেন এক বিরাট তথ্যভাণ্ডার। নেটদুনিয়ায় মজুত করা তাঁদের এই তথ্যভাণ্ডারে উঁকি দিলে সহজেই জানা যাবে, ওই মুহূর্তে কলকাতার কোন জায়গায় কতগুলি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে, বা কোন এলাকায় কারা কারা অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছেন, এমনকি বেসরকারি হাসপাতালের খালি শয্যার সংখ্যা, ভেন্টিলেটরের পরিষেবার হালের অনেকটাই জানা যাবে তাঁদের এই ডেটাবেস বা তথ্যভাণ্ডার থেকে। এখন রাজ্যের নানা জায়গার স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করায় শৌনকদের তথ্যভাণ্ডারে ঢুকে পড়েছে কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যের তথ্যই।

Advertisement

কী ভাবে শুরু হল এই কাজ? শৌনক বলছেন, প্রথমে তাঁরা নিজেদের নেটমাধ্যমে এই ধরনের তথ্য প্রকাশ করে অন্যদের সাহায্য করার চেষ্টা করতেন। ‘‘পরে দেখলাম, সব তথ্য যদি এক জায়গায় রাখা যায়, খুঁজে পেতে সুবিধা হয়,’’ বলছেন তিনি। কারও দরকারে কী ভাবে পেতে পারেন শৌনক-দেবদত্তা-সুভিনবের সাহায্য? ‘‘আক্রান্ত বা তাঁর হয়ে কেউ যদি আমাদের ফোন করেন, আমরা তখনই নিজেদের ডেটাবেস থেকে দেখে বলে দিতে পারি, তাঁদের যা প্রয়োজন, কী ভাবে তাঁরা পাবেন। বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগও করিয়ে দিতে পারি।’’ কেউ সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা নিতে চাইলে, স্বাস্থ্যভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার কাজও করেন তাঁরা। ‘‘শুধু তথ্য দিয়ে সাহায্য করা নয়, এই কাজটা শুরু করতে গিয়ে আমরা দেখেছিলাম, বহু মানুষ হাল ছেড়ে দিচ্ছেন। অথচ, মন শক্ত করে লড়াই করলেই তাঁরা জিততে পারবেন। আমরা এই সব মানুষের পাশে থাকতে চেয়েছি।’’

কাজের শুরু থেকেই তিন বন্ধু পরিবারের সাহায্য পেয়েছেন সব চেয়ে বেশি। কোনও বাধা আসেনি? ‘‘বাধা আসেনি। তবে আমাদের তথ্যভাণ্ডার থেকে অনেককে সাহায্য করার জন্য অক্সিজেন বা অন্য পরিষেবার সন্ধান দেওয়ার পরে দেখেছি, তার কয়েকটি ভুয়ো। এমন একটা সময়ে কেউ যদি এ ধরনের অসাধু কাজ করেন, খুব হতাশ লাগে,’’ বলছেন শৌনক।

ঢাকুরিয়ার দেবদত্তা, লেক টাউনের সুভিনব আর নিউ টাউনের শৌনক মিলে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শুরু করেছিলেন এই কাজ। তিন জনের দলের নাম রাখা হয়েছিল ‘মা’। বাংলা ভাষার মা নয়, ইংরেজি নাম ‘মিশন অ্যাসট্রাল অ্যাঞ্জেলস’-এর খুদে সংস্করণ এমএএ বা ‘মা’। শহর কলকাতা বা রাজ্যের অন্যত্র যখন পরিজনকে সুস্থ করতে পেরে রাতে শান্তিতে ঘুমাতে যাচ্ছেন কেউ, তখনই হয়তো নিকট কারও জন্য হাসপাতালের দরজায় দরজায় ছুটছেন আর একজন। তাঁদের সঙ্গে রাত জাগছে ‘মা’। কম্পিউটারের উজ্জ্বল পর্দার সামনে, তিন জোড়া চোখ বড় বড় করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন