পরীক্ষার মরসুম শেষ না হতেই বেজে গিয়েছে নির্বাচনের দামামা। এই পরিস্থিতিতে রক্তদান শিবির কমে যাওয়ায় রক্ত সঙ্কটে পড়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আঞ্চলিক ব্লাড ব্যাঙ্ক। গত ১ মাসেরও বেশি সময় ধরে রক্তের যোগান অনিয়মিত হয়ে পড়ায় রোগীদের জন্য রক্ত সরবরাহ করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে। বিশেষ করে নেগেটিভ বিভাগের রক্ত প্রায় নেই বললেই চলে।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আঞ্চলিক ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগেও যেখানে গড়ে ৬০ ইউনিট রক্ত লাগত। এখন সেই প্রয়োজন বেড়ে দাঁড়িয়েছে গড়ে ৮০ ইউনিট। অথচ চাহিদা অনুসারে রক্তের যোগান দেওয়ার জন্য প্রতি বিভাগে গড়ে ২৫-৩০ বোতল রক্ত দরকার। অথচ ব্ল্যাড ব্যাঙ্কের ভাঁড়ার প্রায় ফাঁকা। রক্ত ছাড়াও অনেকের অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট, ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা, লোহিত কণিকা আলাদা ভাবেও নিতে হয়। রক্তের যোগানে ঘাটতি থাকায় এই সব উপাদান সরবরাহের ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে।
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আঞ্চলিক ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা মৃদুময় দাস। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি খুবই সঙ্কটজনক। গত দেড় মাস ধরেই সমস্যা চলছে। মাঝে কয়েকটি রক্ত দান শিবির হলে সমস্যা সাময়িক ভাবে মেটে। কিন্তু রক্তের সঙ্কট থেকেই যায়। নেগেটিভ বিভাগের রক্তের সমস্যা সব চেয়ে বেশি।”
গত কয়েকদিন ধরেই হাসপাতালে মজুত করা রক্তের পরিসংখ্যান সে কথাই বলছে। গত মঙ্গলবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ-পজিটিভ বিভাগের রক্ত ছিল মাত্র ১০ ইউনিট। এ-নেগেটিভ বিভাগের রক্ত আরও কম। মাত্র ৩ ইউনিট। এবি পজিটিভ বিভাগের রক্ত ৯ ইউনিট মজুত থাকলেও নেগেটিভ বিভাগের রক্ত ছিল না। রক্ত ছিল না বি নেগেটিভ বিভাগেরও। ও নেগেটিভ বিভাগের রক্ত ছিল মাত্র ১ ইউনিট। বি-পজেটিভ বিভাগের রক্ত ছিল ৮ ইউনিট এবং ও-পজিটিভ রক্ত ছিল ১৩ ইউনিট। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অথচ চাহিদা মেনে ওই দিন বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৭৫ ইউনিট রক্ত সরবরাহ করতে হয়েছে।
বুধবার বা বৃহস্পতিবারও অবস্থার হেরফের তেমন কিছু হয়নি। কোনও বিভাগে এক দুই ইউনিট রক্ত বাড়তি মজুত হয়েছে আবার কোনও ক্ষেত্রে তা আগের চেয়ে কমেছে। ব্লাড ব্যাঙ্কে লোহিত রক্ত কণিকা রয়েছে এ পজিটিভ বিভাগের ২৮ ইউনিট, এবি-নেগেটিভ বিভাগের ১ ইউনিট, বি-পজিটিভ বিভাগের ১৫ ইউনিট এবং ও পজিটিভি বিভাগের ১৩ ইউনিট। অন্য বিভাগের ওই রক্ত কণিকা নেই। প্লেটলেটও এ পজিটিভি বিভাগের ৭ ইউনিট, এবি পজিটিভি বিভাগের ৫ এবং ও পজিটিভি বিভাগের ১ ইউনিট রয়েছে। অন্য বিভাগের নেই।
কী করে পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ?
ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রেই জানা গিয়েছে, রোগীর জন্য পরিবারের লোকেরা রক্ত চাইলে যত ইউনিট দরকার সেই মতো রক্তদাতা নিয়ে আসতে বলা হয়। যদি রোগীর জন্য দরকারি নির্দিষ্ট বিভাগের রক্ত একেবারেই মজুত না থাকে তা হলে সেই বিভাগের রক্তদাতা নিয়ে এসে সেই রক্ত নিয়ে তবেই দেওয়া হচ্ছে। তাতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীর পরিবারকে। সব সময় হাতের কাছে রক্তদাতা চেনা পরিচিত কেউ মেলে না। খোঁজখবর করে লোক ধরে এনে সমস্যা মেটাতে তাদেরকেও বেগ পেতে হচ্ছে।
শিলিগুড়ি ভলেন্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সম্পাদক পীযূষ রায় বলেন, “মাধ্যমিক, তার পরেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা, জয়েন্ট এনট্রান্স পরীক্ষা রয়েছে। ৩০ মার্চ পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিক চলবে। এই সময় মাইক ব্যবহার করা যায় না। তাই ক্যাম্পের জন্য প্রচারে সমস্যা হয় বলে অনেকেই শিবির করতে চান না। তা ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার সময় অভিভাবকরাও জড়িয়ে পড়েন। বাসিন্দাদের মধ্যে তাই এই সময় রক্ত দানের প্রবণতা কমে। ইতিমধ্যে পুর নির্বাচন ঘোষণা হয়েছে। বিধি নিষেধের জেরে নেতা-কর্মীরা এই সময় শিবির করতে পারেন না। সে কারণেও অনেক সময় রক্ত দান শিবিরও কম হয়।” তবে পীযূষবাবু জানান, তারা চেষ্টা করছেন যাতে এই সঙ্কটের সময় কিছু রক্তদান শিবির তাঁরা করতে পারেন।