রঙিন: এই গামছা দিয়েই তৈরি হচ্ছে পোশাক। —নিজস্ব চিত্র।
পরশুরামের গল্পে বয়স্ক মানুষটি স্পষ্ট দেখেছিলেন, মেমসাহেবের পরনে আস্ত বাঁদিপোতার গামছা!
গল্প থেকে নামিয়ে বাংলার মিহি সুতোর রঙিন গামছা দিয়ে এ বার রীতিমতো ডিজাইনার পোশাক তৈরির পরিকল্পনা হচ্ছে। চানঘরে হাত, পা, গা মোছার সীমিত পরিসর থেকে ব্যবহারের পরিধি বাড়িয়ে গামছার কৌলীন্য বদল ঘটাতে চাইছে রাজ্য সরকার। স্নানের পরে গায়ের জল মোছার অন্তরঙ্গতা থেকে গামছাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না। সেই ভূমিকা অটুট রেখেই সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে বাহারি পরিচ্ছদ এবং ঘরের অন্দরসজ্জার উপকরণ করে তোলার বন্দোবস্ত হচ্ছে।
সেই সঙ্গে কড়াই, গামলা, হাতা-খুন্তি মোছা বা ধরার জন্য গামছার ঠাঁই হচ্ছে হেঁশেলেও।
‘‘আধুনিক জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গামছাকে নানা রঙে, বাহারি নকশায় বাজারে নিয়ে আসাটাই আমাদের লক্ষ্য। যাতে মানুষ ঘরে-বাইরে সর্বত্র গামছা ব্যবহার করতে কোনও সঙ্কোচ না-করে,’’ বলেন রাজ্যের বস্ত্র দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।
আধুনিক নকশা এবং বিপণনের কৌশলে বাংলার তন্তুজ ও মঞ্জুষার তাঁতের শাড়ির বাজার গত কয়েক বছরে অনেকটাই বেড়েছে। ফুলিয়া, শান্তিপুরি-সহ বাংলার তন্তুজীবীদের বোনা বিভিন্ন ধরনের শাড়ি এখন অনলাইনেও কেনা যায়। বিশ্ব বাংলা-সহ তন্তুজ, মঞ্জুষার বিপণন কেন্দ্রগুলিকে ব্যবহার করে বাংলার গামছাকে অনেকটা সেই আদলেই দেশ-বিদেশের বাঙালির রোজকার জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ করে তোলার পরিকল্পনা করছে সরকার।
স্বপনবাবু জানান, নদিয়া, বর্ধমান, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদের গামছা বেশ বিখ্যাত। যাঁরা গামছা বোনেন, তাঁদের উপরে একটি সমীক্ষার কাজ চলছে। গ্রামগুলিকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি তন্তুজীবীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জায়গায় গামছা-হাট তৈরির পরিকল্পনাও আছে সরকারের।
নগরজীবনে তোয়ালে অনেকটা হটিয়ে দিয়েছে গামছাকে। তবে তরুণ প্রজন্মের একাংশের মধ্যে ইদানীং গামছার তৈরি ব্যাগ ও ঝোলা ব্যবহার, বাহারি নকশার পোশাক পরার একটা ঝোঁক লক্ষ করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের ডিজাইনার বিবি রাসেলের গামছার তৈরি পোশাক তো অনেক দিন আগেই জনপ্রিয় হয়েছে। অনেক ফ্যাশন ডিজাইনিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এখন গামছা-কাপড়কে নিয়ে নানা ধরনের পরীক্ষামূলক কাজ হচ্ছে। বস্ত্র দফতরের কর্তারা ঠিক করেছেন, বিবি রাসেলের মতো অভিজ্ঞ ডিজাইনার থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে পরামর্শ চাওয়া হবে। গামছা শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে শীঘ্রই একটি কমিটিও গড়া হচ্ছে বলে জানান কর্তারা।