শিশুদের চটকাতে মন চায়? এর নেপথ্যে কারিকুরি আছে মগজের। ছবি: শাটারস্টক।
শিশু দেখলেই গাল টিপে আদর বা চটকাতে ইচ্ছা করে। কিংবা কুকুরছানা দেখলেই কোলে তুলে আদর করতে মন চায়। এ আর নতুন কী? আমার-আপনার সকলের মধ্যেই এমন স্বভাব আকছার দেখা যায়। কিন্তুএসবকে যদি শুধুই নিজের আবেগের বহিঃপ্রকাশ বলে ভাবেন, তা হলে মস্ত ভুল করছেন! বরং বিজ্ঞান বলছে, খুব একটা আবেগী নন, এমন মানুষও এই ধরনের ব্যবহার করে থাকেন।
বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে হোক বা বাইরে কোনও শিশু বা কুকুরছানা দেখলেই আদর করতে মন চায় কেন, কেনই বা কোনও শিশুর নানা ভুলত্রুটি সত্ত্বেও তাদের প্রতি মমত্ব বোধ জাগে আমাদের? শুধুই নরম তুলতুলে চেহারা আর ছোট বলেই কি তাদের প্রতি এতটা সহমর্মী হই আমরা?
বিজ্ঞান একে ‘কিউট অ্যাগ্রেশন’ বলছে। এই কিউট অ্যাগ্রেশন নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপকরা। সম্প্রতি ‘ফ্রন্টায়ার্স’ জার্নালে প্রকাশিত ব্যবহারিক স্নায়ুবিদ্যা বিভাগে এই গবেষণা নিয়ে বিস্তারিত একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তাতেই শিশু বা কুকুরছানার প্রতি মানুষের এমন ব্যবহারের নেপথ্যে মস্তিষ্কের আচরণকেই দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুন: মানুষ কেন বিশেষ কারও প্রতি আকৃষ্ট হয় জানেন?
‘‘এই গবেষণার মাধ্যমে মানুষের ব্যবহারিক মনস্তত্ত্বকেই বোঝার চেষ্টা চালানো হয়েছে’’, জানান গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির সহ-অধ্যাপক ক্যাথরিন স্ট্যাভরোপোলাস। দেখা গিয়েছে, যখনই মিষ্টি বা সুন্দর কোনও কিছুকে দেখি, তখনই মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেম (স্নায়বিক অংশ যেখানে নানা রকম আবেগ, ভাললাগা, মন্দলাগা, চাওয়া-পাওয়ার অনুভব প্রকাশ পায়) আগ্রাসনের সঙ্গে উত্তেজিত হয়। বিশেষ করে কী চাইছে মস্তিষ্ক বা কোন বিষয়ে ঠিক কেমন অনুভূতির প্রকাশ প্রয়োজন তা তখনই কিছুটা নির্ধারণ হয়ে যায়। এর সঙ্গেই যোগ হয় আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী সেনসরি অংশের কাজ।
এই গবেষণায় কেবল স্নায়ুবিদ্যা ও শারীরবিদ্যাই নয়, বিজ্ঞানীরা সাহায্য নিয়েছিলেন পদার্থবিদ্যারও। ইলেকট্রোসাইকোলজির মাধ্যমে মস্তিষ্কেরস্নায়ুর কার্যকলাপ দেখে এই বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্তে আসেন বিজ্ঞানীরা। এতে মস্তিষ্কের নিউরনে বিদ্যুতের সক্রিয়তার পরিমাপ করা যায়। তা থেকেই অনুভূতির অঙ্ক কষে ফেলতে পারেন বিজ্ঞানীরা।
১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৫৪ জনের উপর এই পরীক্ষা চালান স্ট্যাভরোপোলাস ও তাঁর সহকারী লরা অ্যালবা। এদের প্রত্যেককে বিশেষ পদ্ধতির তড়িদ্বাহী টুপি পরানো হয়, এমন ভাবে সে টুপি বানানো হয়, যাতে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট না হন তাঁরা। টুপি পরানোর সময় ৩২টি ছবির চারটি করে ব্লক দেখানো হয় তাঁদের। প্রতিটি ব্লক কম্পিউটার স্ক্রিনে ভেসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের কোনও একটি অনুভূতিব্যঞ্জক মন্তব্য করতে বলা হয় ও ১ থেকে ১০-এর মধ্যে নম্বর দিতে বলা হয়।
আরও পড়ুন: চুমু খাওয়ার সময় চোখ কেন বন্ধ হয়ে যায় জানেন?
কুকুরছানাকে আদরের নেপথ্যেও হাত আছে মস্তিষ্কের। ছবি: শাটারস্টক।
ব্লকে রাখা কিছু সুন্দর, আকর্ষণীয় ছবি দেখে সমীক্ষায় অংশ নেওয়া মানুষদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ, উত্তেজনা ও প্রশংসাসূচক বাক্য সবই লিপিবদ্ধ করেন বিজ্ঞানীরা। এই ধরনের ছবি দেখেই তাৎক্ষণিক ভাবে কতটা আনন্দ পাচ্ছেন কেউ, তাও লক্ষ রাখা হয়।
দেখা যায়, বেশির ভাগ মানুষই শিশু ও কুকুরছানাদের দেখে বেশি আনন্দিত হয়েছেন। ছবি দেখার পূর্বে, সেই সময় ও পরবর্তী সময়ে সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের অবস্থা নিয়েও স্ট্যাভরোপোলাস গবেষণা চালান। ‘‘গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ‘কিউট’ কিছু দেখার সঙ্গে মস্তিষ্কের রিওয়ার্ডসিস্টেমের সঙ্গেআবেগের সেনসরি অর্গ্যান খুব শক্তিশালী যোগাযোগ স্থাপন করছে। তা থেকেই মস্তিষ্কে এক আগ্রাসন ঘটে (কিউট অ্যাগ্রেশন)। তাই শিশু বা কুকুরছানা দেখলে এমন চটকানোর স্পৃহা জাগে।’’ জানান স্ট্যাভরোপোলাস।
তা হলে যাঁরা শিশু ভালবাসেন না তাঁদের ক্ষেত্রে কী হয়?এই পরীক্ষাকে অবলম্বন করে মনোবিদ অমিতাভ মুখোপাধ্যায় জানান, ‘‘শিশু ভাল না বাসলেও তাদের প্রতি এক প্রচ্ছন্ন আকর্ষণ কাজ করে মানুষের মধ্যে। কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশ হয় না, কারণ, তাদের আবেগের সেনসরি অর্গান মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেমের সঙ্গে জোরদার ভাবে সম্পর্ক সংযোগ করতে পারে না।’’
ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন।