ময়নাগুড়ির চূড়াভাণ্ডার গ্রামে শনিবার আক্রান্তের পরিজনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন ‘স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন’-এর বিশেষজ্ঞরা। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
এনসেফ্যালাইটিস ঠেকাতে উত্তরবঙ্গে চূড়ান্ত সতর্কতা জারির সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। কাল, সোমবার থেকে উত্তরবঙ্গের সাত জেলায় ওই সতর্কতা বলবৎ হবে। উত্তরবঙ্গের সব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে, যে কোনও জ্বরকেই অতিমাত্রায় গুরুত্ব দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। উত্তরবঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের সব কর্মীর ছুটিও বাতিল হবে। শনিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এনসেফ্যালাইটিস আক্রান্তদের দেখার পরে এ কথা জানান মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “বেশ কিছু মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন। ঝুঁকি নিতে চাইছি না।”
এ দিনও যতীন্দ্রনাথ বাড়ই (৬৫) নামে কোচবিহারের নাটাবাড়ির এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। তিনিও ‘এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বলে হাসপাতালের সুপার অমরেন্দ্র সরকার জানান। তিনি বলেন, “এখনও প্রায় ৪০ জন বিভিন্ন বিভাগে এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম এবং জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন।” স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ৭ জুলাই থেকে এ দিন পর্যন্ত ‘অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস’-এর উপসর্গ নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালেই মারা যান ৪৯ জন।
এ দিন জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণের কারণ খতিয়ে দেখতে জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে আক্রান্তদের বাড়ির পরিবেশ ঘুরে দেখে কলকাতা থেকে আসা বিশেষজ্ঞ দল। ‘স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন’-এর ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান নিমাই ভট্টাচার্য দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন। শনিবার সকালে দলে থাকা ডাক্তারেরা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। পরে ময়নাগুড়ির চূড়াভাণ্ডার এলাকার বাসিন্দা বিশ্বদীপ সরকারের বাড়িতে যায় বিশেষজ্ঞ দলটি। বিশ্বদীপবাবু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ‘অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস’-এর উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন থাকার পরে সুস্থ হয়ে সম্প্রতি বাড়ি ফিরেছেন। বিশেষজ্ঞেরা এ দিন তাঁর বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখেন। গ্রামে কেউ শুয়োর পালন করেন কি না, সে খোঁজও নেন। ওই গ্রামে শুয়োর পালন হয় শুনে নিমাইবাবু জানান, শুয়োর থেকে মশার মাধ্যমে রোগের সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে। শুয়োর পালন করা পরিবারের সদস্যদের রক্তের নমুনাও দলটি সংগ্রহ করেছে।
জলপাইগুড়ির পরে বিশেষজ্ঞ দলটি ধূপগুড়ি এবং মালবাজারেও যায়। জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ৩২ জন রোগীর রক্ত নমুনায় এনসেফ্যালাইটিসের ভাইরাস মিলেছে। তাঁদের মধ্যে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। নিমাইবাবু বলেন, “জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ছড়ানোর সব মাধ্যম এখানে রয়েছে। রোগের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। আর রোগ এড়াতে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে।”
এ দিন এনসেফ্যালাইটিসের কারণে জ্বরাক্রান্তদের দেখতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে যান সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য এবং জীবেশ সরকার। প্রাক্তন মন্ত্রী অশোকবাবুর দাবি, “স্বাস্থ্য দফতর আগে থেকে সাবধান হলে এতগুলো মৃত্যু এড়ানো যেত!” পক্ষান্তরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের বক্তব্য, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে মনে হয়নি। আমরা তো তার পরেও কোনও ঝুঁকি নিচ্ছি না।”