অনেক দিন থেকেই রবীনবাবুর মাথায় ঘুরছে একটা কুকুরের বাচ্চা কেনার কথা। কিন্তু কোথায়, কী ভাবে খোঁজ করবেন সেটাই ভেবে পাচ্ছিলেন না। পছন্দ জার্মান শেফার্ড। চেনাশোনা তেমন কেউ নেই যে পরামর্শ নেবেন। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে এক দিন গুগলে সার্চই দিয়ে ফেললেন। অবাক হয়ে দেখলেন পর্দা থেকে তাঁর দিকে তাকিয়ে রয়েছে সার সার মিষ্টি কুকুরছানা।
অনেক খুঁজে দিল্লির এক শেফার্ড ছানাকে পছন্দ হল রবীনবাবু আর তাঁর বাড়ির লোকজনের। দাম হাজার পঞ্চাশ টাকা। বিজ্ঞাপনে দেওয়া মোবাইল নম্বরে ফোন করলেন। দিল্লির কুকুর ব্যবসায়ী জানালেন, তিনি ই-মেলে আরও ছবি পাঠাচ্ছেন। সেই সঙ্গে ছানার বাবা-মায়ের বংশপরিচয়। আর শেফার্ড রাখতে গেলে কী ভাবে যত্নআত্তি করতে হবে, তাও জানিয়ে দেবেন তিনি। পাঠাবেন ছানাকে দেওয়া প্রতিষেধকের তালিকাও।
সব কিছু ঠিকঠাক হওয়ার পরে দিল্লির কুকুর ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে দিলেন রবীনবাবু। ই-মেলে এল ছানার দমদম বিমানবন্দরে পৌঁছনোর নির্ঘন্ট। পরিবারের নয়া সদস্য ‘রানিকে’ বাড়ি নিয়ে এলেন রবীনবাবুরা।
এমন ভাবেই আজকাল পছন্দের কুকুর খুঁজে নিচ্ছেন অনেকে। অন্য অনেক কিছুর মতোই ইন্টারনেট হয়ে দাঁড়িয়েছে পোষ্য কেনাবেচারও মাধ্যম। গজিয়ে উঠেছে ‘ডগসইন্ডিয়া’, ‘কেনেলইন্ডিয়া’-র মতো এক ঝাঁক ওয়েবসাইট। আবার ‘ওএলএক্স’ বা ‘কুইকর’-এর মতো পরিচিত বিপণন সাইটেও মিলছে কুকুরের বিজ্ঞাপন। সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড হচ্ছে একের পর এক বাচ্চার ছবি আর ভিডিও।
কলকাতার সারমেয়প্রেমী ক্লাবের কর্তা এস রামনের মতে, ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক। ইন্টারনেট-হোয়াটসঅ্যাপের এই যুগে অন্য সকলের মতো কুকুর ব্যবসায়ীরাও যে এই মাধ্যমকেই বেছে নেবেন তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। প্রযুক্তি তাঁদের অনেক মুশকিল আসান করে দিয়েছে।
কী ভাবে?
পঞ্চাশের দশক থেকে কুকুর পোষা ও ডগ ব্রিডিং-এর সঙ্গে যুক্ত তপন চৌধুরী বলছেন, ‘‘আগে তো সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনই কুকুরের ছানা খোঁজার সব চেয়ে ভাল উপায় ছিল। রবিবার বিশেষ কলামে জীবজন্তু বিক্রির বিজ্ঞাপনের জন্য অপেক্ষা করতাম আমরা।’’ তপনবাবু জানাচ্ছেন, ডগ শো-র মাঠে খোঁজখবর করলেও তখন অনেকে ওই বিজ্ঞাপন দেখার পরামর্শ দিতেন। শো-এর মাঠেও অনেকে ছানা নিয়ে আসতেন। বিদেশ থেকে আমদানি করতে গেলে সেখানকার কুকুর সংক্রান্ত পত্রিকার সভ্য হতে হতো। বিজ্ঞাপন দেখে বিক্রেতাদের চিঠি লিখতেন ক্রেতারা। জবাবে ছানা সংক্রান্ত তথ্য জানাতেন বিক্রেতারা। সে ভাবেই হতো যোগাযোগ।
কিন্তু সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনে বড়জোর ছানা ও তার বাবা-মায়ের সংক্ষিপ্ত বংশপরিচয় (পেডিগ্রি) দিতে পারতেন বিক্রেতারা। কিন্তু এখন প্রযুক্তির সাহায্যে বেশ কয়েক কদম এগিয়ে যেতে পারছেন তাঁরা। ছানা, বাবা, মা-র ছবি-ভিডিও-পেডিগ্রি সবই আপলোড করে দেওয়া যাচ্ছে সহজে। প্রয়োজনে ক্রেতাকে হোয়াটসঅ্যাপ বা ই-মেলেও তা পাঠিয়ে দেওয়া যাচ্ছে।
তপনবাবুর কথায়, ‘‘বাচ্চার চেহারা ও হাঁটাচলা দেখেই তার গুণমান, শরীর-স্বাস্থ্য বোঝেন অভিজ্ঞরা। সে ভাবেই বোঝা যায় বাবা-মায়ের গুণমানও।’’ এস রামনের কথায়, ‘‘সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিলে সরাসরি ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে যোগাযোগ হতো। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়।’’ বরং ক্রেতারা বাড়তি সুবিধে পান। কী রকম? সরাসরি যোগাযোগে ক্রেতা সঠিক দামে ছানা কেনার সুযোগ পান বলে জানাচ্ছেন অনেকে। তাঁদের মতে, অনেক সময়ে মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ছানা কিনতেন অনেকে। তাতে দাম বেড়ে যেত।
সুবিধে আরও আছে। সংবাদপত্রে বেশ কয়েকটি সংস্করণে বিজ্ঞাপন না দিলে সারা দেশের ক্রেতাদের কাছে পৌঁছনো সম্ভব ছিল না। এখন নেট-দুনিয়ার যে কোনও কোণে বিজ্ঞাপন দিলে তা দেখতে পান দেশ-বিদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ। রটওয়েলার প্রজাতির কুকুর ব্রিড করেন দিল্লির ব্যবসায়ী এ বি বহুগুণা। তাঁর কথায়, ‘‘এখন তো আর সংবাদপত্র কেউ দেখেন বলে মনে হয় না। কুকুর সংক্রান্ত পত্রিকা ছাড়া ইন্টারনেটই সব চেয়ে ভাল মাধ্যম। দেশ-বিদেশের সকলের সঙ্গেই যোগাযোগ করা যায়।’’
কুকুরছানা আর কুকুরপ্রেমীদের যোগাযোগ এখন স্রেফ একটা ক্লিকের অপেক্ষা!