আস্ত মাথাটাই কি পুরোপুরি বদলে দেওয়া যাবে এ বার ?
নিছকই হৃত্পিণ্ড-কিডনি-চোখ বা কোনও অঙ্গের প্রতিস্থাপন নয়।
এবার হয়তো সরাসরি আমার-আপনার মাথাও বদলে ফেলা যাবে!
অবাক হচ্ছেন ? হওয়ারই কথা।
কিন্তু রীতিমতো অভিনব ওই মাথা-প্রতিস্থাপনের প্রস্তুতি-তোড়জোড়ের কথা শুক্রবারই সাংবাদিকদের ডেকে জানিয়েছে চিন ও ইতালির চিকিৎসকদের একটি টিম।
অভিনব ওই অস্ত্রোপচারটি হবে চিনেই।
হবে কবে ? বলা ভাল, কবে সেই প্রতিস্থাপন হওয়া সম্ভব হবে ?
চিকিৎসকদের ওই টিমের তরফে রেন জিয়াওপিং ও সের্গেই ক্যানাভারোর আশা, প্রস্তুতি-তোড়জোড়, গবেষণা-পরীক্ষানিরীক্ষা যদি ঠিকমতো চলে, তা হলে হয়তো বছর দুয়েকের মধ্যেই রীতিমতো অবাক করে দেওয়া ওই অস্ত্রোপচারটি হবে চিনে।
জিয়াওপিং বলেছেন, ‘‘অনেকেই প্রশ্ন করছেন, আমরা কি ২০১৭ সালের মধ্যেই ওই প্রতিস্থাপন করতে পারব। তার আগে প্রতিটি ধাপের কাজ যে সময় মতো শেষ হতে হবে।’’
জিয়াওপিং যে ধাপগুলির কথা বলতে চাইছেন, সেগুলি আসলে কী-কী ?
অনেক কিছুই আছে। প্রথম কথাটা হল, মাথাটা কোথা থেকে পাওয়া যাবে ? কার মাথা নেওয়া হবে ? বহু ক্ষণ আগে মৃত মানুষের মাথা নেওয়া যাবে না, তা চিকিৎসকরাই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। তবে সদ্য মৃতদের মাথা নেওয়া যেতে পারে—এমনটা বলছেন চিকিৎসকরা।
মাথা প্রতিস্থাপনের জন্য কার ‘মাথা’ পাওয়া যাবে, তা এখনও খোলসা করে বলতে কেউই রাজি নন। এমনিতেই চিনে যে কোনও অঙ্গের প্রতিস্থাপনের কাজটা খুব সহজ নয়। কারণ, অঙ্গ দান করার ব্যাপারে স্বাভাবিক অনীহা। কারণ, চিনাদের প্রচলিত বিশ্বাস, মৃত্যুর পরেও ‘জীবন’ রয়েছে। তাই নিজের দেহের ‘অধিকার’ ছাড়তে রাজি হন না কেউই !
সেক্ষেত্রে ‘মাথা’ কে দিতে চাইবেন, প্রশ্ন সেটাই! সম্ভবত, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের মাথার কথাই ভেবে রেখেছে ওই চিকিৎসক দল ‘তুরিন অ্যাডভান্সড নিউরোমডিউলেশান গ্রুপ’। গ্রুপের প্রধান বিশিষ্ট সার্জেন সের্গেই ক্যানাভারো শুধু এটুকুই বলেছেন, ‘‘উত্তর-পূর্ব চিনের হারবিন মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতেই ওই প্রতিস্থাপনের কথা ভাবা হয়েছে। আর যার মাথা বদলানো হবে, তার নাম ভ্যালেরি স্পিরিদোনভ।’’
সমস্যা রয়েছে আরও। কারণ, চিনে তো বটেই, মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে এখন বিশ্বজুড়েই সোচ্চার হয়েছেন মানুষ, বিভিন্ন রাষ্ট্রও তার শরিক হয়েছে, হচ্ছে উত্তরোত্তর। সেক্ষেত্রে, মৃত্যুদণ্ড উঠে গেলে প্রতিস্থাপনের জন্য ‘মাথা’ মিলবে কোথায়, সেই রহস্যটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে !
এ ছাড়াও মেডিক্যাল এথিকস নিয়ে রয়েছে সংশয়। সংশয় রয়েছে এই জটিল চিকিৎসার পদ্ধতি-প্রযুক্তি নিয়েও। আর সে সম্পর্কে কিছুই খোলসা করেননি চিকিৎসকরা।