এসি ছাড়াই ঘর ঠান্ডা

প্রকৃতির চাইতে বেশি আরাম দেবে এসি? যন্ত্র-বিনা ঘরের পরিবেশ ঠান্ডা করার বিকল্প উপায় কম নেই।

Advertisement

চিরশ্রী মজুমদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০৩
Share:

এসি ছাড়াই ঘর রাখুন ঠান্ডা।

গরমকালের এই বাড়াবাড়ি ঠান্ডা করার যন্ত্রটাকে চেনা গিয়েছে ঠিকই। তবে সে যন্ত্র এসি-র আপদও কম নয়। মাঝরাতে বা ভরদুপুরে জবর ঘুম পাড়ায় ঠিকই, কিন্তু দাম? তার উপরে যে ঘরে এসি, তার পাশের ঘরটিই অগ্নিকুণ্ড। ঠান্ডা অফিস বা সেন্ট্রালি কুল বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় পা দিলেই মনে হয় জ্বলন্ত কয়লায় নিজেকে সেঁকছি। এবং ইলেকট্রিক বিল? বিদ্যুতেরই ঝটকা মারে। এসি-র খিদে মেটাতে ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎভাণ্ডারে টান পড়ছে। সেই সুযোগে বিস্মৃতির অন্তরাল থেকে ধীরে ধীরে জেগে উঠছে লোডশেডিং নামের ভিলেনটিও। ও দিকে বাড়িতে যন্তরটি না থাকলে? আশপাশের ক্রমবর্ধমান এসি-কুলাররা মিলে যত গরম হলকা, তপ্ত দূষণ সব ওই এসিবিহীন বাড়িটার দিকে পাঠিয়ে দেয়। তা, এই জবজবে গরমে এসি-কে বেশি লাই না দিয়ে একটু অন্য ভাবে ঠান্ডা হাওয়া খাওয়ার বন্দোবস্ত করা গেলে মন্দ কি?

Advertisement

এসি-আবিষ্কারের আগেও জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় আসত। জলবায়ুর ভাবগতিক এমন অজানা বা সাংঘাতিক ছিল না বটে, তবে কমও যেত না। তখন বাঙালি কী করত? জানালায় খসখস ঝোলাত। খসখস নাকি এক রকম ঘাস। তাকে ঠিকঠাক বুনে পর্দা করে জানালা কিংবা বারান্দায় ঝোলান। সেটাই হবে তাপের মোক্ষম ঢাল। তাতে যদি একটু জল ঢেলে দিতে পারেন, তা হলে কিন্তু দিব্যি আরাম।

ইদানীং খসখস জোগাড় করা একটু হলেও শক্ত। বদলি হিসেবে, মোটা চাদর জলে ভিজিয়ে, শুকিয়ে নিয়ে, অল্প স্যাঁতসেতে ভাবটা রেখে পর্দার গায়ে সেঁটে দিতে পারেন। খসখসের বিকল্প হিসেবে মন্দ হবে না। বিছানার চাদর, বেডকভার ব্যবহার করুন হালকা রঙের পাতলা সুতির। তুলো তাপ টানে। তাই বালিশে ভরতে পারেন বাজরা বা চাল। একই রকম ভাবে, গদির মাঝখানে একটা মাদুর পেতে রাখলেও বিছানার গরম অনেকটাই কমে যাবে।

Advertisement

সিলিং ফ্যান চালু করলেই মনে হচ্ছে যেন গরম বাতাস ঘরে তাণ্ডব নাচছে? ইলেকট্রিশিয়ান ডেকে ব্লেডগুলোকে এমন ভাবে সাজান, যাতে পাখাটা ঘড়ির কাঁটার উলটো দিকে ঘোরে। এখন অবশ্য দোকানে এমন ধরনের রেডিমেড পাখা বা অনেক ব্লেডওয়ালা পাখা পাওয়া যায়। আচ্ছা, কখনও তিনটে-সাড়ে তিনটে নাগাদ আবহাওয়াটা খেয়াল করেছেন? মাটি থেকে একটা ভাপের স্তর ক্রমশ উপর দিকে ওঠে। ওই বিকেলবেলায় জানালাগুলো খুলে ফ্যানটা ফুল স্পিডে চালিয়ে দিন। মশাদের সঙ্গে গরম হাওয়াও কিন্তু বিদেয় হবে। বিজ্ঞান মতে তার জায়গা নেবে তুলনায় ঠান্ডা বাতাস।

এ বার এই বাউল বাতাসকেই ঘরে আটকে রাখার পালা। এ ব্যাপারে মাস্টার হল স্ট্যান্ডিং ফ্যান। স্টিলের ব্লেডওয়ালা বড়সড় পেডেস্টাল ফ্যান এনে বড় জানালাটার ধার ঘেঁষে ঈষৎ বেঁকিয়ে চালিয়ে দিন। কখনও ডানে ঘুরে, কখনও বাঁয়ে বেঁকে, পুরো ঘরে মিষ্টি হাওয়া দাপিয়ে বেড়াবে।

বঙ্গদেশে গরমের রমরমার কারণ তার গুমোট। ভ্যাপসানো হাবভাব। যে কারণে এখানে এসি-র জন্য আমাদের এই হাপিত্যেশ। তা এরও কিন্তু দিব্যি সমাধান আছে। সেই তুফানি পেডেস্টালদের সামনে এ বার আইসবক্স রেখে দিন। হাওয়া ওই জলীয় বাষ্প শুষে ঘরের মধ্যে হিমেল হাওয়া এনে দেবে। যদিও একনাগাড়ে এ ভাবে থাকা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক।

বাড়িতে অবশ্যই ক্রস-ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখুন। ৪৫ ডিগ্রি কোণে পরস্পরের দিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকবে বড় বড় দুটো জানালা। প্রতিটা জানলার নীচে একটা করে বক্স ফ্যান লাগান। অর্থাৎ বক্স ফ্যানগুলোও মুখোমুখি থাকল। এ বার ওই ফ্যান দুটো চালালে দেখবেন, আরাম লাগবেই। উইন্ডো এসি-র চেয়ে অনেক কম খরচে হয়ে যাবে। কিংবা প্রতি জানালার পাশে রাখুন একটি করে মাঝারি আকারের স্ট্যান্ডিং ফ্যান। সেটা চালালে বেশিক্ষণ চোখের পাতা খুলে রাখাই দায় হবে। রান্নাঘর বা বাথরুমে এগজ়স্ট ফ্যান আছে? সেগুলো বারবার চালান। ঘরের গরম হাওয়া বেরিয়ে যাবে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আপনার ফ্লোরটি কি ঠিক ছাদের নীচেই? ফলে হাওয়া যেমন, গরমও তো তেমনই। সে ক্ষেত্রে জলছাদ না হলে, ফলস সিলিং করিয়ে নিতে পারেন। এতে মাঝখানে একটা লেয়ার থাকবে। উত্তাপ বাছাধন সেখানেই কিছুটা হলেও আটকা পড়বে। আবার দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলে ছাদে বালতি বালতি জল ঢেলে আসুন। ছাদ যেন ভাল ভাবে ভিজে যায়। জল ছাদের অতিরিক্ত উত্তাপ শুষে নিয়ে ছাদের নীচের ঘরকে ঠান্ডা রাখবে।

আরও কয়েক রকম ভাবে, ঘরের মধ্যে তাপ ঢোকার আগেই তাকে রুখে দিতে পারেন। যেমন জানালার উপরে বড় কার্নিশ তৈরি করে রাখুন। সূর্যের কড়া আলো সরাসরি ঘরে ঢুকতে পারবে না। জানালার ধারে গাছ সাজিয়ে রাখলেও তারা তাপ শুষে নেবে। ঘর আপনা-আপনিই ঠান্ডা থাকবে।

গ্যাজেট আর আলো— যত কম, ততই ঠান্ডা ঘর। শোওয়ার আগে ভেজা তোয়ালে দিয়ে পা মুছে নিন। শরীরে তাপমাত্রা কিছুটা নামবে। আপনিও নরম আর শীতল স্বপ্নের দেশে পৌঁছে যাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন