Fatty Liver Problem

ফ্যাটি লিভার! পাতে রইল কী?

অনিয়মিত জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম, শারীরচর্চার অভাবে বেশ কয়েকটি অসুখ শরীরে বাসা বাঁধে, যার মধ্যে অন্যতম ফ্যাটি লিভার। উদ্বেগের বিষয় হল, সহজে এই অসুখের লক্ষণও বোঝা যায় না।

Advertisement

শ্রেয়া ঠাকুর

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৪:৪৭
Share:

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কয়েক দিন ধরে খেতে গেলেই বমি পাচ্ছে মঞ্জরীর। পাল্লা দিয়ে খাবারে অরুচি। পেটটাও কেমন ফুলে রয়েছে। সাত-পাঁচ না ভেবে ডাক্তারের কাছেই যাওয়া স্থির করল সে। রক্তপরীক্ষায় জানা গেল হেপাটিক স্টেটোসিস, অর্থাৎ ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ভুগছে। লিভার তথা যকৃতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চর্বি জমে গিয়েছে।

Advertisement

অনিয়মিত জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম, শারীরচর্চার অভাবে বেশ কয়েকটি অসুখ শরীরে বাসা বাঁধে, যার মধ্যে অন্যতম ফ্যাটি লিভার। উদ্বেগের বিষয় হল, সহজে এই অসুখের লক্ষণও বোঝা যায় না। সময়মতো সতর্ক না হলে ফ্যাটি লিভারের হাত ধরেই শরীরে বাসা বাঁধে লিভার সিরোসিস।

ফ্যাটি লিভার মূলত দু’ধরনের হয়— অ্যালকোহলিক ও নন-অ্যালকোহলিক। বেলাগাম মদ্যপান থেকে লিভারে ফ্যাট জমলে সেটি অ্যালকোহলিকের পর্যায়ে পড়ে। তবে জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের অনিয়ম থেকে হয় দ্বিতীয় ধরনটি, যেটি বেশি উদ্বেগের। কখনও কখনও নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বংশগতও হতে পারে।

Advertisement

অসুখ ধরা পড়ল, ওষুধ শুরু হল আর চিকিৎসক প্রেসক্রিপশনে লিখে দিলেন খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন প্রয়োজন। কিন্তু ঠিক কী ভাবে কী ধরনের পরিবর্তন করা হবে? ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ও ওয়েলনেস কনসালট্যান্ট অনন্যা ভৌমিক বললেন, “অসুখ সারাতে প্রয়োজনীয় শারীরচর্চা যেমন দরকার, তেমন ডায়েটে পরিবর্তনও ভীষণ জরুরি। তবে তার মানে এই নয় যে, যিনি মোটা তিনি রোগা হয়ে গেলেই ফ্যাটি লিভার ঠিক হয়ে যাবে। ওজন কমানোর ডায়েট আর ফ্যাটি লিভার সারানোর ডায়েট সম্পূর্ণ আলাদা। তার কারণ, দ্বিতীয়টিতে চর্বি কমানোর সঙ্গে সঙ্গে যকৃতের উৎসেচক বা এনজ়াইমগুলোর ক্ষরণ স্বাভাবিক করে তোলা হয়।” সুতরাং অসুখটিতে আক্রান্ত হলে খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে যথাযথ পরামর্শ জরুরি।

কী কী বাদ দেবেন?

প্রত্যেক মানুষের জীবনযাত্রার ধরন অনুসারে তাঁদের খাদ্যতালিকা বা ডায়েট চার্ট ভিন্ন হয়। তবে প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই খাদ্যে নিষেধাজ্ঞাগুলির মধ্যে মিল থাকে। সুতরাং ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে কোন খাবারগুলো বিষ, তা সহজেই বলা যায়।

  • মদ্যপান একেবারে নিষেধ: মদ্যপান থেকে হোক বা না হোক, যকৃতে প্রয়োজনের বেশি চর্বি জমলে এই অভ্যাসটি একেবারে ত্যাগ করতে হবে। তার কারণ, চর্বি জমার সঙ্গে মদ্যপানের সম্পর্ক সরাসরি।
  • চিনি ত্যাগ করা জরুরি: ফ্যাটি লিভারের সবচেয়ে বড় শত্রু কিন্তু চিনি বা শর্করা। সরাসরি চিনি কিংবা চিনি যোগ করা রয়েছে, যেমন বিস্কিট, কুকিজ়, ক্যান্ডি, সোডা, নরম পানীয়, প্যাকেটজাত ফলের রস, মিষ্টি প্রভৃতি খাবার একেবারে এড়িয়ে চলাই ভাল।
  • অতিরিক্ত নুন নয়: অনন্যা জানালেন, আগে আক্রান্তদের নুন খাওয়ার উপর কোনও বিধিনিষেধ ছিল না। তবে পরে একটি বড় গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা অতিরিক্ত নুন খান, ক্যানড ফুড খান, তাঁদের যকৃতে চর্বি জমার প্রবণতা বেশি। সুতরাং অতিরিক্ত নুন পাত থেকে একেবারে বাদ।
  • ভাজাভুজি: উচ্চ তাপমাত্রায় ও অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করে ভাজা খাবার বর্জনীয়।
  • রেড মিট: ফ্যাটি লিভারে আক্রান্তদের জন্য রেড মিট একেবারে নিষেধ। মুরগির মাংসে সেই নিষেধাজ্ঞা নেই।

—প্রতীকী চিত্র।

তা হলে কী খাব?

  • সবুজ আনাজ, শাক ও ফল: পাতে অবশ্যই থাকবে মরসুমি শাক-আনাজ ও ফল। অনেকে ভাবেন যে শুধু আনাজ ও শাক খেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়। পাতে ফলও রাখতে হবে।
  • ডাল ও বীজজাতীয় খাবার: গোটা মুগ, গোটা মুসুর, অঙ্কুরিত ছোলা ও মুগ, মটরশুঁটি এই অসুখে ভীষণ উপকারী। এগুলো ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে। অনন্যা জানালেন, এর পাশাপাশি চা চামচের এক বা দুই চামচ করে সূর্যমুখীর বীজও খাওয়া যেতেপারে রোজ। সূর্যমুখীর বীজ নাপেলে এমনি ছোলা-মুগ-মুসুরেও একই কাজ হয়।
  • মাছ: ফ্যাটি লিভারে মাছ খাওয়ায় কোনও অসুবিধে নেই, বরং উপকারী। অনন্যার মতে, এখন বাঙালির মধ্যে মাছ খাওয়া বেশ কমে গিয়েছে। অথচ মাছ প্রয়োজনীয়। ছোট বা বড় মাছ, বিশেষ করে মাছের ছাল ভীষণ উপকারী। পাশাপাশি খাওয়া যেতে পারে সামুদ্রিক মাছও।
  • হলুদ ও রসুন: খাবারে নিয়মিত রসুনের ব্যবহার যকৃতে চর্বি জমার প্রবণতা কমায়। সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদও খাওয়া যেতে পারে।
  • লেবু ও টক দই: দিনে কয়েক বার গরম জলে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই জল খাওয়া যেতে পারে। ডায়েটে টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক ভীষণ উপকারী।
  • বাদাম: রোজ তিন বা চার চামচ বাদাম খাওয়া ভীষণ উপকারী। কাজু, আমন্ডের মতো চিনাবাদামেও ভীষণ উপকার।

শুধু কি খাদ্যাভ্যাস বদলালেই হবে?

অসুখ সারাতে প্রয়োজন সত্তর শতাংশ ডায়েট আর তিরিশ শতাংশ শারীরিক কসরত। তবে তার মানেই এই নয় যে, রোজ জিমে যেতেই হবে। দৈনন্দিন জীবনে এলিভেটরের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করলে, একটা বাসস্টপ হেঁটে গেলে অর্থাৎ একটু সচল হওয়ার অভ্যেস থাকলেই যথেষ্ট। নিয়মিত হাঁটা তো খুব ভাল অভ্যেস। যাঁরা দৌড়তে পারেন তাঁরা নিয়মিত দৌড়নো বা জগিংও করতে পারেন। এর পাশাপাশি রয়েছে যোগাসন। প্রশিক্ষকের কাছে পরমর্শ নিয়ে যোগাসনও করা যেতে পারে। অ্যাপ দেখে নিজে নিজে না করাই বাঞ্ছনীয়, কারণ তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

অসুখ যেমন আছে, তাকে সারানোর উপায়ও আছে। নিজের শরীরের ইঙ্গিত বুঝতে হবে, যত্ন করতে হবে। তা হলেই হাতে পাওয়া যাবে সুস্থতার চাবিকাঠি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন