দূরে থাকা ভাই-দাদাকে ফোঁটা দিন ৭ উপায়ে। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমদুয়ারে পড়ল কাঁটা’-র ছড়া কাটার খেলা চলত। প্রণাম আর আশীর্বাদের নিয়ম না মানা নিয়ে ঝগড়া ছিল প্রতি বারের গল্প। তার পর উপহার দেওয়া-নেওয়া নিয়ে খুনসুটি তো লেগেই থাকত। সব শেষে? জমিয়ে খাওয়াদাওয়া, সিনেমা দেখা বা খেলাধুলো। এখন সবই অতীত। এর পর পেরিয়ে গিয়েছে এতগুলি হেমন্ত। এখন ভরসা কেবল প্রযুক্তি৷ টেলিফোনে বা ভিডিয়ো কলে দাদা বা ভাইয়ের মুখ দেখতে দেখতে ফোঁটা দেওয়ার কল্পনা। কোনও কোনও বার সেই সুযোগও হয় না সময়ের অভাবে। এক এক জন এক এক শহরে। কর্মসূত্রে শত, হাজার ক্রোশ দূরে এখন ভাই-বোনেরা।
মানুষ এখন এই দূরত্বে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। কাজ, পেশা অগ্রাধিকার পায় সব সময়ে। পাওয়ারই কথা। কিন্তু এই ছোটখাটো মুহূর্তগুলিও যে এই জীবনেরই অঙ্গ। সব সময়ে পিছনের সারিতেই বা কেন থাকবে? এই ভাইফোঁটায় তাই সে দিনগুলিকে গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। আপন হোন, বা তুতো, ভাইবোন, দূর থেকেই একে অপরের জন্য এই হেমন্তকে স্মরণীয় করে তুলুন। সময় বেশি লাগবে না, আবার ব্যক্তিগত ছোঁয়াও থাকবে। তবে প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া যোগাযোগ করা মুশকিলের। তাই ভিডিয়ো কলই হবে মূল সূত্রধর। আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র দিয়ে নানা ভাবে পালন করুন ভাইফোঁটা।
১. ডিজিটাল থালা: দিদি বা বোন ডিজিটাল থালা তৈরি করতে পারেন। ছবি বা ছোট ভিডিয়োয় ধান, দূর্বা, প্রদীপ, কাজল ও ঘিয়ের বাটি রেখে, পাশে মিষ্টি সাজিয়ে দিন। শেষে ভাইয়ের ছবি বা ভিডিয়ো কলে ফোঁটা দেওয়ার অভিনয় করতে পারেন। চাইলে সঙ্গে একটি গান বা ভয়েস রেকর্ডিং যোগ করা যায়। যেখানে বোন আশীর্বাদ করছেন বা ছড়া কাটছেন।
২. ডেলিভারি অ্যাপ: অনলাইন ডেলিভারি অ্যাপের সাহায্য নিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই দূরে থাকা ভাই বা দাদার জন্য ফোঁটার বন্দোবস্ত করে ফেলুন। একটি থালা, ধান, দূর্বা, প্রদীপ, কাজল, ঘি, মিষ্টি, আর যা যা লাগে, সব ভাইয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দিন। সাজানোর দায়িত্ব থাক তাঁরই উপর। তার পর সময় বুঝে ভিডিয়ো কল করে নিন।
৩.ভাইবোনের খেলা: ইইন্টারনেটে নানা ধরনের খেলাধুলোর সাহায্য নিয়ে এ বছরের ভাইফোঁটা স্মরণীয় করে তুলতে পারেন। একে অপরের শৈশব নিয়ে র্যাপিড ফায়ার বা মেমরি গেম, অথবা একে অপরের পছন্দ নিয়ে প্রশ্নোত্তর করার খেলাও খেলতে পারে। শেষে ফোঁটা ও আশীর্বাদ ভার্চুয়ালিই দেওয়া যায়।
৪. স্মৃতিতে ভরা ভিডিয়ো: দু’জনেই ছোট ছোট ভিডিয়ো ক্লিপ রেকর্ড করে সেগুলি পর পর জুড়ে স্মৃতিমেদুর এক ভিডিয়ো বানাতে পারেন। তাতে থাকতে পারে ছোটবেলার গল্প, স্মৃতি, বা একে অপরের জন্য বার্তা।
৫. একই মিষ্টিতে মিষ্টিমুখ: যে শহরেই থাকুন না কেন, দু’জনেই একই ব্র্যান্ডের বা একই ধরনের মিষ্টি অর্ডার করে রাখুন। তার পর ভিডিয়োয় ফোঁটা দিয়ে একসঙ্গে খান।
৬. খুদেদের অংশগ্রহণ: যদি পরিবারে ছোটরা থাকে, তবে তাদেরও ভাইফোঁটার আনন্দে যুক্ত করা যায়। বাবা-মায়েরা তাদের উৎসাহ দিতে পারেন যেন শিশুরা নিজেরা উপহার বানায় বা বেছে নেয় তাদের মামা বা পিসির জন্য। এতে উৎসব আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। ভিডিয়ো কলে শিশুরা আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলতে পারে, গল্প করতে পারে। এতে সম্পর্কের উষ্ণতা টের পাবেন সকলেই।
৭. একই রেসিপিতে রান্না: দু’জনেই একই রেসিপিতে রান্না করতে পারেন। তার পর ভিডিয়ো কলে বসে একসঙ্গে সেই খাবার উপভোগ করুন। আড্ডার ফাঁকেই ভাইফোঁটাও পালন হয়ে যাক।
তবে সবশেষে একটি প্রতিজ্ঞা এই উৎসবকে আরও রঙিন করে তুলতে পারে। আগামী বছর ভাইফোঁটা পালন হবে মুখোমুখি বসে, ভার্চুয়ালি নয়। এই প্রতিশ্রুতিই ১২টা মাস ভৌগোলিক দূরত্বকে কমিয়ে আনবে।