ছবি:শাটারস্টক
শুধু ভাইরাল ফিভারে রক্ষা নেই, দোসর ডেঙ্গি আর ম্যালেরিয়া!
বর্ষা শুরু হতে না হতে জ্বরে তপ্ত নদিয়া। গত বছর ডেঙ্গির তাণ্ডবের পর এ বছর শুরুর থেকেই স্বাস্থ্য দফতর ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা এবং মশা নিধন ও নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় হয়েছিল। এর জন্য খরচ করেছে লক্ষ-লক্ষ টাকা। বৃষ্টির জমা জলে যাতে মশা ডিম পারতে না পারে তার জন্য বারে বারে অভিযান হয়েছে। তার পরেও গত বছর জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাকে এখনই ছাপিয়ে গিয়েছে এ বছরের পরিসংখ্যান। জ্বরের মরসুম ভাল করে শুরু হওয়ার আগেই ছক্কা হাঁকিয়ে বসে রয়েছে ভাইরাল ফিভার, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি—প্রত্যেকে।
এতেই প্রমাদ গণছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের অনেকে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। এক প্রবীণ চিকিৎসক বলেই ফেললেন, ‘‘জুলাই মাস থেকে ক্রমশ বাড়াতে থাকে জ্বরের প্রকোপ ও রোগীর সংখ্যা। জ্বরের দাপট চলতে থাকে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে শীত পড়ার আগে পর্যন্ত। শুরুতেই যদি আক্রান্ত এই রকম বেড়ে যায় তা হলে পরের দিকে কী হবে!’’
নদিয়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত বছর জুলাই মাস পর্যন্ত ভাইরাল ফিভারে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৪০ হাজার ৩২৩ জন। চলতি বছর জুলাই মাসে সেই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৩৯০ জন। অর্থাৎ প্রায় তিন হাজার বেশি। গত বছর জুলাই মাস পর্যন্ত নদিয়ায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন ৬৭ জন। এ বছর জুলাই মাস পর্যন্ত সংখ্যাটা হয়েছে ১২৪। ম্যালেরিয়ায় গত বছর জুলাই মাস পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছিলেন ১০০ জন। সেটা এ বছর জুলাইতে হয়েছে ১১৫ জন।
জ্বর এড়াতে কী করবেন
• যতটা সম্ভব বৃষ্টি এড়ানো
• স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় হাল্কা গরম জলে স্নান
• ভিজে গেলে বাড়ি এসে দ্রুত শুকনো জামাকাপড় পরে গরম জলে ভাপ নেওয়া বা পা গরম জলে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখা
• বাড়ির চারপাশে যাতে জল না জমে তা লক্ষ রাখা
• মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো
• তিনদিনের বেশি জ্বর হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া
• নিজের থেকে অ্যান্টি বায়োটিক না খাওয়া
স্বাস্থ্য দফতর জ্বর নিয়ে আগে থেকে ব্যবস্থা নিয়েও কেন আক্রান্তের সংখ্যা কমাতে পারল না? স্বাস্থ্যকর্তারা
কিন্তু একে ব্যর্থতা বলছেন না। তাঁদের দাবি, মানুষ আগের থেকে বেশি হুঁশিয়ার হয়েছেন। বেশি সংখ্যক রোগী ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন, রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছেন, তাই পরিসংখ্যান বাড়ছে। এতে আখেরে ভাল হবে। প্রথম দিকে সংখ্যাটা বেশি হবে, পরের দিকে কমতে থাকবে। সংখ্যাটা না-বাড়লেই বরং চিন্তার কারণ ছিল। তাতে প্রমাণিত হত, নীচুতলার কর্মীরা ঘরে-ঘরে গিয়ে সচেতনতা ছড়ানোর কাজ করছেন না।
তবে সমালোচনা এতে থামেনি। চিকিৎসকদের একটা অংশ স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে সহমত নন। তাঁদের মতে, সচেতনতা তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পৌঁছয়নি। মশা নিধনের কাজও যথাযথ হয়নি। তাঁদের অভিযোগ, চাকদহের মতো জায়গায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে হু-হু করে। গত বছর এই সময় পর্যন্ত সেখানে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৭ জন। এ বার সেটা বেড়ে হয়েছে ৪৬জন। তাঁদের অভিযোগ, নদিয়া জেলা জুড়ে এখনও সর্বত্র নিকাশি অন্যতম বড় সমস্যা। আর জমা জল বল জ্বরের অন্যতম কারণ। এ ছাড়া রয়েছে জঞ্জাল জমে থাকার সমস্যা। স্বাস্থ্য দফতরের পাশাপাশি পুরসভাগুলিকেও উদ্যোগী হতে হবে। অনেকের আবার মত, ডেঙ্গি আক্রান্ত হলেও তাকে ডেঙ্গি যাতে না-বলা হয় তার জন্য সরকারি স্তরে গত বার অত্যন্ত চাপ ছিল। এক প্রবীণ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘রোগের আসল পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য চেপে দিলে কখনও সঠিক ভাবে রোগ মোকাবিলা সম্ভব নয়।’’ স্বাস্থ্যকর্তারা যতই বলুন, ‘চিন্তার কারণ নেই’, নবদ্বীপে গত রবিবার থেকে জ্বরে পাঁচ জন ভর্তি হয়েছেন। রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে একই দিনে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ১৭ জন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলছেন, “এলাকায় গিয়ে শিবির করে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।”