অপরূপা অর্কিড

এমন মোহময়ী আর উচ্চ দরের অর্কিডের প্রেমে পড়েননি, তেমন মানুষ কমই আছেন। ধৈর্য ধরলে বাড়িতেও বেড়ে উঠবে হরেক রকমের অর্কিডবহু বহু বছর ধরে অর্কিড পৃথিবীতে বিরাজমান। বিভিন্ন রং, আকার, রকমফেরের অর্কিড বরাবরই আকর্ষক। একটি ঘরে আর কিছু না থাক, অর্কিডের ছোঁয়াতেই তা হয়ে ওঠে অসাধারণ।

Advertisement

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
Share:

একটা আদ্যোপান্ত বেরঙিন দিনও ভাল হয়ে যায় সবুজের ছোঁয়ায়। আর সেখানে যদি বাড়িতেই থাকে অর্কিড, তা হলে মন ভাল হতে বাধ্য। অর্কিডের প্রেমে পড়েননি, এমন মানুষ কমই আছেন। কিন্তু কী ভাবে বাছবেন অর্কিড? কেমনই বা হবে তার যত্নআত্তি? রইল প্রাথমিক গাইড।

Advertisement

গোড়ার কথা

Advertisement

বহু বহু বছর ধরে অর্কিড পৃথিবীতে বিরাজমান। বিভিন্ন রং, আকার, রকমফেরের অর্কিড বরাবরই আকর্ষক। একটি ঘরে আর কিছু না থাক, অর্কিডের ছোঁয়াতেই তা হয়ে ওঠে অসাধারণ। একটা সময় পর্যন্ত অর্কিডকে ফসিলে রূপান্তরিত করারও চল ছিল। অর্কিডের সংখ্যা নেহাত কম নয়। আন্টার্কটিকা ছাড়া পৃথিবীর সব প্রান্তেই অর্কিড বেড়ে ওঠে। প্রায় ২৫ হাজার প্রজাতির এবং দু’লক্ষের উপরে হাইব্রিড অর্কিড পাওয়া যায়।

রকমফের

অর্কিডের সংখ্যাটা যে নেহাত কম নয়, তা আগেই বলা হয়েছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় পাঁচ ধরনের অর্কিডের কথা এখানে বলা হল।

n সিমবিডিয়াম: হালকা সবুজ পাপড়ি, তাতে গাঢ় গোলাপি ছোঁয়া। সিমবিডিয়াম অর্কিডের এই প্রজাতির সৌন্দর্য তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো।

n সার্কোকিলাস: এই ধরনের অর্কিডের পাপড়ি সাদা। মাঝে থাকে হলুদ ও লাল রঙের ছোঁয়া।

n ফ্যালেনপসিস: গোলাপি এবং সাদার চোখজুড়ানো মিলমিশে ফ্যালেনপসিস অর্কিড নজর কাড়ে সকলের।

n ডেনড্রোবিয়াম: সবচেয়ে জনপ্রিয় গোলাপি, সাদা, হলুদরঙা এই অর্কিড পেয়ে যাবেন সর্বত্র।

n ক্যাটেলেয়া: এই অর্কিডের হলুদ রং বড় স্নিগ্ধ। তার সঙ্গে রয়েছে গাঢ় গোলাপি। দেখতে বেশ উজ্জ্বল।

বাড়িতেই যত্ন

বেশির ভাগ মানুষেরই ধারণা, অর্কিড উচ্চ দরের, যথেষ্ট বিরল এবং বাড়িতে অর্কিড বড় করে তোলা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। এ বিষয়ে সত্যিই সন্দেহ নেই যে, অর্কিড উচ্চ দরের। কিন্তু চাইলেই বাড়িতেও অর্কিডের গাছ লাগাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে...

আলো: অর্কিড বাড়িতে এনে প্রথমেই এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে ভাল আলো আসে। অর্কিডের জন্য সব সময়ে যে সূর্যের আলোই প্রয়োজন, এমন নয়। অর্কিড কৃত্রিম আলোতেও দিব্যি বেঁচেবর্তে থাকে।

তাপমাত্রা: ঠান্ডা নয়, অর্কিড সাধারণত উষ্ণ তাপমাত্রাই ভালবাসে। ৬০ থেকে ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে রাখতে হবে তাপমাত্রা। বেডরুমে অর্কিড রাখতে চাইলে জানালার ধারে কিংবা বিছানার পাশের কাউন্টারে রাখুন।

সার ও বরফ: শুনতে অবাক লাগলেও অর্কিডের মাটিতে সপ্তাহে ক’টি বরফের টুকরো দিন। দরকার পড়লে ফার্টিলাইজ়ারও ব্যবহার করতে পারেন।

শিকড়ের দিকে খেয়াল: অর্কিডের শিকড় খুব সহজেই বুঝিয়ে দেয় তার স্বাস্থ্যের কথা। সবুজ রঙের শিকড় হলে বুঝবেন গাছের সার, জল, আলো সব পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। অন্য দিকে শিকড় সাদাটে কিংবা ধূসর হতে শুরু করলে জল দেওয়া প্রয়োজন। আর যদি শিকড় বাদামি বা খয়েরি হতে শুরু করে, বুঝবেন যে, অতিরিক্ত জল দেওয়া হচ্ছে অর্কিডে। সে ক্ষেত্রে জল দেওয়া বন্ধ করুন। যতক্ষণ না শিকড় সব জল শুষে নেয়।

পাতার যত্ন: শিকড়ের মতোই পাতাও জানান দেয়, অর্কিড কেমন আছে। পাতার রং সাদা হতে শুরু করলে বুঝবেন অতিরিক্ত আলো পড়ছে। সে ক্ষেত্রে ক’দিন কম আলোয় রাখুন অর্কিড। গাঢ় সবুজ পাতার অর্থ অর্কিড পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো পাচ্ছে না। আবার পাতায় কালো রং ধরতে শুরু করলে বুঝবেন, ব্যাকটিরিয়া কিংবা ফাঙ্গাস ধরেছে অর্কিডে। সারে অতিরিক্ত মিনারেলের পরিমাণ থেকেও এ রকম হতে পারে।

অর্কিডের বিশ্রাম

মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর মতো অর্কিডেরও বিশ্রাম প্রয়োজন হয়। অনেক সময়ে দেখা যায়, সমস্ত পাতা ঝরে গিয়েছে। পাশাপাশি কাণ্ডটিতে খয়েরি রং ধরতে শুরু করেছে। তার মানেই কিন্তু অর্কিড মৃত নয়। যেমন যত্নআত্তি প্রয়োজন, তেমনই করতে থাকুন। অনেক সময়ে হয়তো মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু অর্কিড রেস্টিং টাইম থেকে ফিরে এসে ফের ফুলের জন্ম দেবে। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন শুধু ধৈর্যের।

বাড়ির সেন্টার টেবিলে হোক বা বেডরুমের একপাশে... অর্কিড স্বচ্ছন্দে জায়গা করে নেয় সর্বত্র। অর্কিডে ফুল ধরতে সময় লাগে। কিন্তু সুদীর্ঘ অপেক্ষার পর যখন অর্কিড রংবেরঙের ডানা মেলে ধরে, তখন কিন্তু তার থেকে চোখ ফেরানো দায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন