বৃদ্ধদের যত্নে অ্যাপ আইআইটি ছাত্রদের

খড়্গপুর আইআইটির একদল পড়ুয়া বানিয়েছেন এমনই মুশকিল আসান মোবাইল অ্যাপ।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৯ ০২:৩৪
Share:

সেই অ্যাপ। বাজারে আসার অপেক্ষায়। নিজস্ব চিত্র

ছেলে-মেয়ে বাইরে। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা। হঠাৎ তাঁদের কেউ পড়ে জখম হলেন। তাঁদের জানানোর আগেই ছেলে বা মেয়ের স্মার্টফোনে চলে আসবে দুর্ঘটনার খবর। খবর যাবে চিকিৎসকের কাছেও। ঘড়ি ধরে ওষুধ খেতে হয় পরিবারের বয়স্ক সদস্যকে। কখন, কোন ওষুধ খেতে হবে বলবে স্মার্টফোন। বাবা-মায়ের মন খারাপ! একা লাগছে! বিদেশ-বিভুঁইয়ে থাকা ছেলেমেয়েরা জেনে যাবেন স্মার্টফোনেই।

Advertisement

খড়্গপুর আইআইটির একদল পড়ুয়া বানিয়েছেন এমনই মুশকিল আসান মোবাইল অ্যাপ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) নির্ভর এই অ্যাপের নাম ‘কেয়ার ৪ ইউ’। ঘরে ঘরে একা হয়ে যাওয়া বয়স্ক মানুষের যত্নেই তিন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের চার বিটেক পড়ুয়া এই অ্যাপ বানিয়েছেন। দলের সদস্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এখন এআই নির্ভর অ্যাপের অধিকাংশই নতুন প্রজন্মের প্রয়োজনে তৈরি হচ্ছে। কিন্তু আমরা ভেবেছিলাম এআই-কে কী ভাবে বয়স্কদের প্রয়োজনে কাজে লাগানো যায়।’’ দলের অন্য দুই সদস্য কণিষ্ক হালদার ও পার্থসারথি রায় জানালেন, আপাতত অ্যাপটি গুগলের পর্যবেক্ষণে। ক’মাসের মধ্যেই তা ‘গুগল প্লে’-তে মিলবে বলে আশা।

এই অ্যাপ দু’টি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলকে সংযুক্ত করবে। এক দিকে অ্যাপ ইনস্টল করতে হবে বাড়ির বয়স্ক সদস্যের মোবাইলে। অ্যাপটি থাকতে হবে তাঁর পরিজন (কেয়ারগিভার)-র মোবাইলেও। দু’টি মোবাইলে লগ-ইন করলেই মিলবে পরিষেবা। স্মার্টফোন বয়স্ক মানুষটির শরীর ছুঁয়ে থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য স্মার্ট ব্যান্ডে অ্যাপ সংযুক্ত করার চেষ্টা চলছে।

Advertisement

কী ভাবে কাজ করবে অ্যাপ?

আপাতত এতে চারটি পরিষেবা মিলবে। ‘চ্যাটবট’ ছাড়া বাকি তিনটি পরিষেবা ইন্টারনেট ছাড়াই পাওয়া যাবে। প্রথমত, স্নায়বিক নেটওয়ার্ক নির্ভর ‘ফল ডিটেকশন অ্যালগোরিদম’— এর ক্ষেত্রে বৃদ্ধ মানুষটি পড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পরিজন, চিকিৎসকের কাছে ফোন চলে যাবে। শুধু জরুরি মোবাইল নম্বরগুলি অ্যাপে সংযুক্ত করতে হবে।

দ্বিতীয় পরিষেবা ‘মেডিসিন’। এ ক্ষেত্রে বয়স্ক মানুষটিকে কখন, কোন ওষুধ খেতে হবে তা মনে করাবে অ্যাপ। ওষুধের স্ট্র্যাপ মোবাইল স্ক্রিনের সামনে ধরলেই নথিভুক্ত হয়ে যাবে। ওষুধ ফুরিয়ে গেলে সেই খবরও যাতে অ্যাপ জানিয়ে দেয়, পরের ধাপে সেই চেষ্টা চালাচ্ছেন পড়ুয়ারা।

তৃতীয় পরিষেবা হল ‘ইমোশন’। এতে বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার মুখের ছবি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে তুলে নেবে অ্যাপ। তার পরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় তাঁর মানসিক পরিস্থিতি বিচার করে সার্ভারে নথিভুক্ত হবে। বৃদ্ধের পরিজন অ্যাপের ‘হিস্ট্রি’ বোতাম ছুঁলেই মনের সেই অবস্থার হদিস পাবেন।

শেষ ধাপে ‘চ্যাটবট’-এ বৃদ্ধের মনের অবস্থা লিখবে অ্যাপ। সঙ্গে বাজবে মানানসই পুরনো দিনের গান বা মনীষীদের বাণী। ওই মানসিক অবস্থা জানাতে এসএমএস বা কল করা যাবে পরিজনকে।

ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেক্ট্রিক্যাল কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আদিস্বদীপ্ত মণ্ডল জানালেন, মূলত জাতীয়স্তরের ‘এআই হ্যাকাথন’ প্রতিযোগিতার কথা মাথায় রেখে এই অ্যাপ তৈরিতে মাস দেড়েক সময় লেগেছে। যে হেতু এটি সফটওয়্যার নির্ভর তাই তেমন খরচ হয়নি।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন