একাকী সময় কাটানো মানেই একাকিত্ব নয়

ছেলের বিয়ের পরে অবশেষে অশান্তির সংসার থেকে ডিভোর্সটা নিয়েই নিয়েছেন বছর আটান্নর শম্পাদেবী। এক একটি কামরার ফ্ল্যাট নিয়েছেন। ঠিক করে ফেলেছেন, যা যা এত দিন করা ‌হয়নি, এ বার সব করবেন। সাঁতার শিখছেন, ভর্তি হয়েছেন জাপানি ভাষার ক্লাসেও।

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৭ ১৫:৫৫
Share:

—প্রতীকী ছবি।

স্ত্রীর মৃত্যুর পরে মেয়েরা বলেছিলেন তাঁদের সঙ্গেই থাকতে। রাজি হননি বছর সত্তরের রাজীববাবু। ঠিক করেছেন, নিজের বাড়িতে একাই থাকবেন। অনেক বই পড়া যে এখনও বাকি!

Advertisement

সল্টলেকে বেশ বড়সড় বাড়ি আছে বাবা-মায়ের। নিজের একটা সুন্দর ঘর আছে সেখানে। বাবা-মায়ের সঙ্গেও মতের বিশেষ অমিল নেই।
তবু বছর তিরিশের স্কুল শিক্ষিকা সঙ্গীতা বিয়ে না করেই সেই বাড়ি ছেড়েছেন। ভাড়ার ফ্ল্যাটে নিজের মতো কিছুটা সময় কাটাতে ভালবাসেন।

ছেলের বিয়ের পরে অবশেষে অশান্তির সংসার থেকে ডিভোর্সটা নিয়েই নিয়েছেন বছর আটান্নর শম্পাদেবী। এক একটি কামরার ফ্ল্যাট নিয়েছেন। ঠিক করে ফেলেছেন, যা যা এত দিন করা ‌হয়নি, এ বার সব করবেন। সাঁতার শিখছেন, ভর্তি হয়েছেন জাপানি ভাষার ক্লাসেও।

Advertisement

একা মানেই যে সব সময়ে একাকিত্ব নয়!

ক্রমে সাবালক হয়ে ওঠা তিলোত্তমা এখন একা থাকার আনন্দটাও উপভোগ করতে চাইছে ভরপুর। নিত্যদিন মাথা তোলা নতুন আবাসনে বাড়ছে ওয়ান বিএইচকে-র সংখ্যা। দ্রুত বদলে যাওয়া চারপাশটা বার করে নিতে শেখাচ্ছে ‘নিজস্ব সময়’। যা ভালবেসে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন একার দিনযাপন।

ব্যস্ত শহরে নিরিবিলি পাওয়া যে সহজ নয়। চারদিকে সারা ক্ষণ হইচই, আশপাশটাকে মানিয়ে চলার চাপ সর্বত্র। একমাত্র বাড়ির ভিতরটাকেই করে তোলা যায় নিজের মতো। কিছুটা সময় যাতে হয় একেবারে নিজের, শান্তির, চুপচাপ। যেখানে কারও সঙ্গেই করতে হবে না আপস। নিজের পছন্দের কাজও যেন করার সময় থাকে সেখানে। রোজের খাবারটা যেন হয় শুধুই নিজের রুচি মতো। তেমন ভাবেই জীবন সাজিয়ে শান্তি পাচ্ছেন বহু শহুরে বাঙালি। এই বার্তা বারবার ঘুরে আসছে শহুরে যাপন নিয়ে হওয়া নানা সমীক্ষায়।

এক সময়ে একা সিনেমা দেখা, একা ফুচকা খাওয়া বা একা একা ছুটি কাটাতে শহরের বাইরে যাওয়া এ শহরের মানুষদের কাছে ছিল রীতিমতো বিস্ময়কর। এখন তা হয়েছে ফ্যাশন। ‘সেলফি ডেট’-এ যাওয়া অভ্যাস করে ফেলেছে বাঙালি। সেজেগুজে একাই বেড়াতে যাচ্ছেন, কফিশপে সময় কাটাচ্ছেন।

সমীক্ষা বলছে, ব্যস্ততা বাড়ার সঙ্গে শহুরে জীবনে একাকিত্ব যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে একা সময়কে উদ্‌যাপন করার প্রবণতাও। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, এতে আরও বেশি আত্মকেন্দ্রিক হচ্ছে চারপাশটা। তবে কেউ কেউ এই প্রবণতাকেই স্বাগত জানাচ্ছেন।

যেমন এক মার্কিন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘একা অনেকটা সময় এমনিতেই থাকতে হবে। তবে তা আনন্দে কাটানোই তো ভাল। একা থাকাকে বাধ্যতা মনে করলে মনের অসুখ হয়।’’

আরও পড়ুন
ডায়রিয়া কি আসলে আমাদের সুস্থ রাখে?

অভিনেতা মাধবী মুখোপাধ্যায় যেমন বহু বছর ধরে একাই থাকেন। বলেন, ‘‘একা থাকার তো অনেক আনন্দ আছে। যখন যেমন গান শুনতে, ছবি দেখতে ইচ্ছে হয়, সেটাই করা যায়। কারও পছন্দের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয় না।’’
মাধবীদেবীর সহজ বক্তব্য, যে দিনটা হইচই করতে ইচ্ছে করবে, সে দিন পছন্দের লোকেদের কাছে চলে গেলেই তো হল!

নিজের মতো করে গুছিয়ে থাকার ইচ্ছে যে বাঙালিদের মধ্যে বেড়েছে, তা মানছেন এ শহরের মনোবিদ উশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘অধিকাংশ লোকেই এখন স্বাধীন জীবন চান। তাই হয়তো নিজের পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া বাড়ছে। নিজেকে গুরুত্ব দিতে গেলে তো অন্যদের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব তৈরি করতেই হয় অনেক সময়ে। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই হচ্ছে।’’

মনোরোগের চিকিৎসক জ্যোতির্ময় সমাজদার আবার মনে করিয়ে দেন, একা থাকার সঙ্গে সব সময়ে একাকিত্ব যুক্তই নয়। কেউ অনেকের মধ্যে থেকেও একাকিত্বে আক্রান্ত হতে পারেন, কেউ বা বছর বছর একা থেকেও আনন্দেই দিন কাটাতে পারেন। মনের জোর থাকলে অনেকেই একা ভাল ভাবে থাকেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন