দার্জিলিংয়ে বয়স্কদের জেই টিকাকরণ হবে ডিসেম্বরেই

গোটা দার্জিলিং জেলার বয়স্ক বাসিন্দাদের জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের টিকাকরণ করাতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। বুধবার এ কথা জানান দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস। আগামী ২৩ নভেম্বর থেকে পাহাড়ের ৮টি ব্লকে এবং শিলিগুড়ির ফাঁসিদেওয়া ব্লকে শিবির করে বয়স্ক বাসিন্দাদের জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৫০
Share:

গোটা দার্জিলিং জেলার বয়স্ক বাসিন্দাদের জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের টিকাকরণ করাতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। বুধবার এ কথা জানান দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস। আগামী ২৩ নভেম্বর থেকে পাহাড়ের ৮টি ব্লকে এবং শিলিগুড়ির ফাঁসিদেওয়া ব্লকে শিবির করে বয়স্ক বাসিন্দাদের জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জেই টিকা দেওয়া শুরু হবে শিলিগুড়ি পুর এলাকার বাসিন্দাদের। ডিসেম্বরের মধ্যে জেলার সমস্ত ব্লকে বয়স্ক বাসিন্দাদের জেই টিকাকরণ করাতে তৎপর স্বাস্থ্য দফতর। এই দফায় জেলার ১০ লক্ষ বাসিন্দাকে জেই টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

Advertisement

২০১১ সাল থেকে উত্তরবঙ্গে জেই’র মারাত্মক প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। গত দুই বছরে দুই শতাধিক ব্যক্তি মারা গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বয়স্ক বাসিন্দাদের সংখ্যাই বেশি। গত বছর পর্যন্ত কম বয়েসীদের জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের টিকা দেওয়া হলেও বয়স্ক বাসিন্দাদের জন্য জেই টিকা ছিল না। গত বছর পরীক্ষামূলক ভাবে অসমে বয়স্ক বাসিন্দাদের টিকা দেওয়া হয়। তা সফল হতেই এ বছর মে মাসে দেশের মধ্যে প্রথম উত্তরবঙ্গে-ই বয়স্ক বাসিন্দাদের জেই টিকা দেওয়া হয়। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে যেখানে জেই প্রকোপ বেশি দেখা গিয়েছে বাছাই করে সেই সমস্ত ৮ টি ব্লকে ১০ লক্ষ বাসিন্দাকে জেই টিকা দেওয়া হয়।

দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘জেলার সমস্ত বয়স্ক বাসিন্দাকে জেই টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিবির করে ওই টিকাকরণ কর্মসূচি হবে। ইতিমধ্যেই পাহাড় এবং সমতলের ওই সমস্ত ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতি বৈঠক হয়েছে।’’

Advertisement

দার্জিলিং জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই দুই দফায় শিলিগুড়ি মহকুমার মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি এবং খড়িবাড়ি ৩ টি ব্লকে সাড়ে ৪ লক্ষ বাসিন্দাকে জেই টিকাকরণ করা হয়েছে।

বাকি এলাকার মধ্যে প্রথম দফায় পাহাড়ের ৮ টি ব্লক এবং ফাঁসিদেওয়ায় সাড়ে ৬ লক্ষ বাসিন্দাকে টিকা দেওয়া হবে। তারপর পুর এলাকায় সাড়ে তিন লক্ষের মতো বয়স্ক বাসিন্দাদের জেই টিকা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। পুর এলাকায় টিকাকরণের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মী বা পরিকাঠামো নেই। সে কারণে গ্রামাঞ্চলের ১২০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে দিয়ে ওই কাজ করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গত বছর জানুয়ারি থেকে অগস্টের মধ্যে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে জেই এবং এইএস-এ ১৬৫ জনের মৃত্যু হয়। এ বছর কিছু এলাকায় জেই টিকাকরণের পর মৃত্যুর সংখ্যা কমে হয়েছে ৬০ জনের মতো। সে কারণেই বয়স্কদের টিকাকারণের দিকে ঝুঁকেছে স্বাস্থ্য দফতর।

এ দিন শিলিগুড়ির ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক, জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ, ডায়াগনেস্টিক সেন্টার এবং পুরসভার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। রোগ প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নিতে হবে সে ব্যাপারেও বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সঠিক কত তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কেন না শহরের নার্সিংহোমগুলির অধিকাংশই তাদের কাছে চিকিৎসা করাতে আসা সন্দেহভাজন ডেঙ্গি রোগীদের রক্তের নমুনা সরকারি হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন না। বুধবার ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে মহকুমা পরিষদে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বৈঠকে তাই তাদের সকলকে ওই ধরনের রোগীর রক্তের নমুনা সরকারি হাসপাতালে পাঠাতে বলা হয়েছে। শহরে ৫০টির মতো নার্সিংহোম থাকলেও এ দিন বৈঠকে ৩২ টি নার্সিংহোমের প্রতিনিধিরা ছিলেন। তার মধ্যে ১৪ টি নার্সিংহোম কেবল সন্দেহভাজন ডেঙ্গি রোগীদের রক্তের নমুনা সরকারি হাসপাতালে পাঠাচ্ছে। কেবল তাদের তথ্যই সরকারি নথিতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।

মঙ্গলবার মেয়র অশোক ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন তাঁকে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তাতে গত ৩ মাসে শিলিগুড়ি শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ জন। গত ১০ দিনে আরও ৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরই জানিয়েছে, পুর এলাকায় এ বছর এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ জন। তার মধ্যে অগস্ট মাসে ১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। নার্সিংহোমগুলি থেকে ডেঙ্গি রোগীদের সম্পর্কে তথ্য না মেলায় এই সংখ্যা অনেক বেশি হবে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। এ দিন বৈঠকে উপস্থিত নার্সিংহোমগুলির প্রতিনিধিরা অবশ্য এর পর থেকে সন্দেহভাজন ডেঙ্গি রোগীদের রক্তের নমুনা সরকারি হাসপাতালে পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর এখন পর্যন্ত জেলায় ৩৪ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন।

গত বছর এই সময় পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৮০। ২০১৩ সালে অক্টোবর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৩১৬ জন। গত বছর পুর এলাকায় এই সময় পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৫৯, ২০১৩ সালে অক্টোবর মাস পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৯৪ জন।

মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘এ বছর ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। তবে নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি দেখা দিয়েছিল। সেই জন্য বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন