কলকাতায় জীবন্ত হয়ে উঠল স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যানেরা। শুরু হল আন্তর্জাতিক কমিকস উৎসব ‘কমিক কন’। নিজস্ব চিত্র।
দুনিয়া কাঁপানো ‘কমিক কন’ এ বার কলকাতায়। বিশ্ব বাংলা মেলাপ্রাঙ্গণে সপ্তাহান্তের দু’দিন হইহই করে কমিকসের চরিত্রেরা জীবন্ত হয়ে উঠবে। পশ্চিমি বিশ্বের ‘কমিক কন’ বা কমিক বুক কনভেনশনের আয়োজন ষাটের দশক থেকেই হয়ে আসছে। হাঁদা-ভোঁদা, বাঁটুল, নন্টে-ফন্টের শহরও বা তার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবে কেন। দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ, অহমদাবাদের মতো শহর পেরিয়ে কমিক কনের মতো বড় মাপের আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান এ বার কলকাতাতেও শুরু হল। ভাবুন তো, ছেলেবেলায় পড়া রঙিন সব কার্টুন চরিত্রদের জগতে আরও একবার হারিয়ে যাওয়া যাবে। হাতে পাওয়া যাবে, সেই সব বিশ্বমানের কমিকস স্রষ্টাদের বই, কথাও বলা যাবে তাঁদের সঙ্গে। তবে কেবল ভিনদেশি কমিকস নয়, খাঁটি বাংলা কমিকসের স্রষ্টারাও থাকবেন একই ছাদের তলায়।
কলকাতায় ‘কমিক কন’। নিজস্ব চিত্র।
বাঁটুল দি গ্রেট , হাঁদা-ভোঁদা পড়ে আসা বাঙালি কিন্তু টিনটিন, আর্চি বা স্পাইডারম্যান, এক্স মেন-দের দিব্যি আপন করে নিয়েছে সেই কবে থেকেই। সে কারণেই লি ফকের ফ্যান্টম অতি সহজেই হয়ে উঠেছে বাংলার ‘অরণ্যদেব’। ইদানীং কালে কার্টুন নিয়ে যেমন, কমিকস নিয়েও প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা বেড়েছে কলকাতায়। কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি (কেসিসি)-র প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সেই ভাবনাই নতুন নতুন রূপ পাচ্ছে। ‘কমিক কন’-এর এ শহরে পা রাখাও সেই ভাবেই। নানা রকম কমিকসের বই প্রকাশিত হবে। আমেরিকান লেখক জন লেম্যান, জনপ্রিয় কমিকস আর্চির অন্যতম শিল্পী বিল গোলিহারের মতো ব্যক্তিত্ব উপস্থিত থাকবেন। আবার বাংলার সেরা কার্টুনিস্ট, কমিকস লেখকেরাও তাঁদের বই প্রকাশ করবেন।
শহরের বুকে আন্তর্জাতিক কমিকস উৎসব, আনন্দে মাতল কমবয়সিরা। নিজস্ব চিত্র।
‘কমিক কন’ শুরু হয়েছিল ১৯৬০ সাল থেকে। নিউ ইয়র্কে প্রথম শুরু হয় ‘কমিক বুক কনভেশন’। বিভিন্ন কমিকস বইয়ের লেখকেরা একত্র হয়ে তাঁদের বই প্রকাশ করতেন, কথা বলতেন অনুরাগীদের সঙ্গে। তবে সেটি ছিল আদ্যোপান্ত নীরস বই প্রকাশ অনুষ্ঠান। তাতে তেমন আনন্দের রং ছিল না। সেই ধারারই বিবর্তন হতে হতে ১৯৭০ সালে ‘কমিক মিনিকন’-এ শতাধিক কার্টুন অনুরাগীদের ভিড়ে ছোটখাটো একটা কার্নিভালের আয়োজন হয়। সেই থেকেই শুরু। আজকের ‘কমিক কন’ হল বড়সড় একটা আনন্দোৎসব, যাতে ভেসে যেতে পারেন আট থেকে আশি। কমিক চরিত্রদের মতো সেজে সেই ছেলেবেলার মতো হুল্লোড়ে মাততে পারেন ষাটোর্ধ্ব প্রবীণও।
কমিক কনের নানা ইভেন্ট হচ্ছে কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র।
বাংলার মানুষের কমিকস-প্রীতির কথা মাথায় রেখেই কলকাতাতেও এমন আন্তর্জাতিক মানের উৎসবকে নিয়ে আসার কথা ভেবেছেন দেশে কমিক কনের প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার যতীন বর্মা। তিনি বললেন, “দিল্লি-সহ দেশের নানা শহরে কমিক কনের আয়োজন করার সময় থেকেই বুঝি যে, সাধারণ মানুষের কমিকসের প্রতি উন্মাদনা কতটা। নবীন থেকে প্রবীণ প্রজন্ম, আপন করে নিয়েছে কমিক কনকে। তাই কলকাতাই বা বাদ যায় কেন? এখানে বই প্রকাশ থেকে শুরু করে গেম-সহ নানা রকম অনুষ্ঠান থাকবে। স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যান জ়োন রাখা হবে খুদেদের জন্য। ভিডিয়ো গেম খেলার ব্যবস্থা থাকবে।”
কচিকাঁচাদের জন্য থাকছে নানা আয়োজন। নিজস্ব চিত্র।
কার্নিভালে যেমন সদ্যপ্রকাশিত বিদেশি কমিকস থাকবে, তেমনই স্টলের টেবিল আলো করে থাকবে আসা দিনের ইন্দ্রজাল কমিকস, ডিসি বা অমর চিত্রকথাও। পাশাপাশি কমিক বুক নায়কদের অ্যাকশন ফিগার, পোস্টার, টিশার্ট, ব্যাজ ইত্যাদি সামগ্রীর প্রলোভন তো রয়েইছে। কমিক কন-এর অন্যতম আকর্ষণ ‘কসপ্লে’। কমিকসের চরিত্র সেজে বিভিন্ন রকমের ‘পারফরম্যান্স’। যতীন জানাচ্ছেন, কসপ্লের জন্য কার্নিভাল চত্বরের একপাশে মঞ্চ রয়েছে। কার্নিভালে দেখা মিলতেই পারে সব রকমের স্পাইডারম্যানের। কার্নিভালে ঢুকতে টিকিটের খরচ মাথাপিছু ৮৯৯ টাকা।
গেমিং জ়োনও থাকছে। নিজস্ব চিত্র।
বাংলা কমিকস বলতেই যে অগ্রণীদের নাম মনে পড়ে তাঁরা হলেন— নারায়ণ দেবনাথ, কাফি খাঁ (প্রফুল্লচন্দ্র লাহিড়ী), ময়ূখ চৌধুরী (শক্তিপ্রসাদ রায়চৌধুরী), শৈল চক্রবর্তী, প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়, সুফি, তুষার চট্টোপাধ্যায়, সুবীর রায় প্রমুখ। পত্রপত্রিকায় লিখে-এঁকে এঁরাই জনপ্রিয় করেছেন বাংলা কমিকসকে, তৈরি করেছেন কমিকসপ্রেমী কয়েক প্রজন্ম। চর্চা হবে এঁদের ঘিরেও। পাশাপাশি কমিকস-শিল্পী, গবেষক, সংগ্রাহকদের নিয়েও নানা অনুষ্ঠান হবে। সাড়া যে বেশ আশাব্যঞ্জকই হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত কমিক কনের আয়োজকেরা।