তারা সময়মতোই অনুমোদন চেয়ে কেন্দ্রের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল বলে দাবি করছে রাজ্য সরকার।
কেন্দ্রের বক্তব্য, এমন কোনও চিঠি তাদের কাছে পৌঁছয়নি।
এই টানাপড়েনের জেরে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে গ্রামীণ স্তরে অক্সিলিয়ারি নার্স মিডওয়াইফ (এএনএম)-এর কয়েকশো পদে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে রাজ্যের গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবা।
মূলত গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্যের দিকটি দেখেন এএনএম-কর্মীরা। গ্রামের মহিলা ও শিশুদের পুষ্টির দিকে নজর রাখা, বাচ্চাদের টিকাকরণ, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফাইলেরিয়াসিস বা গোদের ওষুধ খাওয়ানো, যক্ষ্মারোগীদের ওষুধ খাওয়ানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন তাঁরা। পরিবার পরিকল্পনায় সাহায্য করারও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাঁদের। বাড়ির বদলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই যাতে প্রসব হয়, সেই বিষয়ে নজর রাখাটাও তাঁদেরই দায়িত্ব। এএনএম-কর্মীদের তত্ত্বাবধানে থাকেন আশা এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। তাঁরাই এএনএম-কর্মীদের কাছে এলাকার যাবতীয় খবর পৌঁছে দেন।
এএনএম-কর্মীর অভাবে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে, তার খতিয়ান মিলছে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই। যেমন: পোলিও টিকা না-খাওয়ালে বা সময়মতো অন্যান্য টিকাকরণ না-হলে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। আয়রন ট্যাবলেট না-খাওয়ালে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা বাড়তে পারে মহিলাদের। অপরিচ্ছন্ন, অস্বাস্থ্যকর জায়গায় অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রসবের ফলে জন্মানোর সময়েই শিশু মারা যেতে পারে, সংক্রমণ ঘটতে পারে মায়েরও। সময়মতো ওষুধ না-পড়লে যক্ষ্মা বা ফাইলেরিয়াসিস রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। এবং এই সব কাজই করে থাকেন এএনএম-কর্মীরা। তাই সাবসেন্টারে এএনএম না-থাকলে যে-কোনও সময়েই এই ধরনের বিপত্তি ঘটতে পারে।
এ-হেন গুরুত্বপূর্ণ কর্মীদের নিয়োগ বন্ধ আছে কেন?
নিয়ম অনুযায়ী এএনএম-কর্মীদের বেতনের টাকা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। তাদের কাছ থেকে অনুমোদন না-আসায় রাজ্যের তরফে নিয়োগ বন্ধ রাখার নোটিস জারি করা হয়েছে।
কেন মেলেনি অনুমোদন?
রাজ্যকেই দোষারোপ করছেন দিল্লিতে গ্রামীণ স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনার দায়িত্বপ্রাপ্ত আর সি ডেন্ডি। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “পুরোটাই রাজ্যের দোষ। অনুমোদন চেয়ে অন্যান্য রাজ্য চিঠি পাঠিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ থেকে এই বিষয়ে অনুমোদন চেয়ে কেন্দ্রের কাছে এখনও কোনও চিঠিই আসেনি।”
রাজ্যে গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের অধিকর্তা সঙ্ঘমিত্রা ঘোষের দাবি অন্য রকম। তিনি জানাচ্ছেন, অনুমোদনের জন্য যা যা করণীয়, স্বাস্থ্য ভবন সময়মতো সবটাই করেছিল। “সব ঠিকঠাক করা সত্ত্বেও অন্যান্য বছরের মতো এ বার কেন্দ্রের অনুমোদন মেলেনি কেন, সেটা আমার কাছেও স্পষ্ট নয়,” বলছেন তিনি।
অথচ এএনএম-পদে নিয়োগের জন্য বাছাই এবং প্রশিক্ষণ পর্ব শেষ হয়েছে অনেক আগে। ২০০৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে এএনএম পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রতিটি রাজ্যের জেলা স্তরে মোট ৩০০০ মহিলা কর্মী নিয়োগ করার কথা।
তাঁরা জেলায় জেলায় সাবসেন্টারগুলিতে নিযুক্ত হবেন। মেধার ভিত্তিতে বাছাই করার পরে প্রার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ’১৩ সালে এই প্রকল্পে এক দফা কর্মী নিয়োগ করার কথা ছিল। ’১১-র নভেম্বরে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। দেড় বছরের প্রশিক্ষণ পর্ব শেষ হয় ’১৩-র মে মাসে। তার পরেও বছর ঘুরে গিয়েছে। কিন্তু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোন প্রার্থীকে কখন, কোথায় নিয়োগ করা হবে, তার সদুত্তর মিলছে না।
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, এএনএম-কর্মী খাতে রাজ্যের কাছে যে-টাকা মজুত ছিল, তা প্রার্থীদের প্রশিক্ষণ দিতেই খরচ হয়ে গিয়েছে। তাই কেন্দ্রের কাছ থেকে নতুন করে অনুমোদন না-পাওয়া পর্যন্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় নেই।
অনুমোদন যদি না-ই এসে থাকে, এত দিন সেটা প্রার্থীদের জানানো হয়নি কেন? অনুমোদন ছাড়া কেনই বা টাকা ও সময় নষ্ট করে এত দিন ধরে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হল?
এর সদুত্তর দিতে পারেননি স্বাস্থ্যকর্তারা। প্রার্থীদের অভিযোগ, ’১৩-র মে মাসে প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার তিন-চার মাস পর থেকেই তাঁরা বারবার স্বাস্থ্য ভবনের কাছে এই বিষয়টি জানতে চেয়েছেন। কিন্তু সেখানকার কর্তারা বারে বারেই বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন।