হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে গিয়ে মিলছে না প্রকল্পের সুবিধা, এমনই অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের রাস্ট্রীয় স্বাস্থ্য বীমা যোজনার উপভোক্তারা। তার ফলে তাঁরা বিপাকে পড়েছেন বলে দাবি করেছেন বিপিএল তালিকাভুক্ত ওই কার্ডের গ্রাহকেরা। জেলা প্রশাসনের আশ্বাস, সমস্যা দ্রুত মিটে যাবে।
২০০৮ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার বিপিএল তালিকাভুক্তদের জন্য এই স্বাস্থ্য বিমা চালু করেন। এককালীন ৩০ টাকা করে জমা দিয়ে ৩০০০০ টাকা পর্যন্ত সাহায্য পাওয়া যায় এই বিমা যোজনায়। বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারকে একটি করে কার্ড দেওয়া হয়েছিল। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে এই কার্ড দেখিয়ে ৩০০০০ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুযোগ পাবেন ওই কার্ড প্রাপকেরা। প্রশাসন সূত্রের খবর, বর্ধমান জেলায় এখনও পর্যন্ত ৭ লক্ষের বেশি মানুষ এই যোজনার আওতায় এসেছেন। এই বিমা কার্ডের বৈধতা ১ এপ্রিল থেকে পরের বছর ৩১ মার্চ পর্যন্ত থাকে। সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে কার্ডের নবীকরণ করাতে হয়। এই কার্ড পেয়ে বহু গরিব পরিবার চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু চলতি বছরে ৩১ মার্চের আগে ওই কার্ডের নবীকরণ হয়নি। কারণ, কেন্দ্রের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়, কার্ডগুলির মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, ৩১ মার্চের পরেও কার্ডগুলি আগের মতোই কাজ করবে। এই বিজ্ঞপ্তি রাজ্য স্বাস্থ্য এবং সমাজকল্যাণ দফতরেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেই মতো ওই দফতর থেকে বর্ধমানের জেলাশাসকের কাছেও সেই বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বিপত্তি বেধেছে এখানেই। জেলার বহু সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এপ্রিল থেকে ওই কার্ডের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন কার্ড প্রাপকেরা। তাঁদের দাবি, হাসপাতালে ওই কার্ড নিয়ে চিকিৎসা করাতে গেলে অনেক জায়গাতেই কার্ডের কোনও অস্তিত্ব নেই বলে জানানো হয়েছে। ফলে, উপভোক্তারা মুশকিলে পড়ছেন। সম্প্রতি কাঁকসার নানা এলাকা থেকে কয়েক জন ওই কার্ড নিয়ে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে গিয়েছিলেন চিকিৎসা করাতে। কার্ডটি কম্পিউটারে পরীক্ষা করার সময় তার কোনও অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছিল না বলে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়। ফলে, ওই কার্ডের প্রাপকদের পকেট থেকে টাকা খরচ করে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। তবে কিছু দিন এমন সমস্যা চললেও ইদানীং দুর্গাপুর হাসপাতালে আপাতত এই সমস্যা মিটেছে বলে জানা গিয়েছে। হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘কিছু সমস্যা ছিল। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যা মিটিয়ে ফেলেছি। আর কোনও সমস্যা নেই।’’
কিন্তু দুর্গাপুরে সমস্যা মিটে গেলেও জেলার অন্যত্র সমস্যা চলছেই বলে জানা গিয়েছে। যেমন, কালনা মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এপ্রিলের শুরু থেকেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এর ফলে বহু গরিব মানুষজন যে বিপাকে পড়ছেন তা-ও হাসপাতালের তরফে স্বীকার করা হয়েছে। শুধু সরকারি হাসপাতাল নয়, জেলার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমেও একই সমস্যা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলার স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিভাগের অধীনস্থ রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিমা যোজনার অফিসের তরফে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন হাসপাতালের কম্পিউটারে ‘সফটওয়্যার’ সংক্রান্ত গোলযোগের কারণে এই সমস্যা হয়েছে। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।