স্বাস্থ্যকর্মীদের উৎসাহ দিতে কাজের মূল্যায়ণ করে পুরস্কৃত করল রঘুনাথপুর ১ ব্লক স্বাস্থ্য দফতর। কাজের ছ’টি ক্ষেত্র নির্বাচন করে সেই বিষয়গুলির উপরে যে সব কর্মী ভাল কাজ করেছেন, তাঁদের পুরস্কৃত করা হল। রঘুনাথপুর ১ বিডিও সুনীতিকুমার গুছাইতের দাবি, জেলার মধ্যে তাঁরাই প্রথম এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন।
গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগের তালিকাটা বরাবরই বেশ দীর্ঘ। আর এই বিষয়টিকেই মাথায় রেখে রঘুনাথপুর ১ ব্লক স্বাস্থ্য দফতর চাইছে এই ধরনের কর্মসূচি নিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবার মান বাড়াতে। বিডিও সুনীতিকুমার বাবু ও ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক লিধুরাম হাঁসদা দু’জনেই বলেন, ‘‘এই ধরনের উদ্যোগের ফলে যাঁরা কাজে অন্যদের চাইতে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন, তাঁরাও এ বার নিজেদের দায়িত্ব পালনে আরও উৎসাহী হবেন। প্রত্যেক কর্মী দায়িত্ব পালন করলে সার্বিক ভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবার মানের উন্নয়ন ঘটবে।’’
বস্তুত গত দু’বছর ধরে কাজের মূল্যায়ণের ভিত্তিতে পঞ্চায়েত কর্মীদের পুরস্কৃত করে আসছে নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত। তাতে কাজও দিচ্ছে বলে মনে করেন ব্লক প্রশাসন। সেই পথেই এগোল রঘুনাথপুর ১ ব্লক স্বাস্থ্য দফতর। ‘স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ত্বরান্বিত করতে ও গতি আনার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের পুরস্কার প্রদান’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি সম্প্রতি রঘুনাথপুরে বিপিএইচসি-তে হয়ে গেল। ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকের ২০টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র, দু’টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ১৪০ জন কর্মীর মধ্যে পুরস্কৃত করা হয়েছে ১২ জনকে।
প্রসূতি ও শিশুদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার কাজে প্রথম হয়েছে আড়রা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে যুগ্ম ভাবে প্রথম হয়েছে আড়রা পঞ্চায়েতেরই বেনিয়াসোল ও পাঁচুডাঙা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। শিশুদের পূর্ণ টিকাকরণে প্রথম হয়েছে খাজুরা পঞ্চায়েতের মধুতটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। আর মহিলাদের বন্ধ্যাকরণে সেরা নির্বাচিত হয়েছে বাবুগ্রাম উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। এ ছাড়াও নিজ দায়িত্ব পালন, কাজের সার্বিক মূল্যায়ণের নিরিখে সেরা স্বাস্থ্যকর্মী নির্বাচিত হয়েছেন মধুতটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মী স্নিগ্ধা সেনগুপ্ত। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য কর্মীদের হাতে স্মারক ও মানপত্র তুলে দেওয়া হয়।
বস্তুত স্বাস্থ্য পরিষেবার মান উন্নয়নে ব্লক স্বাস্থ্য দফতর যে পাঁচটি ক্ষেত্র বেছে নিয়েছিল প্রতিটিতেই কর্মীরা একশো শতাংশ কাজ করেছেন বলে দাবি করেছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক। তিনি জানান, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তানের জন্ম দিলে প্রসূতি ও শিশু দু’জনের পক্ষেই ভাল। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রোগ-সমস্যা এড়ানো যায়। বেনিয়াসোল ও পাঁচুডাঙায় গত এক বছরে দেখা গিয়েছে সমস্ত সন্তান প্রসবই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হয়েছে। একই ভাবে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে প্রসূতি ও শিশুদের পরবর্তী এক বছর ধরে পরিচর্যার ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে একশো শতাংশ সাফল্য পেয়েছে আড়রা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। মহিলাদের বন্ধ্যাকরণে লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণের বেশি কাজ করছে বাবুগ্রাম উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র।
বছরভর ব্লক স্বাস্থ্য দফতর এই মূল্যায়ন করেছে। লিধুরামবাবু বলেন, ‘‘প্রতি মাসের মূল্যায়ণ করার সময়েই সারা বছরের কাজের ভিত্তিতে কর্মীদের মূল্যায়ণ করে তাদের পুরস্কৃত করার পরিকল্পনাটা মাথায় এসেছিল। বিডিও-র সাথে আলোচনা করে এই পুরস্কার চালু করার সিদ্ধান্ত নিই।’’ এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্লকের স্বাস্থ্যকর্মীরাও। সেরা কর্মীর শিরোপা পাওয়া স্নিগ্ধাদেবী বলেন, ‘‘আগে ব্লকে এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কাজের স্বীকৃতি পেলে সকলেই কাজে আরও উৎসাহ পায়। আমার ক্ষেত্রে এই স্বীকৃতি কাজে বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগাবে।”