—প্রতীকী ছবি।
দীর্ঘ ৬ মিনিট সব কিছু স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার পরেই চিকিৎসা বি়জ্ঞানের সেই বিরলতম ঘটনাটি ঘটে যায় সুদূর করাচিতে। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার হানিফ মহম্মদ। টেলিভিশনের পর্দায় সেই খবর ফুটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে হইচই পড়ে যায় চিকিৎসকমহলেও। টানা ছ’মিনিট হৃদযন্ত্র বন্ধ থাকার পর ফের চালু হওয়ার কথাটা মানতে অসুবিধা হচ্ছে এ শহরের কার্ডিওথোরাসিক ভাস্কুলার সার্জন অমিতাভ চক্রবর্তীর। অসম্ভব হয়ত নয়, কিন্তু এই ঘটনা খুবই বিরল বলে জানান তিনি। তাঁর চিকিৎসা জীবনে এমন অভিজ্ঞতাও নেই বলেও জানান অমিতাভবাবু।
তিনি জানান, সাধারণত সর্বাধিক তিন মিনিট হৃদযন্ত্র স্তব্ধ হয়ে থাকার পর তা আবার চালু হতে পারে। এবং এতে রোগীও পুরোপুরি আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারেন। কারণ, দেহে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাওয়ার তিন মিনিট পর্যন্ত মস্তিষ্কের কোষে অক্সিজেন সরবরাহ হয়ে থাকে। যতক্ষণ মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ চালু থাকে রোগীও বেঁচে থাকে। তা বন্ধ হলেই অক্সিজেনের অভাবে ব্রেন ডেথ হয়। রোগীকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই অবস্থাকে বলা হয় অ্যানক্সিএনসেফালোপ্যাথি।
কিন্তু হানিফ মহম্মদের ক্ষেত্রে সময়টা ছিল এর দ্বিগুণ। ছ’মিনিট। তাহলে এক্ষেত্রে কী করে সম্ভব হল?
চিকিৎসক অমিতাভবাবু উড়িয়ে দিচ্ছেন না দু’টি সম্ভাবনার কথা। এক, যাঁরা হাইপোথারমিয়ায় ভোগেন তাঁদের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব আর দুই, ভেন্টিলেশনে থাকার সময় ঠিকঠাক ম্যাসাজ দিতে পারলে এটা সম্ভব।
আরও পড়ুন: অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে ওঠার পর এবার সত্যিই মারা গেলেন হানিফ মহম্মদ
কীভাবে?
তিনি জানান, হাইপোথারমিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে দেহের তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। সে কারণে, দেহের মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়া মন্থর হয়। তাই তাঁদের দেহে অক্সিজেনের চাহিদাও কম হয়ে থাকে। সে কারণে, হৃদযন্ত্র স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার পর হাইপোথারমিয়ার রোগীরা অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি ক্ষণ বাঁচতে পারেন। এই একই ‘অবিশ্বাস্য’ ঘটনা ঘটতে পারে ম্যাসাজের সাহায্যেও। দক্ষ হাতে ম্যাসাজের মাধ্যমে কিছুক্ষণ মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন চালু রাখতে পারা সম্ভব। তবে এই ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্র চালু করা গেলেও বেশিক্ষণ তা স্থায়ী হয় না।
বোধহয় এটিই হল হানিফ মহম্মদের ক্ষেত্রে। ৬ মিনিট তাঁর হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে পড়েছিল। পরে ফের তা সচল হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু বেশিক্ষণ তা স্থায়ী হয়নি। অবশেষে হাসপাতালেই মারা যান তিনি।