ক্যানসার-খরচে লাগাম টানবে সচেতনতাই

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, ২০০৮ সালে পৃথিবীতে ক্যানসারে মৃত্যু হয়েছিল ৭৬ লক্ষ মানুষের। যা মোট মৃত্যুর ১৩ শতাংশ। ২০৩০ সালে ক্যানসারের কারণে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়াবে ১ কোটি ৩১ লক্ষে।

Advertisement

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

বেঙ্গল অঙ্কোলজি ফাউন্ডেশন আয়োজিত আলোচনাসভায় বলছেন প্রদীপ মিত্র। রয়েছেন গৌতম মুখোপাধ্যায় (বাঁ দিকে)। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, ২০০৮ সালে পৃথিবীতে ক্যানসারে মৃত্যু হয়েছিল ৭৬ লক্ষ মানুষের। যা মোট মৃত্যুর ১৩ শতাংশ। ২০৩০ সালে ক্যানসারের কারণে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়াবে ১ কোটি ৩১ লক্ষে। চিকিৎসা ও গবেষণার উন্নতি সত্ত্বেও এই সংখ্যা বৃদ্ধি প্রশ্ন তুলছে, ক্যানসারে লাগাম টানতে কোনটা আগে জরুরি— চিকিৎসার বিপুল খরচের বোঝা কমানোর ভাবনা, না কি রোগের প্রাথমিক নির্ণয়?

Advertisement

রবিবার বেঙ্গল অঙ্কোলজি ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক আলোচনায় উঠে এল এই বিষয়টিই। চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় ও কৌশিক ঘোষের পাশাপাশি আলোচনায় যোগ দেন বিনোদন জগতের কল্যাণ সেন বরাট, ঋতা দত্ত চক্রবর্তী, বাদশা মৈত্র, সোনালি চৌধুরী। তাঁদের প্রত্যেকের কথায় উঠে এল ক্যানসারের চিকিৎসার বিপুল খরচের বিষয়টি।

বহু সময়েই ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় দীর্ঘদিন খরচ বহন করা অসম্ভব হয় পরিজনেদের পক্ষে। অনেকেই যন্ত্রণা উপশমে বিকল্প চিকিৎসার দ্বারস্থ হন। চিকিৎসকদের মতে, তাতে রোগের প্রকোপ বাড়ে। যদিও সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, শহরের কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে ক্যানসার চিকিৎসা হচ্ছে। আগের থেকে তা আধুনিকও, তবে প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। ফলে পরিষেবার প্রতীক্ষায় থাকা রোগীর লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। চিকিৎসার অপেক্ষায় থাকা অনেক রোগীর মৃত্যুও হয়। এই সব কারণে আতঙ্কিত পরিবার শেষ সঞ্চয়টুকু খরচ করেও বেসরকারি হাসপাতালেরই শরণাপন্ন হয়ে থাকে। অথবা চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়।

Advertisement

ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি, চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, তবে কি রোগ নির্ণয়ের থেকে রোগের বিপুল খরচ বহন করার বিভিন্ন উপায় নিয়েই আমাদের
ভাবার সময় এসেছে? মানছেন না সুবীরবাবু এবং কৌশিকবাবু-সহ অন্যেরা। সুবীরবাবুর মতে, ক্যানসার নিয়ে যদি মানুষ সচেতন হন, তবেই তো রোগ প্রথম বা দ্বিতীয় পর্যায়ে ধরা পড়বে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসার খরচ কম হবে এবং সুস্থ জীবনে ফেরার সম্ভাবনাও বাড়বে।

ক্যানসার হলে ফিরে আসা শুধু নয়, অন্যদেরও ফিরিয়ে আনা যায়। এবং তা হতে পারে সচেতনতার প্রচারের মাধ্যমেই। তারই এক উদাহরণ ব্যারাকপুরের অমিত সান্যাল। জুতোর ব্যবসায়ী অমিত বছর দশেক আগে সুবীরবাবুর কাছে তাঁর এক আত্মীয়াকে নিয়ে গিয়েছিলেন। তখনই ধরা পড়ে নিজের জিভের ছোট্ট ফুসকুড়িই আসলে ক্যানসার। অস্ত্রোপচার, রেডিয়েশন এবং কেমোথেরাপির পরে গত নয় বছর ধরে সুস্থ জীবন কাটাচ্ছেন অমিত। ব্যারাকপুর অঞ্চল ও তার বাইরে মুর্শিদাবাদ, মালদহে তাঁর পরিচিতি ছড়িয়েছে। রোগীদের উপদেষ্টা হিসেবে অমিত ওরফে পিন্টুকে ভরসা করেন স্থানীয় চিকিৎসকেরাও। কারণ ক্যানসার রোগীদের বন্ধু তিনি। রোগী ও তাঁর পরিবারের মনোবল বাড়ানো, পাশে থেকে
চিকিৎসক এবং হাসপাতালে যোগাযোগ করে দেওয়া, একাই সামলান পিন্টু। এমন অনেক পিন্টুরা এগিয়ে এলে রোগ সচেতনতার যে প্রসার ঘটবে, তা-ও উঠে এল এ দিনের আলোচনায়।
কিন্তু কী করছে রাজ্য সরকার? প্রশ্নের উত্তরে রাজ্য শিক্ষা-স্বাস্থ্য অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র জানান, শহরের কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্র আনায় আগের তুলনায় পরিষেবার উন্নতি হয়েছে। পুরোদমে সেই পরিষেবা শুরু করতে একটু সময় লাগবে বলে তাঁর দাবি। তবে চিকিৎসক ও নার্সের অভাবে পরিষেবা যে জেলাস্তরে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না, সেটাও মানলেন তিনি। পাশাপাশি, চিকিৎসা-বিমাকারী সংস্থাগুলিকে আরও সংবেদনশীল হওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারকে সরব হতে হবে বলে জানালেন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা। তিনি বলেন, ‘‘মাস দুই আগে একটি সার্কুলার জারি করেছে রাজ্য সরকার। তাতে বলা হয়েছে, কোনও মেডিক্যাল কলেজে ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু করার পরে জেলার রোগীকে কেমোথেরাপি বা ক্যানসারের ওষুধ কিনতে কলকাতায় আসতে হবে না। জেলাতেই মিলবে প্রয়োজনীয় ওষুধ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন