নীল আকাশেও কালো মেঘের আনাগোনা

সম্প্রতি অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে ‘দ্য ব্লু স্কাই’-এর একটি প্রদর্শনী শেষ হল। অবশ্য এটুকুই আশা যে, প্রদর্শনীতে যা ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে, তা এক দিন নিশ্চয়ই শুধরে যাবে।

Advertisement

অতনু বসু

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৯ ০০:০১
Share:

পরিস্ফুট: ‘দ্য ব্লু স্কাই’ প্রদর্শনীর কয়েকটি কাজ

অতি যত্নশীলতা অনেক সময়ে কাঠিন্যকেই প্রশ্রয় দিয়ে বসে। নিজস্ব সৃষ্টির ক্ষেত্রে শিল্পীকে অন্তত এটুকু খেয়াল রাখতেই হয় যে, ছবি হোক বা ভাস্কর্য, যত্নের সঙ্গে পরিমিতি বোধ থাকা জরুরি। বিশেষ করে কাজটির ফিনিশিং যেন ভাল হয়। তাই অনেক সময়ে অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতা এবং যত্ন থাকা সত্ত্বেও মার খেয়ে যায় সৃষ্টি।

Advertisement

নয়নাভিরাম নীল আকাশে অকস্মাৎ কালো মেঘের উত্থান তাই কখনও শিল্পের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। সম্প্রতি অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে ‘দ্য ব্লু স্কাই’-এর একটি প্রদর্শনী শেষ হল। অবশ্য এটুকুই আশা যে, প্রদর্শনীতে যা ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে, তা এক দিন নিশ্চয়ই শুধরে যাবে। ঠিক যেমন নীলাকাশের কালো মেঘ সরে যায় কোনও না কোনও এক দিন।

প্রদর্শনীর প্রবীণতম শিল্পী প্রভাতচন্দ্র সেন। দেশভাগের আগেই ঢাকা থেকে আর্ট কলেজের শিক্ষা সম্পন্ন করে কলকাতায় চলে আসেন। আশি ছুঁতে চলা ওই শিল্পীর টেকনিক ও স্টাইলাইজ়েশনে এক ধরনের মোনোটোনি কাজ করেছে। যদিও জোড়া পায়রা নিয়ে করা তাঁর কাজটি অত্যন্ত উন্নত মানের। বর্ণ ব্যবহার ও টেকনিকে বিষয় বৈচিত্র থাকলেও ডিটেলে যাননি। সে অবয়বপ্রধান রচনাই হোক বা অন্য বিষয়।

Advertisement

ব্রাশের ক্ষুদ্র ছোপ, শুকনো বর্ণ, সাদাটে ভাবই বেশি। তার মধ্যেও বর্ণ বিশ্লেষণ সংক্ষিপ্ত, আপাত অনুজ্জ্বল। কিন্তু রচনা যেন বড্ড শ্লথ হয়ে আসা মুহূর্তগুলোকে কোথাও একটা আটকে দিচ্ছে। ড্রয়িংয়ের জোরালো আবেদনহীন কাজগুলোতে আলো-অন্ধকার, ছায়াতপ, গাঢ়ত্ব কিছুই সে ভাবে পরিস্ফুট নয়। অনেক পুরনো হয়ে যাওয়া ছবির মতো... কিন্তু এই টেকনিকেই সুযোগ ছিল কাজগুলোকে আরও প্রণিধানযোগ্য করে তোলার।

অঞ্জন সেনগুপ্ত উদ্দাম অথচ কখনও স্তিমিত, কখনও বড় বেশি ঔজ্জ্বল্যপ্রিয়। ফলে অতি বিমূর্তায়নে তাঁর ব্রাশ, স্প্যাচুলা ও বর্ণের উচ্ছ্বাস কিন্তু নির্দিষ্ট দিশার দিকে দিক নির্দেশ করে না। পোলকের মনস্তত্ত্ব ও দর্শনকে তিনি অনুধাবন করেননি। বর্ণবিশ্লেষণের এ হেন নিরীক্ষায় যত্রতত্র ছড়ানো-ছিটোনো রং ও কিছু ছাপছোপ, টুকরো ফর্মেশন ছবিকে কোথাও কোথাও ব্যাহত করেছে। কিন্তু যেখানে ছোট ছোট কিছু সংবেদনশীল নারীমুখ এঁকেছেন, সেখানে আলো-ছায়া ও টেকনিকের স্বতঃস্ফূর্ততায় অনেক বেশি কুশলী।

চিন্তাভাবনা আরও সুদূরপ্রসারী হলে কাজগুলো আরও বেশি করে খুলত। শিল্পীর করা ড্রয়িং দুটিও মনোগ্রাহী। অ্যাক্রিলিকের কাজ। কিছুটা সচিত্রকরণ ও পরীক্ষামূলক হলেও পেন্টিং কোয়ালিটি যথাযথ।

মানস জানাও অ্যাক্রিলিকে কাজ করেছেন। ফলিতকলা নিয়ে তিনি পাশ করলেও পেন্টিংয়ের কিছু গুণের সঙ্গে তাকে মেশানোর কায়দা রপ্ত করতে পেরেছেন। তাঁর কাজের সোর্স হল একটি ফোর্স বা গতি। এখানেও বাঁধনহীন এক উদ্দাম জলরাশির দাপটের মধ্যে টালমাটাল নৌকো ও মাঝির লড়াই ওই জলোচ্ছ্বাসের বিরুদ্ধে, আবার একই সঙ্গে ঘোড়ার মুখ ও পেশিসদৃশ গ্রীবা কিংবা উড়ন্ত মাছরাঙার শিকার সবই ওই দুরন্ত জলকে কেন্দ্র করে। মধ্যিখানে রচনা, কেন অতটা সাদা স্পেস ছেড়ে দিলেন?

ব্রাশিংয়ের ঝোড়ো টানটান রঙের উচ্ছ্বাস সব মিলিয়েই অ্যাক্রিলিকের রচনা।

একমাত্র ভাস্কর শুভেন্দু ঘোষ ব্রোঞ্জে ছোট ছোট দশটি কাজ করেছেন। ফর্মকে বুঝে তাদের প্রয়োজন মতো বিবর্তিত করেছেন। এই বদলের ক্ষেত্রে সমুন্নতি গুণ অক্ষুণ্ণ থেকেছে। ভাবনাচিন্তা বেশ ভাল। সলিড ফর্ম নিয়ে বিষয়কে কুঁচকে, দুমড়ে, ভাঁজ করে বেশ অন্য রকম মজা এনেছেন কাজগুলিতে। সঞ্জয়কুমার সেন ভীষণ কাঠিন্যে আটকে গিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন