ট্যাটুর টানে মাতছে শহর

সেবক রোডের একটি জনপ্রিয় ট্যাটু স্টুডিওর মালিক, ট্যাটু শিল্পী চিত্রকুমার ছেত্রী ৮ বছর এই পেশায় যুক্ত। তাঁর স্টুডিওতে মূলত একটু উচ্চবিত্ত গ্রাহকই ভিড় করেন। তিনি জানালেন, ‘‘আমাদের এখানে সবচেয়ে বেশি জোর দিই গুণমানের উপরে। বিদেশী রঙ এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পীরাই কাজ করে এখানে।’’

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৮ ০৩:৫৮
Share:

শিলিগুড়ির একটি ট্যাটু পার্লারে। ছবি: স্বরূপ সরকার

কেবল বোহেমিয়ান শিল্পী বা ভবঘুরেই নয়, শরীরে ট্যাটু করানোর ঝোঁক এখন অনেকের। কলেজপড়ুয়া থেকে চাকুরিজীবী— তালিকায় রয়েছেন সবাই। শিলিগুড়িতে এখন বহু ট্যাটু পার্লার। তবে ট্যাটু নিয়ে সাবধানও করছেন চিকিৎসকেরা। খোঁজ নিলেন শান্তশ্রী মজুমদার

Advertisement

পাহাড়ের এক মহিলা অবশ করার ইঞ্জেকশন ছাড়াই পর পর তিন দিন ধরে সিটিং দিয়েছিলেন ট্যাটু পার্লারে। শিলিগুড়িতে ট্যাটুর জনপ্রিয়তা এখন এমনই। ট্যাটু করার ঝোঁক গত কয়েক বছরে এতটাই বেড়েছে, যে গ্রাহক সামাল দিতে একে একে ২২টি ট্যাটু স্টুডিও খুলেছে শহরে। বিশ্বকাপের আগে ও পরে আরও কয়েকটি শাখা খুলছে। দেহ রাঙানোর এই দামি শখে হাজির হচ্ছে ১৮ থেকে ৭০ সব বয়েসের মানুষই। বিশ্বকাপে ফুটবল তারকাদের দেখে একটি অংশ বরাবরই ট্যাটুকে আগ্রহী হয়। কিন্তু মজার কথা হল, ধীরে ধীরে এই ট্রেন্ড মহিলাদের মধ্যেও জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে।

সেবক রোডের একটি জনপ্রিয় ট্যাটু স্টুডিওর মালিক, ট্যাটু শিল্পী চিত্রকুমার ছেত্রী ৮ বছর এই পেশায় যুক্ত। তাঁর স্টুডিওতে মূলত একটু উচ্চবিত্ত গ্রাহকই ভিড় করেন। তিনি জানালেন, ‘‘আমাদের এখানে সবচেয়ে বেশি জোর দিই গুণমানের উপরে। বিদেশী রঙ এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পীরাই কাজ করে এখানে।’’

Advertisement

যাঁরা একটু বোহেমিয়ান জীবনযাত্রায় অভস্ত, গিটার কাঁধে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারে যখন তখন, তারাই মূলত ট্যাটু করাতেন আগে। তবে সাবেক এই ধারণাকে খান খান করে দিয়েছে শিলিগুড়ি। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, গ্রাহকদের মধ্যে ৮০ শতাংশই বাঙালি। তবে মহিলাদের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে স্টুডিওগুলিতে। শহরের আরও এক ট্যাটু শিল্পী মোহন থাপা জানালেন, তাঁর কাছে ৬৫ বছরের এক মারওয়াড়ি মহিলাও ট্যাটু করিয়েছেন মিলনপল্লি থেকে।

কীরকম ট্যাটু ইদানীং পছন্দ করছেন গ্রাহকেরা? পেশায় ব্যবসায়ী পুনীত শর্মা বলেন, ‘‘খুব বেশি সময় দিতে পারিনি। তবে ছোট আকারের একটি মান্ডালা করিয়েছি বাহুতে।’’ আসলে মেহেন্দির নানারকম ডিজাইনকে কেন্দ্র করেই মার্কিন মুলুকে ট্যাটুর নতুন ভ্যারাইটি তৈরি হয়েছে। ট্যাটুর রঙ সংউৎপাদনকারী সংস্থাগুলির সঙ্গেই সেই ডিজাইন মান্ডালা নামে ঢুকে পড়েছে এদেশের শহরগুলিতেও। সেরকমই জানাচ্ছেন ট্যাটুশিল্পীরা।

মান্ডালা ছাড়াও ডিজাইনার ট্যাটুর মধ্যে ডট এবং জিওমেট্রিক আকার এখন শিলিগুড়ির ট্রেন্ড। হাতে নামে লেখানের পুরনো কায়দা তো রয়েইছে। কাস্টমাইজড এবং থিম বেসড শৈলির মধ্যে মূলত অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্টওয়ার্ক বা আঁকা পছন্দ করছেন মানুষ। নিজেরাই ডিজাইন আনতে পারেন, অথবা মুখে বলে দিলেও শিল্পীরা একটি মডেল তৈরি করে তবে গায়ে সূচ ফোটানো শুরু করেন।

কমবেশি ৪০০ টাকা থেকে শুরু হয় প্রতি স্কোয়ার ইঞ্চি ট্যাটুর খরচ। ভাল পার্লারগুলিতে সেগুলিই ৮০০ টাকা পর্যন্ত দর উঠছে। তাই দামি শখ পুষতে গেলে পকেটের জোর লাগবে। ট্যাটু শিল্পীরা জানাচ্ছেন, ছোটখাট চাকরি বা ব্যবসা করছেন এরকম গ্রাহকই বেশি আসছে পার্লারগুলিতে। কারণ মনের মতো একটি ট্যাটু তৈরি করাতে হেঁসে খেলে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেরিয়ে যাবে।

শিলিগুড়ি শহরে কয়েকটি অ্যাকাডেমিও গড়েছেন পুরনো ট্যাটু শিল্পীরা। সেখান থেকে কাজ শিখে আয় করছেন অনেকেই। শিলিগুড়িতে এরকম তিনটি অ্যাকাডেমিতে পাঁচ মাসে ট্যাটু শেখার খরচ ৩৪ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কাজ শেখার পর পার্লারে কাজও পাচ্ছে এই শহরের যুবক-যুবতীরা। নবীন এক ট্যাটুশিল্পী জানিয়েছেন, ১০-১২ হাজার টাকা মাসের শেষে হয়েই যায়।

কী কী নজর রাখবেন

•বাজার চলতি সস্তা পার্লারে গিয়ে বিপদ ডাকবেন না

•যতটা সম্ভব ছোট আকারের ট্যাটু করতে চেষ্টা করুন

•সবচেয়ে আগে দেখে নিন সূচ জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে কিনা

•চেষ্টা করুন কালো বা নীল রঙ বেশি ব্যবহার করতে।

•ট্যাটু তুলতে হলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোনও সংস্থা বা ডাক্তারের কাছেই যান

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন