পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের বাইরেই ঘুরে বেড়াচ্ছে শুয়োর। এনসেফ্যালাইটিসের আতঙ্কে কাটা রোগীরা। কর্তৃপক্ষ অবশ্য শুয়োর ধরার আশ্বাস দিয়েছেন। ছবি: সুজিত মাহাতো
এনসেফ্যালাইটিস নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের অন্যত্র শুয়োর পাকড়াও অভিযান শুরু হলেও পুরুলিয়ায় অন্য ছবি। এখানে খোদ সদর হাসপাতাল চত্বরেই দিব্যি নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে দু’টি শুয়োর।
ওই দু’টি শুয়োরকে হাসপাতাল চত্বরের মধ্যে যত্রতত্র অবাধে ঘুরে বেড়াতে দেখে আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছেন মানুষজন। বিশেষত যে সমস্ত বিভাগের অবস্থান একতলায় এবং যে সমস্ত ওয়ার্ডের ঠিক বাইরেই শুয়োরগুলি ঘুরছে, সেই ওয়ার্ডের রোগীরা রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন। উত্তরবঙ্গে এনসেফ্যালাইটিস মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ার পরেই শুয়োর নিয়ে আতঙ্ক শুরু হয়েছে সবার মধ্যেই। তারপরে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসে, সেখানেও শুয়োরদের এমন অবাধ ঘোরাঘুরি দেখে আতঙ্কিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। একই সঙ্গে অনেক সচেতন নাগরিক অবাকও হয়েছেন।
হাসপাতালের নালা থেকে প্রবেশপথের আশপাশে শুয়োর ঘুরে বেড়াতে দেখে রোগীর আত্মীয় স্বজনের প্রশ্ন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনসেফ্যালাইটিস নিয়ন্ত্রণে শুয়োর পাকড়াও অভিযান শুরু করতে বলার পরেও খোদ হাসপাতাল চত্বরের মধ্যে শুয়োর ঘুরে বেড়াচ্ছে কী ভাবে? এখানে মশাও তো বেশ রয়েছে। হাসপাতালে বেশিক্ষণ থাকতেই তো আমাদের এখন ভয় লাগছে।”
পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিত্য যাঁদের যাতায়াত, এই দৃশ্যে তাঁরা অবশ্য অবাক হচ্ছেন না। তাঁরা জানান, মর্গের সামনে, ডায়েরিয়া ওয়ার্ডের পিছনের দিকে, হাসপাতালের রান্নাঘরের বাইরে, আয়ুবের্দিক বিভাগের সামনের রাস্তায় ওই দু’টি শুয়োর মাসের পর মাস ঘুরে বেড়াচ্ছে। ডায়েরিয়া বিভাগের অদূরে শিশুসাথী প্রকল্পের বহিবির্ভাগ, সুপারের অফিসের পিছনের দিকে শিশুদের টীকাকরণ বিভাগের বাইরে এবং ব্লাড ব্যাঙ্কের বাইরেও শুয়োরগুলিকে দেখা যায়। হাসপাতালের এক কর্মীর কথায়, “খেদিয়ে দিলে ফের কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা ফিরে আসে।”
কাশীপুরের ধতলা গ্রামের বাসিন্দা বিনয়চন্দ্র মাহাতোর এক আত্মীয় ভর্তি রয়েছেন ডায়েরিয়া বিভাগে। তাঁর কথায়, “ওয়ার্ডের বাইরে ভাত ও আবর্জনা ঘাঁটছে শুয়োরগুলো। কিন্তু হাসপাতালের কর্মীরা ওদের তাড়াচ্ছেন না। অবাক ব্যাপার!” পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা জিতেন ওঝার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী শুয়োর হটাও অভিযানের কথা বলছেন। ক’দিন পরে তিনি এখানে বৈঠকও করতে আসছেন। আর হাসপাতাল চত্বরের মধ্যেই যত্রতত্র শুয়োর ঘুরে বেড়াচ্ছে। অবিলম্বে শুয়োরগুলিকে হাসপাতাল চত্বর থেকে তাড়ানো দরকার।” নার্সরা জানিয়েছেন, তাঁদের আবাসনের গেটের বাইরেও শুয়োর ঘুরে বেড়াচ্ছে। হাসপাতালে যাতায়াতের পথে শুয়োর খেদিয়ে যাতায়াত করতে হয় এমন অভিজ্ঞতাও রয়েছে কারও কারও।
শুয়োরগুলো তাড়ানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে না কেন? হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জনা সেন বলেন, “ওই শুয়োরগুলো বাইরে থেকে খাবারের খোঁজে এখানে আসে। পিছনের দু’টি গেট দিয়ে শুয়োরগুলি হাসপাতালের মধ্যে ঢুকে পড়ছে। আমরা ঠিক করেছি টীকাকরণ বিভাগ এবং মর্গ বা ডায়েরিয়া বিভাগের কাছে দু’টি দরজায় কাউক্যাচার লাগাব। তাহলে মনে হয় শুয়োরগুলো ধরা পড়ে যাবে। এতে শুয়োর ঢোকা আটকানো যাবে।” তিনি জানিয়েছেন, হাসপাতাল চত্বরে যেখানে নোংরা জমে রয়েছে, তা সাফ করা হবে।