খেয়াল: শিশু অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।
ক্যালেন্ডার বলছে ফাল্গুন মাস। অর্থাৎ হিসেব মতো বসন্তকাল। কিন্তু এখনই সূর্যের খরতাপে দিনে হাসফাঁস অবস্থা। অথ রাত বাড়লেই তাপমাত্রা নামছে। আবহাওয়ার এমন তারতম্যে ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন বাবা-মায়েরা। একটু অসাবধান হলেই অসুখ বাধাতে পারে আপনার ছোট্ট সোনা।
দীর্ঘ ২৫বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব। তাই গরমের শুরুতেই বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। এই সময় সংক্রমণজনিত রোগ বাড়ে। ভাইরাল ডায়েরিয়া, শ্বাসকষ্ট, ভাইরাল গ্যাসট্রাইটিসের(বমি হবে) সমস্যা শিশুকে অসুস্থ করে তোলে। সেই সঙ্গে সর্দি, কাশি, জ্বরের হানা তো রয়েছেই! এখন বেশিরভাগ শিশু হাম ও চিকেন পক্সের সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসে। এই রোগে প্রথমে সর্দি-কাশি, পরে জ্বর, তার পরে চোখ লাল হয়ে ওঠা, সব শেষে গায়ে দানা-দানা লাল র্যাশ দেখা যায়।
হাম ও চিকেন পক্সের সূক্ষ্ম পার্থক্যও রয়েছে। হাম হলে কপালে প্রথমে র্যাশ দেখা যায়। আর পক্সের ক্ষেত্রে সারা শরীরে র্যাশ দেখা যায়। প্রথম পর্যায়ে দুই রোগে জ্বর হলে সাধারণত প্যারাসিটামল দেওয়া হয়। তবে হামে আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে শারীরিক নানা জটিলতা তৈরি হয়। হাম সেরে গেলেও অপুষ্টিতে ভোগা শিশুরা নিমুনিয়া, ডায়ারিয়া, মেনিনজাইটিস সঙ্গে ফের বেশি জ্বরে আক্রান্ত হয়। অনেক মেনিনজাইটিসে শিশুদের খিচুনিও দেখা যায়। প্রতিটি রোগের চিকিৎসা আলাদা। তাই গোড়াতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
হামের টিকা সব সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাওয়া যায়। তবে চিকেন পক্সের টিকা সব সরকারি হাসপাতালে না-ও মিলতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওষুধের দোকান ভরসা। এই সব রোগ থেকে বাঁচতে রাতে শিশুকে এসি-তে না রাখা ভাল। চড়া রোদ এড়িয়ে চলা, ফলের রস-ওআরএস খাওয়া, পর্যাপ্ত জলপান আবশ্যক। ৬ মাস পর্যন্ত শিশুরা মাতৃদুগ্ধ পান করায় জলের চাহিদা কম থাকে। তবে ৬ মাস বয়সের পরে ১০ কেজি ওজনের শিশুকে দিনে অন্তত এক লিটার জল খাওয়াতে হবে। যতবার শক্ত খাবার খাবে, ততবার জলপান অবশ্যক। বাইরের রঙিন সরবত, আইক্রিম একেবারে চলবে না। ঝাল-তেল-মশলা ছাড়া মাছ, ডিম, আনাজ রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়।
খাবার বাছাইয়ে সতর্কতার পাশাপাশি শিশুর পরনে চাই হালকা সুতির জামা। গরম পড়তেই মশার উপদ্রব বাড়ছে। তাই মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গি, এনসেফ্যালাইটিস থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে। তাই দিনে-রাতে মশারির ব্যবহার জরুরি।
সবশেষে মনে রাখবেন, রোগ যেমন আছে, প্রতিকারও রয়েছে। আগাম সচেতনতাই এই আবহাওয়াতেও আপনার সন্তানকে সুস্থ রাখবে।
লেখক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল