Anuttama Banerjee

‘ডেঙ্গিতে স্বামীর মৃত্যুর পর আবার একটা বিয়ে করবি! লোকে কী বলবে?’ আলোচনায় অনুত্তমা

‘লোকে কী বলবে? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এ সপ্তাহের বিষয় ‘আবার বিয়ে’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ২০:৩৩
Share:

সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

সম্পর্ক বহতা নদীর মতো। এক এক বাঁকে এসে এক এক রকম মোড় নেয়। বহু বছরের পুরনো সম্পর্ক হঠাৎ বিয়ের ফুল হয়ে ফুটে ওঠার আগেই ঝরে যেতে পারে। আবার একেবারে অচেনা কোনও ব্যক্তি দমকা হাওয়ার মতো এসে পুরনো সম্পর্কের ক্ষতয় ভালবাসার প্রলেপও দিতে পারেন। কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন দু’টি মানুষের জীবনের এই ভাঙা-গড়া, ওঠা-পড়া শুধু যে নির্দিষ্ট দু’টি মানুষের জীবনে ছাপ ফেলে, এমন তো নয়। তাঁদের নিয়ে চিন্তায় থাকেন পরিবারের মানুষজন। কিন্তু ওই যে একটি প্রবাদ আছে, ‘যার বিয়ে তার হুঁশ নেই, পাড়া-পড়শির ঘুম নেই’। একটি সম্পর্ক শেষ হতে না হতেই আরও একটি সম্পর্কে জড়ালে তথাকথিত অনাত্মীয়দের মাথাব্যথা হয় বেশি। এ নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ সপ্তাহের বিষয় ছিল, ‘আবার বিয়ে’।

Advertisement

প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে প্রশ্ন পাঠানো যায়। বহু চিঠি এসে জমা হয় তাঁর কাছে। সময় সীমিত, তাই সেখান থেকেই বেছে নিতে হয় বেশ কিছু চিঠি। কিন্তু এই পর্বের ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটেনি বলছিলেন মনোবিদ নিজেই। কারণটাও অজানা নয়। এই যে একাধিক সম্পর্ক বা বিয়ে, এই দলের মানুষরা সংখ্যায় কিন্তু খুব বেশি নন। উল্টো দিকে থাকা মানুষরা, যাঁরা দলে ভারী, তাঁদের কাছে দ্বিতীয় সম্পর্ক বা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে চলা মানুষগুলি ‘লোকে কী বলবে’-র আতঙ্ক কাটিয়ে নিজেদের মনের কথা আদৌ বলে উঠতে পারেন কি?

Advertisement

মনোবিদের কাছে নিজের কথা জানাতে পারলেন দেবশ্রী। তিনি লিখেছেন, “২০১৪ সালে রেজিস্ট্রি বিয়ে হয় আমার। সামাজিক অনুষ্ঠানের আগেই আমার স্বামী ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বহু দিন পর দ্বিতীয় বার প্রেম করেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু আত্মীয়-অনাত্মীয়রা সেই কথা জানা মাত্রই বলতে শুরু করেন, আবার বিয়ে করবি? এমনকি, হবু শ্বশুরবাড়ির লোককে বলা হয়, আমার নিশ্চয়ই গ্রহচক্রের দোষ রয়েছে। তা না হলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না। কিন্তু এক বার বিয়ে ভেঙে গেলে বা স্বামী মারা গেলে নতুন করে জীবন শুরু করতে চাওয়া কি অপরাধ? কিছু দিন হল নতুন জীবন শুরু করেছি। দুই পরিবারের সকলেই আমার পাশে রয়েছেন। কিন্তু মাঝের সময়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা মনে রয়ে গিয়েছে।” দেবশ্রী জানিয়েছেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আমল থেকেই তো বিধবা বিবাহ রয়েছে, তবে আজও কেন বৈধব্য নিয়ে এমন কথা শুনতে হবে? অনুত্তমা বললেন, “ঘুরেফিরে সেই পিতৃতান্ত্রিকতার শিক্ষা। দু’টি মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে কী ঘটল, তা একমাত্র তাঁরাই জানেন। তিনি জীবন থেকে চলে যাওয়া মানেই কিন্তু তাঁকে ভুলে যাওয়া নয়। ভালবাসা এবং ভাল থাকা সব সময়ে একসঙ্গে হাঁটে না। পুরনো মানুষটিকে নিয়ে আমার মনে অনেক কিছু অবশিষ্ট থাকতেই পারে। কিন্তু নতুন করে ভাল থাকার অধ্যায় শুরু করা অধিকার নিশ্চয়ই আছে।”

পরের চিঠি পাঠিয়েছেন শিল্পী। ২০১৯ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয় শিল্পীর। খুব অল্প দিনের জন্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন তিনি। তার পর নতুন করে আবার সম্পর্কে যাওয়ার কথা ভাবতে গেলেই তাঁকে শুনতে হয়েছে, ‘এমন কাউকে পছন্দ কর, যে তোর মতোই ডিভোর্সি’। অবিবাহিত কাউকে শিল্পীর মতো ‘ডিভোর্সি’রা কেন বিয়ে করতে পারেন না? প্রশ্ন ছিল শিল্পীর। উত্তরে মনেবিদ বলেন, “বিচ্ছেদের তকমা নারী এবং পুরুষের জীবনে ভিন্ন রূপ নেয়। আবার এমন মানুষও আছেন যাঁরা বিবাহিত জীবনে দগ্ধ। কিন্তু বিচ্ছেদের তকমা মাথায় নিতে চান না বলে আইনি বিয়েটুকু টিকিয়ে রেখেছেন। এই মনে হওয়ার মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। কিন্তু কোনও মানুষের গোটা জীবনের মধ্যে থেকে শুধুমাত্র বিচ্ছেদের অংশটুকু কেটে নিয়ে আমরা তাঁকে বিচার করব। এই মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। কোনও বিশেষ এক জনের পক্ষ নিয়ে কথা বললেই যে সমাজ উদ্ধার হবে, এমনটাও কিন্তু নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন