ছবি : সংগৃহীত।
বৈশাখের আগেই চড়চড়িয়ে বাড়তে শুরু করেছে উষ্ণতার পারদ। ঠাঠা রোদে বাইরে বেরোলেই মাথা ধরছে। হচ্ছে ডিহাইড্রেশন। অসুস্থও হয়ে পড়ছেন কেউ কেউ। জ্বর-জ্বালা-পেটের অসুখ তো লেগেই আছে। এমন গরমে স্বাভাবিক ভাবেই তেল-মশলাদার খাবার ছেড়ে হালকা খাবারের দিকেই ঝুঁকছে মন। এমন খাবার, যা পেট ঠান্ডা রাখে, ধরে রাখে শরীরের আর্দ্রতা। তেমনই এক খাবার হল মামাদিক্যা পাচি পুলুসু। অন্ধ্রপ্রদেশের খাবার। তার নামের বাংলা অর্থ হল কাঁচা আম দিয়ে তৈরি রসম।
গরমে বঙ্গে কাঁচা আম দিয়ে টক ডাল খাওয়ার চল আছে। গ্রীষ্মকালে বাঙালির বাড়ির একচেটিয়া খাবার হল টকের ডাল দিয়ে আলু পোস্ত। দু’টিই পেট ঠান্ডা করার জন্য আদর্শ। দক্ষিণ ভারতের রসমের ভূমিকাও সেই রকম। উপকূলবর্তী এলাকায় তো বটেই, দক্ষিণে গরমের মাত্রা কিছু বেশি। সেই গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শরীর ভাল রাখার কাজ করে রসম।দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও রসম খাওয়ার চল আছে। খাবারে মশলা পড়ে সামান্যই। তবে স্বাদ থাকে ভরপুর।
কাঁচা আমের রসম শুধু ভাতে খেতেও ভাল লাগবে। তবে বেশি ভাল লাগবে ভাতের সঙ্গে ডাল সেদ্ধ এবং রসম একসঙ্গে খেলে। অন্ধ্রপ্রদেশে অবশ্য ওই রসম খাওয়া হয় ঘন অড়হর ডালের সঙ্গে মিশিয়ে। ঘি আর জিরে ফোড়ন দিয়ে খুব অল্প সময়েই বানিয়ে নেওয়া যায় সেই ডাল। নাম মুদ্দা পাপ্পু। নীচে আমের রসমের পাশাপাশি ওই ডালের রেসিপিও দেওয়া রইল।
মামাদিক্যা পাচি পুলুসু বা কাঁচা আমের রসম
ছবি: সংগৃহীত।
উপকরণ:
২টি মাঝারি মাপের কাঁচা আম
৩টি কাঁচা লঙ্কা
২টি শুকনো লঙ্কা
৫-৬ কোয়া রসুন
১টি মাঝারি পেঁয়াজকুচি
১০ টি কারিপাতা
১ টেবিল চামচ ধনেপাতা কুচি
১ চা-চামচ জিরে
১ চা-চামচ সর্ষে
১ চা-চামচ গুড় (স্বাদমতো বাড়িয়ে বা কমিয়ে নিন)
স্বাদমতো নুন
১ চা-চামচ সর্ষের তেল
প্রণালী:
কাঁচা আম, কাঁচা লঙ্কা এবং একটি শুকনো লঙ্কা পুড়িয়ে নিন।
এ বার পোড়ানো কাঁচালঙ্কা, শুকনো লঙ্কা, রসুন, আধ চা-চামচ জিরে ভালো করে থেঁতো করে নিন।
পোড়ানো আমের খোসা ছাড়িয়ে ক্বাথ বার করে নিন। তার মধ্যে মেশান থেঁতো করে রাখা মশলা, পেঁয়াজকুচি, ধনেপাতা কুচি, গুড় এবং নুন। এক কাপ মতো জল (কতটা ঘন করতে চাইছেন সেই বুঝে জল বাড়িয়ে বা কমিয়ে নিন) দিয়ে ভাল ভাবে মিশিয়ে নিন।
একটি প্যানে এক চামচ সর্ষের তেল দিয়ে তাতে একটি শুকনো লঙ্কা, জিরে এবং সর্ষেদানা এবং কারিপাতা ফোড়ন দিয়ে দিন। সুগন্ধ বেরোলে তেলসমেত মশলা ঢেলে দিন কাঁচা আমের মিশ্রণে। তৈরি কাঁচা আমের রসম।
মুদ্দা পাপ্পু
ছবি: সংগৃহীত।
উপকরণ:
১/২ কাপ অড়হর ডাল
১/৪ চা চামচ গুঁড়ো হলুদ
১/২ চা-চামচ জিরে
২ চিমটে হিং
২ চা-চামচ ঘি
২ কাপ জল
স্বাদমতো নুন
প্রণালী:
ডাল শুকনো কড়ায় ভাল ভাবে ভেজে নিন। সুগন্ধ বেরোলে ওর মধ্যে জল দিয়ে ভাল ভাবে ধুয়ে নিয়ে প্রেশার কুকারে দিন। জল, হলুদগুঁড়ো দিয়ে সেদ্ধ হতে দিন। ৭-৮ টি সিটি হলে ডাল একেবারে নরম হয়ে যাবে। এর পরে ওর মধ্যে নুন দিয়ে একটি হাতা দিয়ে ভাল ভাবে ঘেঁটে নিন।
একটি প্যানে ঘি গরম করে তাতে জিরে এবং হিং ফোড়ন দিয়ে তার মধ্যে ঢেলে দিন ঘেঁটে নেওয়া ডাল। সামান্য নেড়েচেড়ে তুলে নিন।
কী ভাবে পরিবেশন করবেন?
ভাতের উপরে প্রথমে দিন এক-দেড় চামচ ঘন অড়হর ডাল। তার উপরে ঢেলে নিন রসম। চাইলে সঙ্গে পাঁপড়ভাজা বা যে কোনও সব্জির ভাজি রাখতে পারেন। গ্রীষ্মের দুপুরে পান্তাভাত মাখা কিংবা টকের ডাল আলুপোস্তের চেয়ে কিছু কম সুস্বাদু লাগবে না এই খাবার।