সন্তানের প্রতিপালনে বাবা-মা কে একসঙ্গে দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হবে। — ফাইল চিত্র।
জেনারেশন আলফার সময় শুরু হয়েছে গিয়েছে। ছোটরা এখন অনেক বেশি স্মার্ট। তারা প্রশ্ন করে। তাদের জেদ বেশি। তাই সন্তানকে সুষ্ঠু ভাবে বড় করে তুলতে হলে শাসনের মধ্যে উৎসাহের প্রবেশ ঘটাতে হবে। গবেষণা বলছে, ৬ থেকে ১০ বছর বয়সি সময়কাল বাচ্চাদের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে বাবা-মায়েদের সন্তানকে নিয়ে বাড়তি সতর্কতা মেনে চলতে হয়। কয়েকটি পরামর্শে উপকার পেতে পারেন।
১) হিংসার ব্যবহার নয়: কটু শব্দ, চিৎকার বা গায়ে হাত তোলা সন্তানকে সায়মিক ভাবে সোজা পথে রাখতে পারে। কিন্তু এই ধরনের উগ্র ব্যবহার তার মনের উপরে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করতে পারে। পরিবর্তে আলোচনার পথে সমস্যার সমাধানসূত্র খোঁজা উচিত।
২) পথপ্রদর্শকের ভূমিকা: অল্পবয়সি সন্তান কোনও ভুল করলে তাকে বার বার দোষের জন্য হুমকি দেওয়া উচিত নয়। অনেক সময়ে বকা বা হুমকির মতো ঘটনা ছোটদের আত্মসম্মানে আঘাত করতে পারে। পরিবর্তে অভিভাবকেরা তাদের প্রথপ্রদর্শক হয়ে উঠতে পারেন। শিশুরা যদি নিরাপদ এবং সুরক্ষিত বোধ করে, সেই পরিবেশে তারা বাধ্য আচরণ করে।
৩) দলগত প্রয়াস: বাচ্চার প্রতিপালনে বাবা-মা ছাড়াও দাদু-দিদার মতো বাড়ির বড়দেরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকে। তাই সকলকে একটি দল হিসেবে কাজ করতে হবে। যাঁরা একার হাতে সন্তাকে বড় করে তুলছেন, তাঁরা বন্ধু বা নিকট আত্মীয়ের সাহায্য নিতে পারেন। একার উপরে চাপ কমলে, ছোটদের জন্যও পরিবারে সুরক্ষিত এবং শান্তির পরিবেশ বজায় থাকবে।
৪) স্ক্রিন টাইম: ছোটদের দিনের একটা বড় সময় এখন মোবাইল বা ল্যাপটপে কাটে। স্ক্রিন টাইম বেশি হলে অল্প বয়সেই নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে খারাপ এবং ভাল— দু’দিকই সন্তানের সামনে তুলে ধরুন। সেইমতো সময় নির্ধারণ করুন। প্রয়োজনে ডিভাইসের ‘পেরেন্টাল কন্ট্রোল’ সম্পর্কে জেনে রাখুন। বকাবকির মাধ্যমে সন্তানের মনে ভয় তৈরি হয়। ফলে লুকিয়ে মোবাইল ব্যবহারের প্রবণতাও বৃদ্ধি পায়।
৫) ইন্টারনেট ‘শত্রু’ নয়: ছোটরাও এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে। সামান্য অসতর্কতা ডেকে আনতে পারে মারাত্মক বিপদ। তাই ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে সন্তানের সঙ্গে খোলা মনে আলোচনা করুন। নেতিবাচক দিকগুলি সম্পর্কে তাকে অবগত করুন। তার ফলে তারা ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও সাবধান হবে।
৬) সুরক্ষিত এবং অসুরক্ষিত স্পর্শ: অল্প বয়সে সন্তানকে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশার ক্ষেত্রে ‘সুরক্ষিত’ এবং ‘অসুরক্ষিত’ স্পর্শের পার্থক্য সম্পর্কে অবহিত করা উচিত। প্রয়োজনে সে যেন আপনার কাছে অভিযোগ জানাতে পারে, তার দরজা উন্মুক্ত রাখা উচিত। স্কুলের পাশাপাশি বাড়িতে এই ধরনের শিক্ষা অনেক ক্ষেত্রেই শিশুকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করে।
৭) ‘সক্ষমতা’র সংজ্ঞা পরিবর্তনশীল: বিশেষ ভাবে সক্ষম সন্তানের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই বাবা-মা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেন। পাশাপাশি, এই ধরনের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ভালবাসা এবং স্নেহ অনেক সমস্যার সমাধন করে দেয়। তাই ধৈর্য ধরতে হবে। প্রয়োজনে থেরাপির সাহায্য নিতে হবে। তার থেকেও বড় কথা সন্তানের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে।
৮) উৎসাহ যেন বজায় থাকে: অল্প বয়সে ছোটদের মনে একরাশ কৌতূহল ভিড় করে। উপযুক্ত জবাবে বাবা-মায়ের তা নিরসন করা উচিত। খেলাধুলোর ক্ষেত্রে ‘ছেলেরা কাঁদে না’ বা ‘মেয়েদের মতো’— এই ধরনের শব্দবন্ধ ব্যবহার না করাই ভাল। পরিবর্তে সন্তানের পূর্ণ কৌতূহলী মনের বিকাশে বাবা-মাকে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে হয়।
৯) নিজেই আদর্শ বিগ্রহ: বড়দের দেখেই ছোটরা শেখে। তাই সন্তানের কাছে বাবা-মাকেই তার আদর্শ বিগ্রহ হয়ে উঠতে হয়। তাই সন্তানের সামনে বাবা-মায়ের স্বভাবের ভাল দিকটা প্রকাশ পাওয়াই মঙ্গল। দাম্পত্যে ঝগড়া, অশান্তি বা মতানৈক্য তাকতেই পারে। কিন্তু তার সমাধানে যেন সন্তানকে ব্যবহার না করা হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।