পরিস্থিতি আছে সেই তিমিরেই।
এক বছর আগে যখন এনসেফ্যালাইটিসের দাপটে কাবু হয়ে পড়েছিল উত্তরবঙ্গ, তখন দিল্লি থেকে সংক্রামক রোগের বিশেষজ্ঞেরা এসে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের উপরে জোর দেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের চেয়েও বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম (এইএস)-এ। কিন্তু সেই সংক্রমণের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছিলেন না তাঁরা। সেই জন্যই তাঁদের পরামর্শ ছিল, আক্রান্ত এলাকাগুলিতে পরিস্রুত জলের ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।
বছর ঘুরতে না-ঘুরতেই ফের এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গে। দেখা যাচ্ছে, এমন এলাকা থেকে রোগীরা আসছেন, যেখানে যথাযথ পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাই ফের পরিস্রুত পানীয় জলের সরবরাহে উদ্যোগী হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে এ বারেও তাদের উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিভিন্ন মহলেই।
পরিস্রুত পানীয় জলের অভাবেই যে এইএসের মতো রোগ ছড়াচ্ছে, তা কার্যত মেনে নিয়েছেন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। শুক্রবার দার্জিলিঙের জেলা স্বাস্থ্য কার্যালয়ে এ নিয়ে পূর্ত, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন দার্জিলিং জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন এলাকায় দ্রুত নলকূপ বসানো হবে। যে-সব জায়গায় নলকূপ রয়েছে, সেখানে তা বদলে দেওয়া হবে।’’ কবে এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে, তা স্পষ্ট জানাতে পারেননি তিনি।
এ দিন নতুন করে খিঁচুনি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে উত্তরবঙ্গে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। দু’জনেই জলপাইগুড়ির বাসিন্দা। এ ছাড়া আরও ১৩ জন এইএস নিয়ে এখনও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
ওই হাসপাতালেই বৃহস্পতিবার মারা যান জ্যোৎস্না রায় (৪০) নামে এক মহিলা। তাঁর বাড়ি জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জে। তাঁকে প্রথমে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছিল। সেখানে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ধরা পড়ার পরে তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয় বলে পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন। তবে এ দিন হাসপাতালের নথিতে তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে এইএস লেখা হয়েছে। এই বিষয়ে ওই মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বা ভারপ্রাপ্ত সুপার কেউই সরকারি ভাবে মুখ খুলতে চাননি। অন্য এক জনের মৃত্যু হয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে। ওই হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, মৃতের নাম সুকুমার বর্মণ (২৮)। জলপাইগুড়ির ডোবাপাড়ার বাসিন্দা তিনি। খিঁচুনি-জ্বরে আক্রান্ত সুকুমারবাবুকে মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বুধবার তাঁর রক্ত পরীক্ষা করে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু মিলেছিল বলে জানান হাসপাতালের সুপার পার্থ দে।