‘সেলফি’শ ব্যাধি: কী বলছেন মনোবিদরা

সেলফি তোলার নেশায় প্রাণ গেল আবার। কীসের টান, কীসের মোহে এমন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ছি আমরা? বিশ্লেষণ করলেন মনোরোগ চিকিত্সক কেদার রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দুই মনোস্তাত্ত্বিক মোহিত রণদীপ, অনিন্দিতা রায়চৌধুরীসেলফি তোলার নেশায় প্রাণ গেল আবার। কীসের টান, কীসের মোহে এমন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ছি আমরা? বিশ্লেষণ করলেন মনোরোগ চিকিত্সক কেদার রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দুই মনোস্তাত্ত্বিক মোহিত রণদীপ, অনিন্দিতা রায়চৌধুরী

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৬ ১৮:০৪
Share:

সেলফি তোলার নেশায় প্রাণ গেল আবার। কীসের টান, কীসের মোহে এমন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ছি আমরা? বিশ্লেষণ করলেন মনোরোগ চিকিত্সক কেদার রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দুই মনোস্তাত্ত্বিক মোহিত রণদীপ, অনিন্দিতা রায়চৌধুরী

Advertisement

কেদার রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় (মনোরোগ বিশেষজ্ঞ)

এই ঘটনাগুলো ঘটায় বয়ঃসন্ধি থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত বয়সের ছেলে-মেয়েরা। বলতে গেলে এই অভ্যেসটা মেয়েদের মধ্যেই বেশি। ছেলেরাও যে করে না তা নয়। তবে সংখ্যায় কম। ৫০ বছরের কাউকেও সেল্‌ফি তুলতে দেখা যেতে পারে। কিন্তু সেটা ব্যাতিক্রম। তার মধ্যে এখন সব ফোনে ক্যামেরা থাকায় বিষয়টি খুব সহজ হয়ে গিয়েছে। সবার হাতে হাতে ক্যামেরা। ক্লাস্টার-বি পার্সোনালিটি প্রোফাইল যাঁদের, তাদের মধ্যে এই প্রবণতা সব থেকে বেশি দেখা যায়। যাঁরা শো-অফ করতে ভালবাসে। আর একটা ধরন হল যাঁরা নিজেকে গুরুত্ব দিতে ভালবাসে। নিজেদের যাঁরা বড্ড বেশি ভালবাসে। তাঁরাই এই ঘটনা বেশি ঘটায়। আর এটা এমন একটা নেশা যেটা কোনও স্ট্যাটাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। নেই কোনও শিক্ষার স্ট্যাটাসবার। গরিব থেকে মন্ত্রীর ছেলে-মেয়ে- যে কেউ সেলফিতে মাততে পারে।

Advertisement

আরও পড়ুন : মারণ সেলফি

অনিন্দিতা রায়চৌধুরী (মনোস্তত্ত্ববিদ)

এটা এক প্রকার হুজুগ। সঙ্গে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। কারণ, সেলফি তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনা হয়তো ঘটছে, কিন্তু অতটাও ঘটছে না যাতে মানুষ ভয় পাবে। ১০০ জনে খুব বেশি হলে একটা। আমার মতে তাও নয়। যার ফলে যাঁরাই সেলফিতে আসক্ত তাঁরা ভাবছে তাঁর সঙ্গে হবে না। সেলফি তুলতে গিয়ে বিপদে পড়তে পারেন এটা মাথায় থাকছে না। সমুদ্রে কতটা গভীরে গেলে বিপদ হতে পারে সেটা বোঝা মুশকিল। তবে কিছুদিন আগে ঘটা ট্রেনের ছাদে উঠে সেলফি তুলতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাটা কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বা উদ্দামতার পরিচয়। জীবনটা যখন একঘেয়ে হয়ে যায়, যখন কোনও লক্ষ্য থাকে না, তখন মানুষ সাময়িক আনন্দের জন্য ঝুঁকি নিয়ে ফেলে। কারও কারও ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি নেওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। মানসিক বিকারগ্রস্থ হওয়ারও সম্ভবনা দেখা যায়। যা স্বাভাবিক চোখে ধরা পরে না। নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করে দেখানোর একটা অদম্য ইচ্ছে, সঙ্গে মানুষের নজর কাড়ার চেষ্টা। কটা লাইক এল। না এলেই তখন অবসাদ।

আরও পড়ুন : সর্বনাশা সেলফি, এবার মুম্বইয়ে সমুদ্রে তলিয়ে গেলেন কলেজ ছাত্রী

ফোনেই চোখ, ভুলে যাচ্ছে চারপাশ, দেখুন কী কাণ্ড!

মোহিত রণদীপ (মনোস্তত্ত্ববিদ)

প্রত্যেক মানুষই সেল্‌ফ আইডেনটিটি বা আত্মপরিচয় গড়তে চায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের সমাজ বেশির ভাগ সময়ে তুমি কী পারো না সেটাই বড় করে দেখায়। ছোট বেলা থেকে এমন পরিবেশে বড় হলে আত্মসম্মান বা সেল্‌ফ এসটিম তৈরি হয় না। হীমমন্যতা গড়ে ওঠে। নিজেই নিজেকে প্রজেক্ট করার প্রবণতা তৈরি হয়। স্বীকৃতি চাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘লাইক’ পাওয়ার প্রবল ইচ্ছেটা আসে এখান থেকেই। এটাই পাওনা। আর এটাই নেশা হয়ে উঠছে একটা সময়। কত ভাবে নিজেকে প্রজেক্ট করা যায় ভেবে চলেছেন অনেকেই। ঝুঁকি নিয়েও নিজেকে অন্য ভাবে প্রজেক্ট করার প্রবণতা আসছে। ফলে মাঝে মধ্যেই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্ব জুড়েই ঘটছে। দক্ষিণ আমেরিকায় তো র‌্যাটেল স্নেকের সঙ্গে ছবি তুলতে গিয়ে এক জন মারা গেলেন। আমাদের এখানেও এরকম ঘটনা ঘটছে। ভাবনা চিন্তা না করে হঠকারিতা করে ফেলছেন অনেকেই। নিজেকে প্রজেক্ট করার তীব্র নেশাই যার মূলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন