চোখের ছানি নিয়ে অবহেলা করবেন না। চশমা বদলালেই ছানি সারে না
cataract

Cataracts: অস্ত্রোপচারই একমাত্র পথ

চোখের ভিতরে যে লেন্স রয়েছে, সেখানে আলো প্রবেশের পথ বাধাপ্রাপ্ত হলে, রেটিনার উপরে যে আস্তরণ পড়ে, তাকে বলা হয় ছানি।

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২২ ০৬:৩৫
Share:

ছানির অস্ত্রোপচার করিয়ে নেওয়াই সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার পথ।

বার্ধক্যের অন্যতম লক্ষণ হল ছানি পড়া। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে চোখে ছানি পড়তে পারে। চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুমিত চৌধুরীর কথায়, ‘‘ভারতের মতো ক্রান্তীয় জলবায়ুর দেশে এই সমস্যা খানিক বেশি দেখা যায়।’’ ওষুধে বা চশমা বদল করলে ছানি দূর হয় না। অস্ত্রোপচার এর একমাত্র পথ। আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রে ছানি অপসারণের জন্য উন্নতমানের সার্জারিও করা হচ্ছে।

Advertisement

ছানি কী?
ডা. চৌধুরীর কথায়, চোখের ভিতরে যে লেন্স রয়েছে, সেখানে আলো প্রবেশের পথ বাধাপ্রাপ্ত হলে, রেটিনার উপরে যে আস্তরণ পড়ে, তাকে বলা হয় ছানি। এর ফলে ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ ক্ষীণ হতে থাকে। বয়সের সঙ্গে চোখের লেন্সের মোবিলিটিও কমতে থাকে। ছানি অস্ত্রোপচার করা মানে ওই পর্দা সরিয়ে একটি কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা। ডায়াবিটিস বা থাইরয়েডের মতো অসুখ থাকলে, তাঁদের ছানি তাড়াতাড়ি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কয়েকটি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও ছানি পড়তে পারে।

প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে, চশমার বদল করা হলে ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি খানিক বাড়তে পারে। তবে এটি সাময়িক সমাধান। চিকিৎসকদের কথায়, মানুষের আয়ু বেড়ে যাওয়ায় আগামী দিনেও ছানির সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। তাই ছানির অস্ত্রোপচার করিয়ে নেওয়াই সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার পথ।

Advertisement

ছানির অস্ত্রোপচার
আগে ছানি অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে ছানি-সহ পুরো লেন্স বাইরে বার করা হত। তার পরে মোটা ফ্রেমের চশমা পরানো হত, যার কারণে ব্যক্তি ভাল দেখতে পেতেন।
কিন্তু এখন লেন্সের অন্তর্নিহিত ক্যাপসিউলের মধ্যে পাঁচ মিলিমিটার মতো ছিদ্র করে একটি টিউব ঢুকিয়ে ছানি-সহ অংশটি বার করে এনে কৃত্রিম লেন্স বসিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে আলো প্রবেশের পথে বাধা পাওয়ার সমস্যা থাকে না। ছানি অস্ত্রোপচারের এটাই মূল পদ্ধতি। এটি একাধিক ভাবে এখন করা হয়।

* ফেকো ইমালসিফিকেশন পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে লেন্সের ভিতরে ছিদ্র করে প্রথমে একটি টাইটেনিয়াম টিউব ঢোকানো হয়। আলট্রা-সাউন্ড টেকনোলজির মাধ্যমে সেটি ছানিকে ভেঙে দেয় বা খেয়ে ফেলে। তার পরে ওই জায়গায় কৃত্রিম লেন্স বসানো হয়।
* লেসার পদ্ধতি: ডা.চৌধুরীর কথায়, ‘‘লেসারের সুবিধে হল, উন্নত টেকনোলজির সাহায্য পাওয়ায়, এই অপারেশন করাটা খুব মসৃণ হয়। ঝক্কি কম থাকে। রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যান। তার ফলে দৈনন্দিন জীবনে ফিরে আসাও তাঁর পক্ষে অনেক তাড়াতাড়ি শুরু হয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে ব্যতিক্রম হতে পারে। লেসার সার্জারির সাফল্য যে শতকরা একশো ভাগ, তা হলফ করে বলা যায় না।’’

কেটে অপারেশন করলে সারতে প্রায় সপ্তাহদুয়েক সময় লাগে। ফেকোতেও রোগীর চার-পাঁচ দিন সময় লাগে। তবে লেসার অস্ত্রোপচারের পরে দেখা যায়, দিন দুয়েকের মধ্যেই রোগী রোজের কাজে ফিরতে পারছেন। লেসারের সাহায্যে ছানি অপারেট করতে সাধারণ পদ্ধতির চেয়ে পঁচিশ থেকে তিরিশ হাজার টাকা বেশি লাগে।

লেন্সের মান
ছানি অপারেশনের পরে কোন মানের এবং ধরনের লেন্স ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। মাল্টিফোকাল (দূরে-কাছে), মনোফোকাল (দূরের) দু’ধরনের লেন্স ব্যবহার করা হয়। তবে যত উন্নত মানের লেন্স হবে, তার খরচও বাড়বে।সাধারণত অস্ত্রোপচারের পরে অ্যালার্জি প্রতিরোধক আইড্রপ এবং স্টেরয়েড ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। ছানি একটি চেনা সমস্যা। তাই অযথা দেরি না করে সময়মতো এর অস্ত্রোপচার করিয়ে নেওয়া উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন