তামাকে ক্ষতি চোখেরও, নেই সচেতনতা

চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, ধূমপানের জেরে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট কমে যায়। যার জেরে লেন্স প্রোটিন নষ্ট হয়ে যায়। ফলে চোখে নানা সমস্যা দেখা যায়।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৮ ০১:০৮
Share:

বইয়ের পাতা কিংবা আলোর দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকালেই চোখ জ্বালা শুরু হয়। মাঝেমধ্যেই চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে চুলকানি শুরু হয় বছর পঁচিশের শৌভিক সাহার। প্রাথমিক ভাবে চোখে সংক্রমণের জেরেই এই সমস্যা হচ্ছে মনে করলেও চিকিৎসক জানালেন, অতিরিক্ত ধূমপানের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চোখের শিরা। তার থেকে ‘ড্রাই আই’-এর সমস্যা হয়েছে। ফলে চোখ জ্বালা, চুলকানির মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছে।

Advertisement

বছর চল্লিশের অমিতাভ চৌধুরীর চোখ দিয়ে লাগাতার জল পড়ে। যে কোনও সূক্ষ্ম কাজে দেখতে সমস্যা হয়। চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, তামাক সেবনের জেরে চোখের রক্তগহ্বরের ক্ষতি হয়েছে। রেটিনার কোষ ফুলে গিয়েছে। ফলে চোখ থেকে জলীয় পদার্থ নিঃসৃত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ফুসফুস, গলা, মুখের পাশাপাশি তামাক সেবনের অভ্যাস ঝুঁকি বাড়াচ্ছে চোখেরও। বৃহস্পতিবার বিশ্ব তামাক সেবন বিরোধী দিবস। তার আগে এ নিয়ে সতর্ক করতে উদ্যোগী হয়েছেন চিকিৎসকেরা। তামাক সেবনের জেরে চোখে কত ক্ষতি হতে পারে, তরুণ প্রজন্মকে তা নিয়ে বিশেষ ভাবে সতর্ক করতে চাইছেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, ধূমপানের জেরে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট কমে যায়। যার জেরে লেন্স প্রোটিন নষ্ট হয়ে যায়। ফলে চোখে নানা সমস্যা দেখা যায়। পাশাপাশি, তামাক সেবনের জেরে শিরা শক্ত ও সঙ্কুচিত হয়। রক্তপ্রবাহও কমে যায়। ব্যথা, যন্ত্রণার অনুভব না থাকলেও দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘অপটিক নিউরোপ্যাথি’ বলা হয়।

মৌমিতা চট্টোপাধ্যায় এবং পল্লবী রাজের মতো চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ফুসফুসের রোগ নিয়ে সামান্য সচেতনা তৈরি হলেও তামাক সেবন চোখের পক্ষে কতখানি ক্ষতিকর, সে সম্পর্কে অধিকাংশের সচেতনতা নেই। অনেকের আবার ধোঁয়াবিহীন তামাক কম ক্ষতিকর, এমন ভ্রান্ত ধারণাও রয়েছে। কিন্তু গুটখা জাতীয় ধোঁয়াবিহীন তামাক রেটিনার পক্ষে যথেষ্ট ক্ষতিকর। এর থেকে ‘অপটিক নিউরোপ্যাথি’-র ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

তামাক সেবনের জেরে পঞ্চাশোর্ধ্বদের মধ্যে চোখের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। রোগীদের অভ্যাস পর্যবেক্ষণ করে দেখা গিয়েছে, ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সে যাঁরা তামাক সেবনে মারাত্মক আসক্ত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে চোখের রোগ বেশি, জানাচ্ছেন চক্ষুরোগ চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত। তাঁর কথায়, ‘‘অতিরিক্ত ধূমপানের জেরে ম্যাক্যুলার ডিজেনারেশনের মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অর্থাৎ, রেটিনার শক্তি কমে যাচ্ছে। ফলে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এই সমস্যা এড়াতে সতর্কতা ছাড়া কোনও উপায় নেই।’’

তরুণ প্রজন্মের, বিশেষত পড়ুয়াদের দিনের অধিকাংশ সময় মোবাইল বা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কাটছে। তার জেরে চোখের নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ দিকে সরকারি-বেসরকারি একাধিক পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, স্কুল পড়ুয়াদের ধূমপানে আসক্তি বাড়ছে। এর জেরে কম বয়সিদের আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা, চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এমনকি, কম বয়সিদের মধ্যে ছানির সমস্যাও বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন চক্ষুরোগ চিকিৎসক শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন