চার বছরের তিন্নিকে নিয়ে নাজেহাল বাবা-মা। তিন্নি সবেতেই অন্যমনস্ক। পড়ায় মন নেই, এমনকী খেলাধুলোর সময়ও অন্য দুনিয়ায় পড়ে থাকে তার মন। ফলে, কিছুই ঠিক মতো শিখে উঠতে পারে না সে।
শিশু মনোবিদ হিরণ্ময় সাহার মতে, অল্প বয়সে অন্যমনস্কতা অস্বাভাবিক নয়। শিশুমনে এক সঙ্গে অনেক ভাবনা চলে। ফলে, মনোনিবেশে ঘাটতি হতেই পারে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে রাখার ক্ষমতা না বাড়লে বিষয়টি ভাবা দরকার। বিশেষত কোনও কথা মনে রাখতে না পারা, সামান্য কাজও শেষ করতে না পারার মতো প্রবণতাগুলি দীর্ঘ দিন ধরে চললে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
• চঞ্চল শিশু যদি অন্যমনস্ক হয় তবে ভাবনা কম। কারণ এ ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে ধীর-স্থির হয় এবং মনোসংযোগও বাড়ে। কিন্তু আপাত শান্ত স্বভাবের শিশু মাত্রাতিরিক্ত অন্যমনস্ক হলে বিষয়টিতে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে।
•কোনও একটা কাজে শিশু মন দিতে পারছে না মানে, তার মন অন্য কোথাও পড়ে রয়েছে। কেন সে মনে রাখতে পারছে না, সেটা বুঝুন।
•শিশুর ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে দিয়ে কিছু না করানোই ভাল। খেলার সময় জোর করে পড়াতে বসালে কিন্তু মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটবেই।
• বাড়ির পরিবেশ সুস্থ রাখা জরুরি। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অশান্তি শিশুমনে প্রভাব ফেলে। তা থেকে শিশুর মনোনিবেশের ক্ষমতা কমে।
• শিশুকে সমবয়সীদের সঙ্গে মিশতে দিন। দিনে অন্তত আধ ঘণ্টা বাড়ির বাইরে মাঠে খেলতে দিন।
• শিশু যে কাজটা করতে ভালবাসে, সেটা নিয়ে ওকে বসান। ভাল লাগার জিনিস নিয়ে মেতে থাকলে মনোনিবেশ বাড়বে।
শিশুকে সামাজিক পরিসরে মেলামেশা করতে শেখান। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে। বাড়বে মনে রাখার ক্ষমতাও।
• শিশু যদি সবেতেই বলে ‘ভুলে গিয়েছি’, তাহলে প্রথমে বাবা-মাকে ধৈর্য ধরতে হবে। সন্তানের উপর নিজের প্রত্যাশা চাপিয়ে দেবেন না।
• শিশু যতক্ষণ বাড়িতে আছে, ওকে নির্দিষ্ট রুটিন অভ্যাস করান। ঠিক সময়ে ঠিক পরিমাণে খাওয়া ও ঘুম মনোসংযোগ বাড়ানোর জন্য জরুরি।
• শিশু স্কুলেও অন্যমনস্ক কিনা খবর নিন। দরকারে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিষয়টি নিয়ে যত্নবান হতে বলুন।
• শিশু অন্যমনস্ক বলে অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে, ওই বোধটা যাতে ওর মধ্যে হীনম্মন্যতা তৈরি না করে সেটা দেখা প্রয়োজন।
•কিছুতেই সমস্যা না মিটলে দেখুন শিশু ‘অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভ ডিসঅর্ডার’ (এডিএইচডি)-এর শিকার কি না। তাহলে তার চিকিৎসা করান।
সাক্ষাৎকার: দেবাঞ্জনা ভট্টাচার্য।