স্কুলে এখনও ব্রাত্য অটিস্টিক শিশুরা

সুযোগ পেলে এই শিশুরা যে সাধারণ স্কুলে লেখাপড়া করেই বড় হতে পারে, তার একাধিক দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন, অটিস্টিক কিশোর বিনায়ক রুকু।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

মাধ্যমিক এবং সিবিএসই বোর্ডের নিয়ম বলছে, প্রতিটি স্কুল অটিজম, সেরিব্রাল পল্‌সি-সহ মানসিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত শিশুদের ভর্তি নিতে বাধ্য। কিন্তু বাস্তবে বহু স্কুল সেই নিয়ম মানে না। ফলে অটিস্টিক শিশুদের মূল স্রোতে শামিল করার প্রয়াস ধাক্কা খায় বার বার। মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজ়ম দিবসে বারবার ঘুরেফিরে এল এই প্রসঙ্গই।

Advertisement

অথচ সুযোগ পেলে এই শিশুরা যে সাধারণ স্কুলে লেখাপড়া করেই বড় হতে পারে, তার একাধিক দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন, অটিস্টিক কিশোর বিনায়ক রুকু। সাধারণ স্কুলে পড়ে যে আগামী বছর দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় বসতে চলেছে। প্রশ্নটা এখানেই। উদাহরণ আরও রয়েছে। সল্টলেকের একটি স্কুলে তৃষিত চৌধুরীও এ বার দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই স্কুলগুলি যদি পারে, তা হলে অন্য বহু স্কুল কেন অটিস্টিক শিশুদের ভর্তি নিতে পিছিয়ে যাচ্ছে?

আর পাঁচটি শিশুর থেকে বিনায়ক যে কিছুটা আলাদা, জন্মের কয়েক মাস পর থেকেই তার আভাস পাচ্ছিলেন মা-বাবা। পরে তাঁরা জানেন, তাঁদের সন্তান অটিস্টিক। কিন্তু বিনায়কের মা সুমন গঙ্গোপাধ্যায় ভট্টাচার্য চাননি তাঁদের ছেলে স্পেশ্যাল স্কুলে ভর্তি হোক। সুমন বলেন, ‘‘ছেলে অটিস্টিক হওয়ায় পড়াশোনায় প্রথম দিকে বাধা এসেছিল। কিন্তু বাড়িতে ওকে এমন ভাবে তৈরি করেছি যে স্কুলে কোনও অসুবিধা হয়নি। তবে স্কুলও বিনায়ককে সব পরিকাঠামো দিয়ে সাহায্য করেছে। তাই দশম শ্রেণির পরীক্ষায় বসতে চলেছে বিনায়ক।’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সুমন জানান, বিনায়ক যেখানে পড়াশোনা করে, কোন্নগরের সেই টেকনো ইন্ডিয়া স্কুলে অটিস্টিক পড়ুয়াদের জন্য স্পেশ্যাল এডুকেটর রয়েছেন। ওই স্কুলের শিক্ষক প্রণব বরাট বলেন, ‘‘অটিস্টিক শিশুদের একটু বাড়তি যত্ন প্রয়োজন। তাদের ভাবনাটাকে মন দিয়ে শুনে তা হাতে ধরে করানোর চেষ্টা করি।’’ সাউথ পয়েন্ট স্কুলের তরফে কৃষ্ণ দামানিও জানিয়েছেন, তাঁদের স্কুলে তিন জন স্পেশ্যাল এডুকেটর আছেন। অটিস্টিক পড়ুয়াদের প্রতি নজর রাখতে ক্লাসে এক জন শিক্ষকও থাকেন। তিনি বলেন, ‘‘ওরা সাধারণত এক বারে পড়া বুঝতে পারে না। শিক্ষক তাদের আলাদা করে প্রয়োজনে ব্ল্যাক বোর্ডে এঁকে বিষয়টি বুঝিয়ে দেন।’’ হেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুনীল দাস বলেন, ‘‘শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, সব বাচ্চাকেই স্কুল ভর্তি নিতে বাধ্য। কিছু সাধারণ স্কুলে সে জন্য পরিকাঠামোও হচ্ছে।’’

কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিত্রটা যে তেমন নয়, তা ধরা পড়ে অটিস্টিক শিশুদের বাবা-মায়ের লড়াই থেকেই। উত্তরপাড়ার বাসিন্দা এক তরুণী তাঁদের সাড়ে চার বছরের ছেলেকে প্রথমে স্পেশ্যাল স্কুলে ভর্তি করতে চাননি। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে পড়ে তাঁরা এখন সে পথেই হাঁটতে চলেছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা, কোন্নগর, উত্তরপাড়ার মাধ্যমিক এবং সিবিএসই বোর্ডের অধীন একাধিক স্কুল অটিস্টিক শিশু শুনেই পত্রপাঠ বিদায় করেছে অভিভাবককে। তরুণীর দাবি, ‘‘একটি স্কুল কর্তৃপক্ষ ভর্তি নিতে না চাইলে তাঁদের সরকারি নিয়মের কথা মনে করিয়ে দিই। তখন ভর্তির আগে দু’সপ্তাহের জন্য ক্লাসে বসে থেকে ছেলেকে পড়ুয়া হওয়ার যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে হয়। অবশেষে অধ্যক্ষ জানিয়ে দেন, ওকে তাঁরা নিতে পারবেন না।’’

স্কুলে স্পেশ্যাল এডুকেটর থাকলেও সব অটিস্টিক শিশুকে ভর্তি নিতে চান না কর্তৃপক্ষ, এমন অভিজ্ঞতার কথাও জানাচ্ছেন বেশ কয়েক জন অভিভাবক। তাঁদের কথায়, শিশুটি যদি বর্ডার লাইনে থাকে, যাকে দেখে সাধারণ বাচ্চাদের সঙ্গে তফাত করা যাবে না, তেমন শিশুদেরই নিতে চায় সেই স্কুল। অটিস্টিক সোসাইটি অব ওয়েস্ট বেঙ্গলের কর্ণধার ইন্দ্রাণী বসু মুকুন্দপুরে অটিস্টিকদের নিয়ে একটি স্কুল চালান। ইন্দ্রাণীদেবী জানান, পরিস্থিতি বদলানোর জন্য তাঁদের সোসাইটি লড়াই চালাচ্ছে। অটিস্টিক শিশুদের কী ভাবে পড়াতে হবে সে নিয়ে তাঁদের স্কুলে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ স্কুলে অটিস্টিক বাচ্চাদের কী ভাবে পড়ানো উচিত তা নিয়ে স্কুলে গিয়ে আমরা ওয়ার্কশপ করছি। সাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোও দরকার।’’

কারণ চিকিৎসকদের মতে, পরিবারের পাশাপাশি স্কুলের পরিবেশটাও অটিস্টিক শিশুদের কাছে অত্য়ন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্ধু এবং শিক্ষকদের সহযোগিতা অটিস্টিক শিশুকে তার সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন