অবাধে ঘুরছে শুয়োর, লিখিত নির্দেশের অপেক্ষায় পুরসভা

এক পুরসভা কাজ করছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। পাশের পুরসভা রয়েছে লিখিত নির্দেশের অপেক্ষায়। জাপানি এনসেফ্যালাইটিস রুখতে রাজ্য জুড়ে শুয়োর হটানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাওড়া পুরসভা শহরের ৯টি জায়গা চিহ্নিত করে শুয়োর রাখার খোঁয়াড় তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু এই জেলারই উলুবেড়িয়া পুরসভা বলছে, শুয়োর ধরতে এখনও কোনও লিখিত নির্দেশ মেলেনি।

Advertisement

মনিরুল ইসলাম

বাউড়িয়া শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৩
Share:

পুর এলাকায় চরে বেড়াচ্ছে শুয়োর। ছবি: সুব্রত জানা।

এক পুরসভা কাজ করছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। পাশের পুরসভা রয়েছে লিখিত নির্দেশের অপেক্ষায়।

Advertisement

জাপানি এনসেফ্যালাইটিস রুখতে রাজ্য জুড়ে শুয়োর হটানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাওড়া পুরসভা শহরের ৯টি জায়গা চিহ্নিত করে শুয়োর রাখার খোঁয়াড় তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু এই জেলারই উলুবেড়িয়া পুরসভা বলছে, শুয়োর ধরতে এখনও কোনও লিখিত নির্দেশ মেলেনি।

ফলে, ওই পুর এলাকার বাউড়িয়ায় ফোর্ট গ্লস্টার জুটমিল চত্বর এবং তার আশপাশে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে শ’য়ে শ’য়ে শুয়োর। মিল চত্বরের বিভিন্ন আবাসন এবং আশপাশে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষের বাস। শিশুদের খেলার জায়গায় ঘুরে বেড়ায় শুয়োর। গৃহস্থের বাড়িতে ঢুকে পড়ে অবাধে।

Advertisement

উত্তরবঙ্গে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ক্রমশ প্রবল আকার ধারণ করায় দিন কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য জুড়ে ‘শুয়োর হটাও’ অভিযানের ডাক দেন। স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, ওই রোগের অন্যতম বাহক শুয়োর। তাদের শরীরে বাসা বাঁধে ওই রোগের ভাইরাস, যা কিনা কিউলেক্স বিশনোই প্রজাতির মশার কামড়ের মাধ্যমে তার দেহে চলে আসে। ওই ভাইরাস-যুক্ত বিশনোই মশা কোনও মানুষকে কামড়ালে তার জাপানি এনসেফ্যালাইটিস হওয়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে। তাই বসতি অঞ্চলের আশপাশ থেকে শুয়োর সরানোটা জরুরি।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শুয়োর ধরার তোড়তোড় শুরু হয়ে যায়। হাওড়া পুরসভাও কোমর বেঁধে নামে। তারা এক-একটি অঞ্চলে খোঁয়াড়ে রাখা শুয়োরদের স্বাস্থ্যের উপরে নজর রাখতে এক জন করে পশু চিকিৎসক এবং একশো দিনের কাজের আওতায় থাকা পাঁচ জন করে কর্মীরা থাকছেন। পুরো ব্যবস্থায় নজরদারির জন্য থাকছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। কিন্তু বাউড়িয়া থেকে শুয়োর হটাতে উলুবেড়িয়া পুরসভার এখন সেই উদ্যোগ নেই। তাতে ক্ষুব্ধ বাউড়িয়ার বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, পুর কর্তৃপক্ষ শুধু এলাকায় এলাকায় মশা মারার স্প্রে আর ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়েই দায়িত্ব সারছে। শুয়োর ধরে তাদের মশার হাত থেকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে রাখার ব্যপারে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বাউড়িয়ার বাসিন্দা তথা উলুবেড়িয়া হাসপাতালের চিকিৎসক সইফুল শেখ বলেন, “শুয়োর এলাকায় যে ভাবে ঘুরে বেড়ায়, তা রীতিমতো আতঙ্কের। তাদের থেকে নানা ভাবে রোগ-জীবাণু ছড়াতে পারে। পুর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত শুয়োর ধরার জন্য আবেদন জানিয়েছি।”

গত ২৬ জুলাই উলুবেড়িয়া পুরসভার তৃণমূল পরিচালিত বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়। তার পর থেকে প্রশাসক হিসেবে ওই পুরসভা চালাচ্ছেন উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক নিখিল নির্মল। বাউড়িয়ায় শুয়োরের অবাধ বিচরণের বিষয়টি তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেছেন নিখিলবাবু। তিনি বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে পুরসভার সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে বলব।” পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন মণ্ডল বলেন, “এখনও শুয়োর ধরার কোনও লিখিত নির্দেশ পাইনি। পেলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেব।” হাওড়া পুরসভা অবশ্য কোনও নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে নিজেরাই শুয়োর ধরতে নেমেছে।

শুয়োর নিয়ে উলুবেড়িয়া পুরসভার ‘উদাসীনতা’য় ক্ষুব্ধ বাউড়িয়ার বাসিন্দারা। ফোর্ট গ্লস্টার ‘সি’ ব্লকের বাসিন্দা হৃষিকেশ নায়েক বলেন, “এই এলাকাটি অস্বাস্থ্যকর। চারধারে নোংরা পড়ে থাকে। এখানে কমপক্ষে শ’তিনেক শুয়োর রয়েছে। পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নেয় না। কারও কোনও হেলদোল নেই।” অন্য ব্লকের কয়েক জন বাসিন্দার অভিযোগ, গত কয়েক দিনে মশা মরার তেল ও ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মশা মরছে কই? বরং মশার উপদ্রব বেড়ে গিয়েছে। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সদ্য মেয়াদ ফুরনো পুরবোর্ডের কেউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন